রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০১:০৩ পূর্বাহ্ন

হৃদরোগের চিকিৎসায় বাংলাদেশ প্রায় স্বাবলম্বী: প্রধানমন্ত্রী

ভয়েস বাংলা রিপোর্ট / ২৬ বার
আপডেট : শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

 হৃদরোগের চিকিৎসায় বাংলাদেশের সক্ষমতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, হৃদরোগের চিকিৎসায় বাংলাদেশ এখন প্রায় স্বাবলম্বী।

শুক্রবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘বাংলাদেশ কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত তৃতীয় বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে দেওয়া ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, বৈজ্ঞানিক কমিটির উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ এবং ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি কোর্সের চেয়ারম্যান ডা. রাজেশ এম ডেভ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকার স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সাশ্রয়ী করেছে। এটিকে প্রতিটি মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি হৃদরোগের চিকিৎসায় বাংলাদেশকে প্রায় স্বনির্ভর করে তুলেছে। বাংলাদেশ এখন হৃদরোগের চিকিৎসায় প্রায় স্বাবলম্বী। হৃদরোগের ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ চিকিৎসার সক্ষমতা রয়েছে এবং এ লক্ষে দেশে দক্ষ জনশক্তি, আধুনিক প্রযুক্তি এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকেরা এখন সফলভাবে হৃদরোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন। যার সুফল জনগণ পাচ্ছে এবং এর ফলে দেশের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্য একটি সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ইউনিট স্থাপনের কাজ চলছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) একটি সম্পূর্ণ কার্ডিওলজি ও কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিট নির্মাণের মাধ্যমে আরও দক্ষ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ তৈরির সুযোগ রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএসএমএমইউতে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট একটি বিশ্বমানের কার্ডিওভাসকুলার অব সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়েছে। প্রতি বছর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে ১৭ দশমিক নয় মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সারা বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হলো হৃদরোগ। খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক ব্যায়ামের অভাব, ধূমপান এবং ডায়াবেটিসের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার প্রায় ২৭ শতাংশ এবং যেখানে প্রতি হাজারে ১০ জন শিশু হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং প্রতি পাঁচ জন যুবকের মধ্যে একজন হৃদরোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। হৃদরোগীদের চিকিৎসা সুবিধা উন্নত করার পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ওপর আমাদের নজর দিতে হবে।

স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও গত ১৪ বছরে স্বাস্থ্যখাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এ পর্যন্ত ১১টি স্নাতকোত্তর ‘সুপার বিশেষায়িত হাসপাতাল’, কার্ডিওভাসকুলার হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, ক্যান্সার হাসপাতাল, নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল এবং অন্যান্য হাসপাতাল স্থাপনের পাশাপাশি সারা দেশে ৬০০টিরও বেশি হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, গ্রামের মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আমরা ১৮ হাজার ৫০০টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছি। হাসপাতাল থেকে ৩০ প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।

সরকার প্রধান জানান, সারাদেশে ৪৩টি হাসপাতালে টেলি-মেডিসিন সেবা চালু করা হয়েছে, যেখানে মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ৩০ হাজার স্যাটেলাইট ক্লিনিক রয়েছে। এছাড়া পাঁচ লাখ অটিস্টিক শিশুকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ১০৩টি সেবা কেন্দ্র রয়েছে।

সরকার প্রতিটি জেলায় একটি করে মেডিকেল কলেজ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেডিকেল কলেজের সংখ্যা এখন ২০০৯ সালের ৫০টি থেকে ১১৫টিতে দাঁড়িয়েছে এবং মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা এখন ১০ হাজার ৭৮৯-এ দাঁড়িয়েছে যা ২০০৯ সালে ছিল শুধুমাত্র দুই হাজার ৫০টি। ডেন্টাল মেডিকেল কলেজ ও ইউনিটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৭টিতে, যা ২০০৯ সালে ছিল মাত্র ১৩টি।

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করবে এবং ইতোমধ্যে চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। গত তিন বছরে ১০ হাজার চিকিৎসক এবং ১৫ হাজার নার্স ও মিডওয়াইফ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে উন্নত হয়েছে এবং চিকিৎসকদের দক্ষতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে যেসব রোগের চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হতো সেসব রোগের চিকিৎসা এখন দেশেই হচ্ছে। বিভিন্ন জটিল রোগ যেমন কিডনি, লিভার, বাইপাস, নিউরো সার্জারি এবং বোন-ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট এখন বাংলাদেশে সফলভাবে চিকিৎসা হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর