রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৭:৪২ পূর্বাহ্ন

হাইকোর্টে গোলমাল শেষে এজলাসে বসলেন দুই বিচারপতি

ভয়েস বাংলা প্রতিবেদক / ৮ বার
আপডেট : সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৩

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সরানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এ ঘটনায় আদালত কক্ষে তুমুল হট্টগোলের ঘটনা ঘটে। বিএনপি সমর্থক শতাধিক আইনজীবী দীর্ঘ সময় আদালত কক্ষের ভেতরে হট্টগোল করতে থাকেন। এতে আদালতে সৃষ্টি হয় অচলাবস্থা। একপর্যায়ে আদালতের দুই বিচারপতি এজলাস থেকে নেমে যান। বিচারপতিরা নেমে যাওয়ার সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ‘শেইম-শেইম’ (লজ্জা) বলতে থাকেন। এরপর দুপুরের বিরতি পর আবারো দুপুর আড়াইটার দিকে এজলাসে ওঠেন দুই বিচারপতি।
সোমবার (২৮ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ উঠে যান। এরপর বিএনপির আইনজীবীরা প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টা আদালতে বসে ছিলেন। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আইনজীবী কামরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট এম. সাঈদ আহমেদ রাজা, আইনজীবী সানজিদা খানম ও নাসরিন সিদ্দিকা লিনা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব। বিএনপির আইনজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টারর কায়সার কামাল, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক বদরুদ্দোজা বাদল ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটির সভাপতি আইনজীবী আবদুল জব্বার ভূইয়া ও সাধারণ সম্পাদক গাজী মো. কামরুল ইসলাম সজলসহ শতাধিক আইনজীবী।
দুপুর সোয়া ১টার দিকে আদালত থেকে বের হয়ে বিএনপির আইন সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার বিষয়ে করা এ রিট মামলায় পক্ষভুক্ত হওয়ার আবেদন হাইকোর্টের এই বেঞ্চে থেকে খারিজ করে দেওয়া হয়। এরপর ওই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আমরা আপিল বিভাগে আবেদন করেছি। আবেদনটি আপিল বিভাগের চেম্বারজজ আদালতে বিচারাধীন। একই সঙ্গে গতকালই এই বেঞ্চের দুই বিচারপতির প্রতি অনাস্থার আবেদন প্রধান বিচারপতির কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় আজ এই বেঞ্চ থেকে আদেশ দেওয়া লজ্জাজনক ঘটনা।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় এজলাসে আসেন দুই বিচারপতি। তারা বসেই ১-৩৪ পর্যন্ত ডাকেন। কোনো আইনজীবী সাড়া না দিলে ৩৫ নম্বর (তারেক রহমানের বক্তব্য অপসারণের আবেদন) ডাকেন। এসময় তারেক রহমানের বক্তব্য অপসারণের নির্দেশনা চেয়ে করা আবেদনের পক্ষে আইনজীবী কামরুল ইসলাম ও সানজিদা খানম দাঁড়ান। আদালত বলেন, অ্যাপ্লিকেশন অ্যালাউ।
আদেশের সঙ্গে সঙ্গে আদালত থেকে বের হয়ে যান আওয়ামী লীগের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট সাঈদ আহেমেদ রাজা, সানজিদা খানম ও নাসরিন সিদ্দিকা লিনাসহ আবেদনকারী আইনজীবীরা। এর পরই তারেক রহমানের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী আদালতে বলেন, আপনার (সিনিয়র বিচারপতি) বিষয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে আমরা অনাস্থা জানিয়ে আবেদন করেছি। আগে সেটি নিষ্পত্তি হোক। এর আগে আপনি এ আবেদন শুনতে পারেন না।
এসময় ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, আপনার বিরুদ্ধে অনাস্থা আছে। নৈতিক কারণে আপনারা শুনতে পারেন না। অনাস্থার আবেদনের বিষয়টি আপনি জানেন। আদালত এ সময় ‘অ্যাপ্লিকেশন অ্যালাউ’ হয়েছে বলে জানিয়ে দেন। তখন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা ‘শেইম’ (লজ্জা) বলে চিৎকার করেন। এছাড়া বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে তারা বলেন, আপনি অবিচার করতে পারেন না। আপনি ইনজাস্টিস করছেন। আপনি বিচার বিভাগে এনআরকি সৃষ্টি করছেন।
আইনজীবীদের হট্টগোল ও চিৎকারের মধ্যে বেলা ১১টার পর এজলাস কক্ষ ত্যাগ করেন বিচারপতিরা। তারা চলে যাওয়ার সময় হঠাৎ পেছন থেকে এজলাসে কার্যতালিকা (কজলিস্ট) ছুড়ে মারেন এক আইনজীবী। এসময় সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ শতাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্যের অভিযোগে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ২০১৫ সালে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকী লিনা। সে রিটের শুনানি নিয়ে ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চ রুল জারিসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন।
হাইকোর্টের রুলে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। তথ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিটিভির মহাপরিচালক, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, একুশে টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও তারেক রহমানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
অন্যদিকে, অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে হাইকোর্ট তারেক রহমানের অবস্থান জানাতে পররাষ্ট্র সচিবকে নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি পুলিশ মহাপরিদর্শককে তারেক রহমানের পাসপোর্টের মেয়াদ জানিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। পরবর্তীতে ঠিকানা ভুলের প্রেক্ষাপটে তারেক রহমান বাদে রিট আবেদনের অন্য সব বিবাদীদের বরাবর রুলের নোটিশ জারি হয়।
সাড়ে আট বছর পর সেই রুল শুনানির জন্য ২ আগস্ট আবেদন করেন রিট পক্ষের আইনজীবী কামরুল ইসলাম। গত ৮ আগস্ট এ মামলার শুনানি নিয়ে আদালতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল হয়। ওইদিন উভয়পক্ষের শুনানি শেষে হাইকোর্ট বলেন, রুল অনুযায়ী অবশ্যই নোটিশ দিতে হবে তারেক রহমানকে। এরপর রিটে উল্লেখিত তারেক রহমানের ঠিকানা ভুল থাকায় তা সংশোধন করে তারেক রহমানের গুলশানের ঠিকানায় নোটিশ পাঠানোর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর