বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়-বিএসএমএমইউ-এ নতুন আরেকটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল’। উদ্বোধন হলেও চালু হতে আরও একমাস সময় লাগবে।
বিশেষায়িত হাসপাতালকে ‘স্পেশালাইজড’ বলা হয়ে থাকে। তবে ‘সুপার স্পেশালাইজড’ কেন? জানা গেছে, একই ছাদের নিচে একাধিক বিশেষায়িত বিভাগ, বিভাগের জন্য আলাদা অপারেশন থিয়েটার ও অতিরিক্ত কিছু সেবা আছে—যা সাধারণ হাসপাতালগুলোতে পাওয়া যায় না। তাই এটি দেশের প্রথম সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের প্রথম এই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল নির্মাণে ব্যয় হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। এরমধ্যে এক হাজার কোটি টাকা দিয়েছে কোরিয়া সরকার। বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পাশেই ১২ বিঘা জায়গায় তৈরি করা হয়েছে এই হাসপাতাল। ১৩ তলাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে আছে ৭৫০টি শয্যা, বিভিন্ন বিভাগে ১৪টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, ১০০ শয্যার আইসিইউ। জরুরি বিভাগে থাকবে ১০০ শয্যা, ভিভিআইপি কেবিন ছয়টি, ভিআইপি কেবিন ২২টি এবং ডিল্যাক্স শয্যা থাকবে ২৫টি। সেন্টারভিত্তিক প্রতিটি ওয়ার্ডে থাকবে ৮টি করে শয্যা।
হাসপাতালটিতে থাকবে এক্স-রে, এমআরআই, সিটিস্ক্যানসহ অত্যাধুনিক সব ডায়াগনস্টিক সুবিধা। হাসপাতালে বিশেষজ্ঞসহ মোট তিনশ’ চিকিৎসক ও এক হাজার ২০০ স্বাস্থ্যকর্মীর কাজ করার কথা রয়েছে। ৬টি বিশেষায়িত সেন্টারের মাধ্যমে চলা এই হাসপাতালে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের পাশাপাশি দুই বছরের জন্য ৫৬ জন কোরিয়ান কনসালট্যান্ট কাজ করবেন, যারা দেশীয় জনবলকে আরও দক্ষ করতে ভূমিকা রাখবেন।
এছাড়া হাসপাতালটিতে প্রথম পর্যায়ে থাকবে এক্সিডেন্টাল ইমারজেন্সি সার্ভিস, যা বিএসএমএমইউ হাসপাতালে আগে ছিল না। এই জরুরি সেবা ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে এবং জরুরি বিভাগেও একটি অপারেশন থিয়েটার রয়েছে। পাশাপাশি অটিজম সেন্টার, ম্যাটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ কেয়ার সেন্টার, ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল কেয়ার সেন্টার, হেপাটোবিলিয়ারি ও গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সেন্টার, কার্ডিও ও সেরিব্রো ভাস্কুলার সেন্টার এবং কিডনি সেন্টার রয়েছে এই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে থাকবে রেসপিরেটরি মেডিসিন সেন্টার, জেনারেল সার্জারি সেন্টার, অপথালমোলজি, ডেন্টিস্ট্রি, ডার্মাটোলজি সেন্টার এবং ফিজিক্যাল মেডিসিন বা রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার। এখানে বিশ্বমানের চিকিৎসা বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন, রোবোটিক অপারেশন, জিন থেরাপির ব্যবস্থাও থাকবে। এছাড়া হাসপাতালে সুন্দর পরিবেশের জন্য থাকবে সানকেন গার্ডেন, রুফটপ গার্ডেন ও বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব সুযোগ-সুবিধা। থাকবে উন্নতমানের আধুনিক ব্যবস্থাপনার বহির্বিভাগ, ইনফো ডেস্ক এবং ডিজিটাল ইনফরমেশন সেন্টার।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানান, এখানে বিদেশের হাসপাতালের মতো সেন্ট্রাল অটোমেটেড পেশেন্ট ডাটাবেজ থাকবে— যেখানে একজন রোগীর চিকিৎসকের পরামর্শ, ব্যবস্থাপত্র, মেডিক্যাল রিপোর্ট সবই অনলাইনে সংরক্ষণ করা হবে। পাশাপাশি রোগীরা নিজেরাও অনলাইন থেকে রিপোর্ট ডাউনলোড করতে পারবেন।
এই হাসপাতালের একটি আধুনিক ব্যবস্থা হলো—প্রতিটি বিভাগে নিউম্যাটিক টিউব স্থাপন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে রক্ত সংগ্রহের পর অটোমেটিক্যালি নির্দেশিত বিভাগে চলে যাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। নিউম্যাটিক টিউব এমন একটি সিস্টেম, যা নলাকার পাত্রে নলাকার পাইপের মাধ্যমে তৈরি নেটওয়ার্কগুলোর মাধ্যমে সংকুচিত বায়ু বা আংশিক ভ্যাকুয়াম দিয়ে চালিত করে। এগুলো তরল পরিবহনকারী প্রচলিত পাইপলাইনের বিপরীতে কঠিন বস্তু পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
হাসপাতালটি সুপার স্পেশালাইজড কেন জানতে চাইলে বিএসএমএমইউ’র ভিসি অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ জানান, চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন নতুন গবেষণা ও উদ্ভাবনের সঙ্গে পরিচিত হতে এবং তা জনগণের স্বাস্থ্যসেবায় প্রয়োগ ঘটাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তোলা হয়েছে সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে। দেশেই উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণ, চিকিৎসকদের জন্য অত্যাধুনিক পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা, বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ, জিন থেরাপি, রোবটিক সার্জারি এবং জনগণের জন্য উচ্চমানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে হৃদরোগ, কিডনি রোগ, লিভার, গলব্লাডার ও প্যানক্রিয়েটিক, অরগান ট্রান্সপ্লান্ট, ক্যান্সার, নিউরোসার্জারিসহ বিভিন্ন জটিল রোগের বিশেষায়িত চিকিৎসার ব্যবস্থা বাংলাদেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি নতুন মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।’
তিনি বলেন, এই হাসপাতালে অনেক সেবা আছে—যা জেনারেল হাসপাতালে পাওয়া যায় না। এই হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় একদম হাতের নাগালে থাকবে। তাই এই হাসপাতাল চালু হলে বিদেশে যাওয়ার নির্ভরতা কমবে বলে মনে করি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের মানুষ যাতে দেশেই সব ধরনের উন্নত চিকিৎসাসেবা পান। রোগীদের যাতে চিকিৎসা নিতে বিদেশ যেতে না হয়। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু হওয়ার পর সেই লক্ষ্য অনেকটাই পূরণ হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সৌজন্যে- বাংলা ট্রিবিউন।