শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১০:৩৬ অপরাহ্ন

৪০ বছরের রাজনীতিতে ৩৮ বছরই বিএনপির চেয়ারপারসন পদে খালেদা জিয়া

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৬০ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০২২

বিএনপির চেয়ারপারসন হিসেবে ৩৮ বছর পূর্ণ করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ১৯৮৪ সালের ১০ মে তিনি দলের চেয়ারপারসন হিসেবে নির্বাচিত হন।

বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান বলেন, ১৯৮২ সালের জানুয়ারি মাসে বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে আসেন। সে হিসেবে রাজনীতিতে চল্লিশ বছর পূর্ণ হয়েছে এ বছরের জানুয়ারিতে। ১৯৮৪ সাল ১০ মে বিএনপির চেয়ারপারসন হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। সেই থেকেই বিএনপির অবিচ্ছেদ্য অংশ ম্যাডাম। আমাদের কাছে এই দিনটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

দুর্নীতি মামলায় সাজা পেয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া। করোনার সংক্রমণের সূচনাকালে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে শর্তসাপেক্ষ মুক্তি ভোগ করছেন তার গুলশানের বাসভবন ফিরোজায়। যদিও এর মধ্যে বেশ কয়েক দফা শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন তিনি। সর্বশেষ এভার কেয়ার হাসপাতালে ৮০ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর এ বছরের ১ ফেব্রুয়ারি বাসায় ফিরেন।

দলীয়সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে ও ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। সপ্তম ও নবম জাতীয় সংসদে তিনি বিরোধী দলীয় নেত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তবে তার জন্মদিন পালন নিয়ে রাজনীতিতে সমালোচনা রয়েছে। ১৫ আগস্ট প্রথম প্রহরে জন্মদিন পালন করায় আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও এর সমালোচনা করেন। যদিও ২০১৬ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি কেক কাটা বন্ধ রেখেছেন। এ বছরের শুরুতে বিএনপিপ্রধানের শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা তাকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।imageএ বছরের ১ ফেব্রুয়ারি বাসায় ফেরার পর খালেদা জিয়া

দলের দায়িত্বশীল ও প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা না রাখলেও বড়ছেলে তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছ থেকে নিয়মিত দলের খবর নেন, পরামর্শ দেন। তিনি দৈনিক পত্রিকা পড়েন নিয়মিত। পরিবার ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনের বাইরে তেমন একটা দেখা সাক্ষাৎ দেন না তিনি।

একাধিক সূত্রের দাবি, এরইমধ্যে গত মাসের শুরুতে তিনি একটি রাজনৈতিক দলের প্রধানকে সাক্ষাতের সুযোগ করে দিয়েছেন। ওই নেতা তার স্ত্রীসহ বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তবে কোনও পক্ষই বিষয়টি স্বীকার করেনি। ধারণা করা হচ্ছে, ওই নেতার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও ভবিষ্যৎচিন্তা সম্পর্কে স্পষ্ট হতেই ওই সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। পরে অবশ্য ওই নেতাকে বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশতে দেখা গেছে।

দল ও চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হচ্ছে, বেগম জিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়  সাজা পেয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার পর থেকে অসুস্থতা বাড়তে থাকে বিএনপিপ্রধানের। পরে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ওই সময় থেকে বিএনপিরনেতারা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানোর আহ্বান জানায়। সরকারের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করে পরিবারও। দফায়-দফায় চিঠি দেওয়া হলেও সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি নাকচ করে দেওয়া হয়।

চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি টানা ৮০ দিন এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর চিকিৎসকেরা খালেদা জিয়াকে বাসায় রাখার অনুমতি দেন। যদিও তার ব্যক্তিগত ও এভার কেয়ার হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শ— ‘তিনি ক্লিনিক্যালি স্ট্যাবল, নট কিওর, এ কারণে তাকে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলতে উন্নত দেশে নিতে হবে।’ গত বছরের শেষ দিকে বেগম জিয়ার মুক্তি নিয়ে বিএনপি সারাদেশে সমাবেশ করলেও করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে তা মাঝপথে থমকে যায়। এরপর এ বিষয়ে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সর্বশেষ গত ৬ এপ্রিল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে আবার এভার কেয়ারে যান বেগম জিয়া।

বিএনপির নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই কার্যকর কোনও কর্মসূচি দিতে পারেনি বিএনপি। দলের নেতারা সভা-সমাবেশে তা স্বীকার করে বক্তব্যও রেখেছেন। তবে এই মুহূর্তে দল পরিচালনার ভার ছেলে তারেক রহমানের হাতে দেওয়ায় এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত রয়েছেন।

দায়িত্বশীল কারও কারও মত, খালেদা জিয়া এই মুহূর্তে দলের অভিভাবক হিসেবে দলকে শাসন করতে পারতেন এবং দেশের মানুষের সামনে সুস্থ রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হতে পারতেন; কিন্তু তা এখনও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। যারা তার কাছে পৌঁছাতে পারেন, তারা হয়তো এসব বিষয়ে তাকে কিছু বলতে পারছেন না।
image(1)২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার সময়। ছবি: ফোকাস বাংলা

বিএনপির শুভানুধ্যায়ী একজন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল বলেন, বিএনপি জিয়াউর রহমানের মতো সামরিক ব্যক্তির হাতে গড়া হলেও রাজনৈতিক দল হিসেবে পূর্ণতা পেয়েছে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাজপথে থেকে। সরাসরি গৃহবধূ থেকে রাজপথে এসে টানা আট বছরের আন্দোলনের পর তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এতে করে বিএনপির ভিত জনগণের মধ্যে পোক্ত হয়েছে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়া একজন ইউনিক চরিত্র, যিনি গৃহবধূ থেকে রাস্তায় থেকে জনগণকে নেতৃত্ব দিয়ে আন্দোলন করে নির্বাচনে করেছেন। প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। জীবনে যতগুলো আসন থেকে নির্বাচন করেছেন, সবগুলোতে জিতেছেন। এটা রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল- এর একমাত্র কারণ হচ্ছে, তিনি যে দৃঢ়তা দেখিয়েছেন, দেশ ও দেশের মানুষ নিয়ে তার যে আপোষহীনতা সব মিলিয়ে তিনি আজকের এই বেগম খালেদা জিয়া। বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। আর দেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছেন বেগম খালেদা জিয়া।

বিএনপিতে যোগদান

‘নন্দিত নেত্রী: খালেদা জিয়া’ শীর্ষক গ্রন্থে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উপ-প্রেস সচিব সৈয়দ আবদাল আহমেদ উল্লেখ করেন,  ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট অবিভক্ত ভারত উপমহাদেশের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ির নয়াবস্তি এলাকায় তার জন্ম। দিনটি সম্পর্কে আবদাল আহমেদ লিখেন, তখন শরতের স্নিগ্ধ ভোর। নতুন শিশুর আগমনে পরিবারের সবাই আনন্দিত। যদিও তার জন্মের দিনটি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে।

জিয়াউর রহমানের বধূ হিসেবেই খালেদা জিয়া জীবনের অর্ধেক সময় কাটিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালে ৩০ এপ্রিল চট্টগ্রামে সার্কিট হাউজে কিছু সেনা সদস্যের গুলিতে নিহত হওয়ার পর বিএনপিতে যোগ দেন খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালে ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। একই বছরের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় তিনি প্রথম বক্তৃতা করেন। বিচারপতি সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮৪ সালের ১০ মে পার্টির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ওয়ান-ইলেভেনের মঈন উদ্দীন ও ফখরুদ্দীন সরকারের সময় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালে নিম্ন আদালতে পাঁচ বছরের সাজা হলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। বিশেষ ব্যবস্থায় পুরানা ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারে রাখা হয় তাকে। এরপর ওই বছরের ১ এপ্রিল তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। পরবর্তী সময়ে নিম্ন আদালতের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট।

বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান বলেন, বাংলাদেশের মতো অত্যন্ত রক্ষণশীল রাষ্ট্রে বেগম খালেদা জিয়া প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। বাংলাদেশের নারীর অগ্রযাত্রায় তার বড় ভূমিকা রয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর