রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১২:৫১ পূর্বাহ্ন

৮০-তে পা দিলেন রওশন এরশাদ

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ১৭৬ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০২২

আশি বছরে পা দিলেন জাতীয় পার্টির চিফ প্যাট্রন ও একাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালের বেডে বসেই কাটলেন জন্মদিনের কেক।

১৯৪৩ সালের ১৯ জুলাই ময়মনসিংহ জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া রওশন এরশাদ ৭৯ বছর পূর্ণ করলেন। মঙ্গলবার ব্যাংককে তার সন্তান সংসদ সদস্য রাহগির আলমাহি সাদ এরশাদ মাকে নিজের হাতে কেক কেটে খাওয়ান। এর আগে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান তিনি। পরে ফেসবুকে শুভেচ্ছা জানিয়ে স্ট্যাটাসও দেন রাহগির। রাহগির আলমাহি সাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মায়ের শারীরিক অবস্থা এখন ভালো। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। আর কিছু দিনের মধ্যেই আমরা দেশে ফিরবো।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন চিকিৎসা গ্রহণ শেষে গত ২৭ জুন ব্যাংকক থেকে দেশে ফিরে হোটেল ওয়েস্টিনে অবস্থান করছিলেন রওশন এরশাদ। পরে ৫ জুলাই আবারও ব্যাংককে যান তিনি।

রওশন এরশাদের পিতা খান সাহেব উমেদ আলী এবং মাতা বদরুন নাহার। স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই রাজধানীর ক্যান্টনমেন্টের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮৯ বছর বয়সে  মারা যান এরশাদ।

২০১৬ সালে প্রকাশিত এরশাদের আত্মজীবনী ‘আমার কর্ম, আমার জীবন’ শীর্ষক গ্রন্থ থেকে জানা যায়, এরশাদ দুটি বিয়ে করেন। তার প্রথম স্ত্রী রওশন এরশাদ, যার সঙ্গে ১৯৫৬ সালে তার বিবাহ হয়। রওশন এখন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করছেন। এরশাদ দ্বিতীয় বিয়ে করেন বিদিশাকে। পরে তাদের বিচ্ছেদ হয়। বিদিশা ও এরশাদের সংসারে রয়েছে একমাত্র ছেলে এরিক এরশাদ। এছাড়া নিজের আত্মজীবনীতে এরশাদ জানিয়েছেন, এরিক ছাড়াও জেবিন, সাধ ও আলম নামে তার তিন সন্তান রয়েছে।

এরশাদের মৃত্যুর পর সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হন রওশন এরশাদ। তবে এই যাত্রা অনেকটাই বিরোধমুখর ছিল। এরশাদের ছোট ভাই জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে দ্বন্দ্বমুখর পরিস্থিতিতে সমঝোতার মধ্য দিয়ে তিনি বিরোধীদলীয় নেতা হন। এরশাদের মৃত্যুর পর ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহজুড়ে উত্তপ্ত পরিবেশ ছিল জাপায়। ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর জি এম কাদের জাতীয় পার্টির দলীয় প্যাডে নিজেকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার পদে নিয়োগ দিতে স্পিকারকে চিঠি দেন। পরদিন সেই চিঠি গ্রহণ না করতে স্পিকারকে চিঠি দেন রওশন। ৫ সেপ্টেম্বর প্রতিবাদে জাপার একাংশ রওশন এরশাদকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করে। পরে তৎকালীন মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা ৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানান, জি এম কাদের জাপার চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হবেন পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ।

এর আগে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদেও বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন রওশন এরশাদ। ওই সময় আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যমকে রওশন এরশাদ বলেছিলেন, ‘পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নির্দেশেই নির্বাচনে গেছি। তার নির্দেশেই বিরোধীদলীয় নেতা হচ্ছি।’ একাদশ জাতীয় সংসদে এরশাদের জীবদ্দশায় উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন রওশন।

হাসপাতালের বেডে রওশন এরশাদকে জন্মদিনের কেক খাওয়াচ্ছেন ছেলে রাহগির এরশাদ

হাসপাতালের বেডে রওশন এরশাদকে জন্মদিনের কেক খাওয়াচ্ছেন ছেলে রাহগির এরশাদজাতীয় সংসদের সংসদ সদস্যদের বিবরণী সংক্রান্ত একটি গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘রওশন এরশাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন মুমিনুননেসা গার্লস কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্তির পর তিনি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হন। তিনি রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তার স্বামী হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি থাকাকালে একজন ফার্স্টলেডি হিসেবে রওশন এরশাদ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় কর্মকাণ্ডে অবদান রেখেছেন। তিনি বাংলাদেশ পথকলি ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সেনা পরিবার কল্যাণ সমিতিরও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, রওশন এরশাদ বাংলাদেশ কিডনি ট্রাস্টের চেয়ারপারসন এবং হিউম্যান রাইর্টার্স ভলান্টারি ও বাংলাদেশ অফথালমজি অ্যাসোসিয়েশনের চিফ প্যাট্রন। এছাড়া মাদকবিরোধী আন্দোলন, পঙ্গু ও প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন ও যৌতুকবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত রয়েছেন। নিজ নির্বাচনি এলাকায় বিভিন্ন শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি এবং উন্নয়ন ভূমিকা রাখেন।

রওশন এরশাদ সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৪ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে একই দলের মনোনয়নে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন  এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নবম জাতীয় সংসদে রংপুর-৩ আসন থেকে উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন এবং নবম সংসদে তিনি ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত সংসদ-সদস্য হন তিনি। দশম জাতীয় সংসদ তিনি কার্য উপদেষ্টা কমিটি এবং বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য। এছাড়াও সংসদের বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রওশন।

ইংরেজি, হিন্দি ও উর্দু ভাষায় দক্ষ রওশন। রওশন এরশাদ এক পুত্রসন্তান ও এক কন্যাসন্তানের মাতা। সাবেক রাষ্ট্রপতির পত্নী হিসেবে তিনি বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ভ্রমণ করেছেন। অবসরে বাগান করা, বই পড়া, ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা এবং রবীন্দ্রসংগীত শোনা তার প্রিয় শখ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর