শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৩:১৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সহিংসতা শুরুর আগেই শুটিং শেষ দীঘির মেট্রোরেলে নাশকতা: ডিইউজে একাংশের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ৬ জন রিমান্ডে প্যারিস অলিম্পিক যেন বিশ্ব ক্রীড়াবিদদের মিলনমেলা আন্দোলনকারীদের যেসব দাবি-দাওয়া লিখে দিয়েছিলেন নুর নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আইসিসির পরোয়ানার বিরোধিতা প্রত্যাহার যুক্তরাজ্যের তারেক রহমানের নির্দেশেই রাষ্ট্রের ওপর হামলা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিটিভি ভবনে তাণ্ডবের চিহ্ন ঘুরে দেখলেন প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামাত শিক্ষার্থীদের হত্যা করে সরকারের ওপর দায় চাপিয়েছে: কাদের বাংলাদেশকে ১০ উইকেটে বিধ্বস্ত করে ফাইনালে ভারত বিএনপি-জামায়াত ক্যাডাররা রাষ্ট্রকে অকার্যকর করতে চেয়েছিল: মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী

ডেসমন্ড টুটু: নক্ষত্রের বিদায়

সালেক উদ্দিন / ১৮৪ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২২

১ জানুয়ারি ২০২২ দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে অনুষ্ঠিত হলো ডেসমন্ড টুটুর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। নোবেল শান্তি পুরস্কার, সিডনি শান্তি পুরস্কার, গান্ধী শান্তি পুরস্কার সব মিলিয়ে শান্তির দূত ডেসমন্ড পিলো টুটু তার ৯০ বছরের জীবনের পাট চুকিয়ে ২৬ ডিসেম্বর ২০২১ ইহলৌকিক সফর শেষ করলেন। এক সপ্তাহের শোক পালন শেষে ১ জানুয়ারি কেপ টাউনের সেন্ট জর্জ ক্যাথিড্রালে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পৃথিবী এই মহান পুরুষকে চিরতরে বিদায় জানালো।
বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম প্রতীক দক্ষিণ আফ্রিকার বিবেক হিসেবে পরিচিত ডেসমন্ড টুটুর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দিন পর্যন্ত সেন্ট জর্জ ক্যাথিড্রালের ঘণ্টা প্রতিদিন দুপুরে ১০ মিনিটের জন্য বেজেছিল। গির্জার সেই ঘণ্টার শব্দ মনে করিয়ে দিয়েছিল তার অনুসরণীয় আধ্যাত্মিক নেতৃত্বে কথা, বর্ণবাদবিরোধী কর্মকাণ্ডের কথা, বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার প্রচারের কথা। মনে করিয়ে দিয়েছিল সেই ইতিহাস– যে ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাসহ যে ক’জন নেতা বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছিলেন, টুটু ছিলেন তাদেরই একজন। আধ্যাত্মিক নেতা বর্ণবাদবিরোধী নেতা বৈশ্বিক মানবাধিকার আন্দোলনের নেতা ছিলেন তিনি।
১৯৩১ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ আফ্রিকার ক্লেরক্স ডরপে জন্মগ্রহণ করেন এই মহান পুরুষ। লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে ধর্মতত্ত্বে উচ্চতর ডিগ্রি লাভের পর ধর্মতত্ত্ব পড়াতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। হতে চেয়ে ছিলেন শিক্ষক। কিন্তু হলেন ধর্মযাজক। ১৯৭৬ সাল থেকে দু’বছর তিনি লেসোথোতে বিশপের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৫ সালে জোহানেসবার্গের বিশপ হন। একজন আর্চবিশপ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। ধর্মীয় অবস্থান থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন এই মহামানব। বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। তার প্রতিবাদ দক্ষিণ আফ্রিকার সীমানা ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল।

অন্যায়ের বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার ছিলেন ডেসমন্ড টুটু। ‌তিনি প্রতিবাদ করেছিলেন ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলি আচরণের। প্রতিবাদ করেছিলেন ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যুদ্ধের। এমনকি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদও করেছিলেন তিনি। মিয়ানমারের তৎকালীন নেতা অং সাং সু চি’কে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমি ফিরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। সু চি’কে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির অর্থ অনুধাবনের কথা বলেছিলেন, স্মরণ করে দিয়েছিলেন মানবাধিকারের কথা।
দক্ষিণ আফ্রিকায় সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গদের জারি করা বৈষম্যের শাসনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনে জনসন ম্যান্ডেলার মতোই তিনিও ছিলেন একজন। নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে বর্ণবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অবস্থান থেকে লড়াই করেছেন তিনি। দু’জনের সম্পর্ক ছিল চমৎকার। দুজনেরই স্বপ্ন ছিল সমতার রাজনীতির, মুক্তির রাজনীতির। মানুষের অধিকার আন্দোলনে তাঁদের উপস্থিতি ছিল সুস্পষ্ট। সারা জীবন দারিদ্র্যবিরোধী, বর্ণবাদবিরোধী প্রচারণায় নিজেদের ব্যস্ত রেখেছিলেন এই দুই মহামানব।
১৯৮৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার, ১৯৯৯ সালে সিডনি শান্তি পুরস্কার এবং ২০০৭ সালে গান্ধী শান্তি পুরস্কার লাভ করেন ডেসমন্ড টুটু। মোট কথায় শান্তির দূত হয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন তিনি। আর তাই তো বর্ণবৈষম্যের জর্জরিত দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ নিরসনে তার অবদান বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছিল।
ডেসমন্ড টুটুর শান্তি ও মানবতার আদর্শ বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যেই ২০২২ সালের ঊষালগ্নে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন। পৃথিবীর সর্বত্র অন্যায়কে অতিক্রম করে ডেসমন্ড টুটু আদর্শের মতো প্রতিষ্ঠিত হোক, বিশ্ব শীতল হোক শান্তিময় হোক, সেটাই এই আয়োজনের লক্ষ্য।

লেখক: কথাসাহিত্যিক


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর