শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৯:৫৮ অপরাহ্ন

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পাস, শুক্রবার থেকে কার্যকর

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ১৭৪ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০২২

বড় কোনও সংশোধনী ছাড়াই পাস হয়েছে নতুন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট। এবারের বাজেটের মোট আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আগামীকাল শুক্রবার (১ জুলাই) থেকে শুরু হচ্ছে নতুন অর্থবছর। এ দিন থেকেই এই বাজেট কার্যকর হবে।

বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে সংসদ সদস্যদের সর্বসম্মত কণ্ঠভোটে ‘নির্দিষ্টকরণ বিল-২০২২’ পাসের মধ্য দিয়ে পাস হয় এই বাজেট। গত ৯ জুন বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে নতুন ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। নতুন অর্থবছরের বাজেট মোট জিডিপির প্রায় ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ।

অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের এটি চতুর্থ বাজেট, বাংলাদেশের জন্য এটি হবে ৫২তম। পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ২০তম বাজেট হলেও ২০০৮ সাল থেকে বর্তমান সরকারের টানা ১৪তম বাজেট। এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনা সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে শাহ্ এ এম এস কিবরিয়া ৬টি বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন।

‘কোভিডের আঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শীর্ষক বাজেট উপস্থাপন করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, সরকারের এই বাজেট প্রস্তাবনায় রয়েছে বিশ্বময় করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে বৈশ্বিক অর্থনীতি মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্নবিভোর পরিকল্পনা। রয়েছে বৈশ্বিক সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশের অর্থনীতির মহাপরিকল্পনা।

বাজেট প্রস্তাবনায় রয়েছে নানাবিধ কারণে কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার পরিকল্পনা, তাই এবারও বেড়েছে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়। সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে খাদ্য নিরাপত্তার। বাড়ছে কৃষি খাতের ভর্তুকি। পরে সংসদ সদস্যরা সরকারের নতুন বাজেটের খুঁটিনাটি দিক নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন।

এর আগে বুধবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদে সরকারের অর্থবিল পাস করা হয়। সেখানে পাচারের অর্থ-সম্পদ দেশে ফেরত আনতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে যেসব সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল, তাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। সেই অনুযায়ী পাচারের সব ধরনের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দেশে আনার প্রস্তাব বাতিল করা হয়। শুধু নির্ধারিত হারে কর দিয়ে পাচার করা নগদ টাকা দেশে আনা যাবে। এ বিষয়ের সংশোধনীতে নতুন করে একটি শর্ত যুক্ত করা হয়েছে; তা হলো, দেশের বাইরে কারও সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেলে সেই সম্পদ অর্জনের উৎস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে। সন্তোষজনক জবাব পাওয়া না গেলে ওই সম্পদের মূল্যের সমপরিমাণ জরিমানা অথবা বাজেয়াপ্ত করা হবে। নতুন বাজেটে এটিসহ আরও কিছু কর প্রস্তাবে পরিবর্তন এনে গতকাল অর্থবিল-২০২২ পাস হয়েছে।

পাস হওয়া বাজেটে সরকার আগামী অর্থবছর অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, কর্মসংস্থান বাড়ানো, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতি বিশেষ নজর দিয়েছে। এ জন্য বাজেটে দিকনির্দেশনা রয়েছে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে চলতি অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় আগামী বাজেটেও করপোরেট করে গুরুত্ব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রীর ভাষায় এবারের বাজেট হচ্ছে, সাধারণ মানুষের জন্য, বাংলাদেশের সমৃদ্ধির জন্য, সকল বাধা কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর বাজেট। নতুন বাজেটে আগামী অর্থবছরের জন্য মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। নতুন বাজেটে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। এনবিআর ৩ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা পেয়েছে। এটি জিডিপির ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা নতুন বছর ৪০ হাজার কোটি টাকা বাড়ছে। শতকরা হিসাবে তা ১২ শতাংশ।

আগামী বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। কর-বহির্ভূত রাজস্ব (এনটিআর) আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ দুই খাতে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা যথাক্রমে ১৬ হাজার কোটি ও ৪৩ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে নতুন বাজেটে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে যথাক্রমে ১৩ ও ৫ শতাংশ।

সরকারের মোট বাজেটের মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৪ লাখ ৩১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এ বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ দশমিক ৬ শতাংশের সমান। এনবিআরবহির্ভূত কর থেকে আসবে ১৮ হাজার কোটি টাকা, আর কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা।

ঘাটতির মধ্যে অনুদানসহ বৈদেশিক উৎস থেকে আসবে ৯৮ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। আর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসবে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা, এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। সরকারের ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে আগামী অর্থবছরের জন্য দেশের মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর