রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:০২ পূর্বাহ্ন

৫ লাখ টাকা অনুদানে সাভারে হারিছ চৌধুরীর দাফন!

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ২১৫ বার
আপডেট : রবিবার, ৬ মার্চ, ২০২২

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ও বিএনপির সাবেক নেতা আবুল হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু  নিশ্চিত হতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তার পরিবারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনও প্রতিক্রিয়া না জানানোয় বিষয়টি নিয়ে এখনও ধুম্রজাল রয়েছে। রবিবার (৬ মার্চ) দৈনিক মানবজমিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তার কন্যা ব্যারিস্টার সামিরা চৌধুরী জানান, তার বাবা হারিছ চৌধুরীকে ‘মাহমুদুর রহমান’ পরিচয়ে ঢাকার সাভারের জালালাবাদ এলাকায় একটি মাদ্রাসার কবরস্থানে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ৪ তারিখ দাফন করা হয়।

জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন মাদ্রাসাজামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন মাদ্রাসা

তবে, মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা আশিকুর রহমান জানান, গত বছরের সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখ আছরের নামাজের পর ‘মাহমুদুর রহমান’ নামে একজনকে দাফন করা হয়েছে। যার মরদেহ সামিরা নামে একজন নিয়ে আসে। সামিরা নিজেকে মৃত ব্যক্তি কন্যা হিসেবে পরিচয় দেন। ৫ লাখ টাকা অনুদানের মাধ্যমে মাদ্রাসার গোরস্থানে ও ‘মাহমুদুর রহমানকে’ দাফন করা হয় বলে জানান জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন মাদ্রাসার পরিচালক আশিকুর রহমান।

মৃত্যু ও দাফন নিশ্চিত হতে তদন্ত করবে পুলিশ

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র বলছে, এ বছরের শুরুতে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু হয়েছে— এমন খবর নিশ্চিত হতে সিআইডিকে চিঠি দেয় ইন্টারপোল। ওই চিঠির পর তদন্ত করে সিআইডি। মৃত্যু তথ্য নিশ্চিত হতে পারার বিষয়টি জানিয়ে সদর দফতরকে অবহিত করে সংশ্লিষ্টরা। এখন আবারও নতুন করে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু ও তার দাফনের বিষয়টি সামনে আসায় নতুন করে খোঁজ খবর নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সূত্রের দাবি, সাভারে দাফন হওয়া ‘মাহমুদুর রহমান’ই হারিছ চৌধুরী কিনা, তা নিশ্চিত হতে আইনি প্রক্রিয়ায় আগাবে পুলিশ। এক্ষেত্রে তার মরদেহ উত্তোলন করে ডিএনএ টেস্ট করার প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে পারে তারা। আদালতের নির্দেশনা পেলে দ্রুতই এ প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছে পুলিশের একটি সূত্র।

জানতে চাইলে সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।’

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলাসহ একাধিক মামলার অভিযুক্ত আসামি ছিলেন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রভাবশালী নেতা সিলেটের হারিছ চৌধুরী। ওই হামলার টার্গেট ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই হামলা মামলার চার্জশিটেও অভিযুক্ত আসামি ছিলেন হারিছ চৌধুরী। অভিযোগপত্রে তাকে লাপাত্তা দেখানো হয়। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পর হারিছ চৌধুরী গা ঢাকা দেন।

রেড নোটিশ

রেড নোটিশ

২১ আগস্ট হামলা মামলায় তিনি অভিযুক্ত হওয়ার পর ২০১৫ সালে তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি হয়। ইন্টারপোলের রেড নোটিশে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা বলা হয়েছে, ‘খুন এবং আওয়ামী লীগের সমাবেশে হ্যান্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ।’ রবিবার (৬ মার্চ) ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটের রেড নোটিশে তার ছবিসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্যও উল্লেখ রয়েছে।

সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনও তথ্য আপাতত নেই। তদন্ত করা হলে জানা যেতে পারে। আর রেড নোটিশের বিষয়টি আমার জানা নেই।’

৫ লাখ টাকা অনুদানে ‘মাহমুদুর রহমানের’ দাফন

সাভারের কমলাপুর জালালাবাদ এলাকার একটি মাদ্রাসায় মাহবুবুর রহমান নামের এক ব্যক্তির দাফন করা হয়েছে। গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর নিহতের পরিবারের লোকজন উপস্থিত থেকে এখানে তার মৃতদেহ দাফন করে। তবে সেই ব্যক্তি হারিছ চৌধুরী কিনা সে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। কবর দেওয়ার সময় পর্যন্ত তার নাম মাহমুদুর রহমান বলেই জানানো হয়েছিল। এমনকি কবর দেওয়ার সময় সেখানে থাকা মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বললেও তারা একই কথা জানান।

SAVAR PIC 3

এখানেই দাফন করা হয় দাবি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের

জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন ঢাকা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আশিকুর রহমান কাশেমী বলেন, ‘মাহমুদুর রহমান’ নামের এক ব্যক্তির কবর তার মাদ্রাসায় দেওয়া হয়। গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বরের আগের দিন রাতে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে তারা প্রবাসী বলে দাবি করেন। তাদের কোনও আত্মীয় স্বজন দেশে নেই, সবাই প্রবাসী, সে কারণেই সন্তানেরা ঢাকাতে দাফন করতে চায়। পরে ৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে তিনি নিজেই মাদ্রাসায় জানাজার নামাজ শেষ করে আঙিনায় কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করেন।

মাদ্রাসার  আহসানউল্লাহ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রায় এক বছর আগে এক বিকালের দিকে ঢাকা থেকে মাহমুদুর রহমান নামের একজনের মরদেহ নিয়ে আসা হয়। পরে তাদের মাদ্রাসার প্রায় সাড়ে তিনশত শিক্ষার্থী ও বহিরাগত আরও একশ লোক এই জানাজায় অংশগ্রহণ করে।

মাদ্রাসার শিক্ষা সচিব মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের এখানে মাদ্রসার নিয়ম অনুযায়ী ছদকায়ে জারিয়া (অনুদান) যারা দেয় তাদের জন্য একটা সারিতে কবর দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ‘মাহমুদুর রহমানের’ পরিবারও কবরের জন্য পাচ লাখ টাকা দান করে এখানে কবর দেয়। তাদের এখানে কবর দেওয়া যায় বা এই নিয়মে কবর দেওয়া হয়, সেটি মাহমুদুর রহমানের পরিবার কীভাবে জানলো বিষয়টি তার জানা নেই, বলে জানান মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, ৪ সেপ্টেম্বর ‘মাহমুদুর রহমানের’ মেয়ে সামিরা চৌধুরী এসে বলেন, তার বাবার মৃতদেহ এখানে দাফন করতে চান। পরের দিন মাগরিবের আগ মুহূর্তে জানাজা দেওয়া হয়। নিহতের পরিবারের ৪/৫ জন সদস্য দাফনের সময় মাদ্রাসায় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও আশপাশের লোকজন জানাজায় অংশগ্রহণ করে’ বলে তিনি জানান।

তবে তিনিই হারিছ চৌধুরী কিনা বা সে সময় পরিচয় গোপন করে মৃতদেহ দাফনের বিষয়টি নিয়ে তাদের কোনও সন্দেহ দেখা যায়নি বলে উল্লেখ করেন মাদ্রাসা শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, একটু তাড়াহুড়ো ছিল তাদের। রাত হয়ে যাচ্ছে বলে রাতের আগেই কবর দিয়ে দিতে বলেন পরিবারের সদস্যরা। এছাড়াও এখানে শুধু জানাজা আর কবর দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও মারা যাওয়ার দুই সপ্তাহ পরে তার দুই থেকে তিন আত্মীয় কবর দেখতে এসেছিলেন। তবে গত এক বছরের মধ্যে আর কেউ আসেনি বলে তিনি জানান।

সাভারের জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন মাদ্রাসার কবরস্থানের ছবি। ডানের ছবিতে বাম থেকে প্রথম বাঁশ দেওয়া জায়গাটিতেই কথিত ‘মাহমুদুর রহমান’ দাফন করা হয়েছে (ছবি: মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সৌজন্যে)

সাভারের জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন মাদ্রাসার কবরস্থানের ছবি। ডানের ছবিতে বাম থেকে প্রথম বাঁশ দেওয়া জায়গাটিতেই কথিত ‘মাহমুদুর রহমান’ দাফন করা হয়েছে (ছবি: মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সৌজন্যে) 

দাফনের বিষয়ে জানতে চাইলে হারিছ চৌধুরীর ছোটভাই কামাল চৌধুরী (৫৫) বলেন, আপনারা যা জানেন, আমিও এতটুকুই জানি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর