সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৪ পূর্বাহ্ন

রাখাইনে সারারাত গোলাগুলি, আতঙ্কে এপারের মানুষ

ভয়েস বাংলা প্রতিবেদক / ১১ বার
আপডেট : সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

কক্সবাজারের টেকনাফের দক্ষিণ-পূর্ব ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে রবিবার রাত ৯টা থেকে থেমে থেমে গোলাগুলি, মর্টারশেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে আবারও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এপারের বাসিন্দাদের মধ্যে।

এপারের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রবিবার রাত ৯টার পর থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গোলাগুলি ও মর্টারশেলের প্রচুর শব্দ শুনতে পান নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, উখিয়ার পালংখালী, টেকনাফ সদর, হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও সাবরাং ইউনিয়নের বাসিন্দারা। তবে সকাল ৯টার পর থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত আছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সীমান্তের এপারের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রবিবার রাতভর রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের আশপাশের বলিবাজার, ঝিমংখালী, কেয়ারিপ্রাং, পেরাংপুরু, নলবিলাসহ কয়েকটি গ্রামে গোলাগুলি ও মর্টারশেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। তবে সোমবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। এই সময়ে গোলাগুলির শব্দ শোনা না গেলেও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্ত এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্টগার্ড ও পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে।

রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত হোয়াইক্যং সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ আলম।

তিনি বলেন, ‌রবিবার রাতে থেমে থেমে হোয়াইক্যং ও খারাংখালী সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি হয়েছে। এতে সীমান্তের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে সকাল থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি। এখন আমি সীমান্ত এলাকায় আছি, স্থানীয় লোকজনকে সতর্ক থাকতে বলেছি। শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা মো. সেলিম বলেন, ‘সারারাত গোলাগুলি হয়েছে। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত সীমান্ত কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও আমরা শাহপরীর দ্বীপ জেটিতে চলাচল করতে পারছি না।’

শাহপরীর দ্বীপের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, ‘টেকনাফের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত এলাকার মিয়ানমার অংশ সকাল থেকে কিছুটা শান্ত আছে। ফলে নাফ নদ ও আশপাশের বাসিন্দারা কিছুটা স্বস্তিতে আছেন। তবে সারারাত আতঙ্কে ছিলেন। সীমান্ত ও নাফ নদে টহল জোরদার রেখেছে বিজিবি এবং কোস্টগার্ড।’

পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, চলতি মাসের শুরু থেকেই সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি অব্যাহত আছে। রবিবার সারারাত গোলাগুলিতে এপারের বাসিন্দারা আতঙ্কে ছিলেন। গোলাগুলির শব্দে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তের অর্ধলাখ মানুষ। এই আতঙ্ক কবে শেষ হবে জানি না।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, সকাল পৌনে ৬টার দিকে তুমব্রু বাজারের দক্ষিণে রাখাইন রাজ্যের তুমব্রু রাইট ক্যাম্পে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। গোলাগুলির শব্দে স্থানীয় লোকজন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।সীমান্তের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সোমবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের জামছড়ি গ্রামের বিপরীতে রাখাইন রাজ্যের পাহাড়ি একটি চৌকিতে গোলাগুলি ও চারটি মর্টারশেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। বিকট শব্দ এলে এপারের বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন রোহিঙ্গারা। গত বৃহস্পতিবার ৯ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। এর আগে চলতি মাসে ৪০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ বিষয়ে কোস্টগার্ড চট্টগ্রাম পূর্ব জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লে. তাহসিন রহমান বলেন, ‘সীমান্ত আগের তুলনায় অনেকটা শান্ত। এরপরও আমরা নাফ নদে টহল অব্যাহত রেখেছি। ইতোমধ্যে দুই শতাধিক অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠিয়েছি। নতুন করে কাউকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না।’

গত ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সংঘর্ষ চলছে। ৫ ফেব্রুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেলের আঘাতে দুজন নিহত হন। সংঘর্ষ চলাকালে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যসহ সে দেশের ৩৩০ জন বাংলাদেশে ঢুকে পড়েন। ১৫ ফেব্রুয়ারি সকালে তাদের মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে থেমে থেমে এখনও মিয়ানমার সীমান্তে সংঘর্ষ চলছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর