রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৩:০১ পূর্বাহ্ন

স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত লেখক গাফ্‌ফার চৌধুরী আর নেই: মন্ত্রী ও বিশিষ্টজনদের শোক

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৬৬ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০২২

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও জনপ্রিয় কলামিস্ট বুদ্ধিজীবী ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত লেখক আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী আর নেই। স্থানীয় সময় বুধবার রাতে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ৮৭ বছর বয়সী গাফ্ফার চৌধুরী ১৯৭৪ সালের অক্টোবর থে‌কে ব্রিটে‌নে বসবাস কর‌ছি‌লেন। তিনি বার্ধক‌্যজ‌নিত নানা রো‌গে আক্রান্ত হ‌য়ে বেশ কিছু‌ দিন ধ‌রে হাসপাত‌া‌লে ছি‌লেন‌।

গাফ্ফার চৌধুরীর ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় গান আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি-এর রচয়িতা। স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিবনগর সরকারে মাধ্যমে নিবন্ধিত স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক জয় বাংলার’ প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ছিলেন তিনি।

আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ১২ ডিসেম্বর ১৯৩৪ সালে বরিশালের উলানিয়ার চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা হাজি ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী ও মা মোসাম্মৎ জহুরা খাতুন। তিনি উলানিয়া জুনিয়র মাদ্রাসায় ক্লাস সিক্স পর্যন্ত লেখাপড়া করে হাইস্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে বিএ অনার্স পাস করেন।

১৯৫০ সালে গাফ্ফার চৌধুরী দৈনিক ইনসাফ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরের বছর  দৈনিক সংবাদ প্রকাশ হলে গাফ্ফার চৌধুরী সেখানে অনুবাদকের কাজ নেন। ১৯৫৩ সালে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের মাসিক সওগাত পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন গাফ্ফার চৌধুরী। এ সময় তিনি ‘মাসিক নকীব’ও সম্পাদনা করেন। একই বছর তিনি আবদুল কাদির সম্পাদিত ‘দিলরুবা’ পত্রিকারও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন।

১৯৫৬ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী সম্পাদক নিযুক্ত হন। ওই বছরই তিনি প্যারামাউন্ট প্রেসের সাহিত্য পত্রিকা ‘মেঘনা’র সম্পাদক হন। এরপর তিনি দৈনিক আজাদ-এ সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন। ১৯৬৩ সালে তিনি সাপ্তাহিক ‘সোনার বাংলা’র সম্পাদক হন। পরের বছর ১৯৬৪ সালে সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায় নামেন এবং ‘অণুপম মুদ্রণ’ নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। দু’বছর পরই আবার ফিরে আসেন সাংবাদিকতায়। ১৯৬৬ সালে তিনি দৈনিক ‘আওয়াজ’ বের করেন। পত্রিকাটি ছয় দফা আন্দোলনের মুখপত্র হিসেবে ভূমিকা পালন করে। ১৯৬৭ সালে আবার তিনি ‘দৈনিক আজাদ’-এ ফিরে যান সহকারী সম্পাদক হিসেবে। ১৯৬৯ সালে আবার ফিরে যান দৈনিক ইত্তেফাকে। ১৯৬৯ সালে তিনি অবজারভার গ্রুপের দৈনিক ‘পূর্বদেশ’-এ যোগ দেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সপরিবারে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলা হয়ে কলকাতা পৌঁছান। সেখানে মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র ‘সাপ্তাহিক ‘জয় বাংলা’য় লেখালেখি করেন। এ সময় তিনি কলকাতায় ‘দৈনিক আনন্দবাজার’ ও ‘যুগান্তর’ পত্রিকায় কলামিস্ট হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ‘দৈনিক জনপদ’ বের করেন।

১৯৭৪ সালে লন্ডনে পাড়ি জমান গাফ্ফার গাফফার চৌধুরী। এরপর তার প্রবাস জীবনের ইতিহাস শুরু হয়। সেখানে ১৯৭৬ সালে তিনি ‘বাংলার ডাক’ নামে এক সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। আরও একাধিক পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন। প্রবাসে বসে গাফ্ফার চৌধুরী বাংলাদেশের প্রধান পত্রিকাগুলোতে নিয়মিত লেখালেখি করতেন। তিনি স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পদক, ইউনেস্কো পদক, বঙ্গবন্ধু পুরস্কারসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক পুরস্কার লাভ করেন।

গাফ্‌ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে মন্ত্রী ও বিশিষ্টজনদের শোক

আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ বিশিষ্টজনেরা। শোক বার্তায় তারা ভাষা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, সাহিত্যসহ নানা ক্ষেত্রে গাফ্‌ফার চৌধুরীর অবদান তুলে ধরেন। তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।

সাংবাদিকতায় গাফ্‌ফার চৌধুরীর অবদান অবিস্মরণীয়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রখ্যাত সাংবাদিক, কলামিস্ট এবং ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় গান ‌‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ এর রচয়িতা আব্দুল গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। শোকবার্তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় আব্দুল গাফফার চৌধুরীর অবদান অবিস্মরণীয়।

ড. মোমেন বলেন, বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় এবং জাতির মুক্তিসংগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ে গাফ্‌ফার চৌধুরীর লেখনি বিশেষ করে, তাঁর লেখা ‌‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গানটি এক অমর সৃষ্টি। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধকালীন তাঁর প্রকাশিত পত্রিকা ‘জয় বাংলা’ মুক্তিযোদ্ধাদের যথেষ্ট অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন দেশপ্রেমিক কলমযোদ্ধাকে হারিয়েছে। তিনি মরহুম আব্দুল গাফফার চৌধুরীর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

মানুষের মননকে সমৃদ্ধ করে গেছেন গাফ্‌ফার চৌধুরী: তথ্যমন্ত্রী

আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, তার মৃত্যু এক কিংবদন্তির বেদনাবিধুর প্রয়াণ। শোক বার্তায় হাছান মাহমুদ বলেন, ‌‘ভাষাসৈনিক, সাংবাদিক, গীতিকার, কলামিস্ট, সাহিত্যিক ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর মৃত্যু বাংলাদেশ ও বাঙালির জন্য অত্যন্ত বেদনার।

পরিকল্পনামন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর শোক

আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। তারা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও তাঁর শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

একজন কিংবদন্তীর বিদায় হলো: বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘একজন কিংবদন্তীর বিদায় হলো। আব্দুল গাফ্‌ফার চৌধুরী তাঁর মেধা, কর্ম ও লেখনিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখেছেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশ একজন প্রাজ্ঞ, প্রাঞ্চল, গুণীজনকে হারালো; যা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। প্রতিমন্ত্রী শোকবার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

আমির হোসেন আমুর শোক

আব্দুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু।

গাফ্‌ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। এক শোকবার্তায় মন্ত্রী বলেন, ‘মহান ভাষা আন্দোলনের অমর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’-এর রচয়িতা আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সৃষ্টিশীল একজন মানুষ। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রের স্বপক্ষে তাঁর সাহসী ও ক্ষুরধার লেখনী আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রানিত করবে। তাঁর মৃত্যু দেশ ও জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি এক শোকবার্তায় মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ‘আব্দুল গাফ্‌ফার চৌধুরী বাংলা একাডেমি পদক, একুশে পদক, শেরে বাংলা পদক ও বঙ্গবন্ধু পদকসহ অনেক পদকে ভূষিত হয়েছেন তার কর্মের জন্য। তার মৃত্যুতে যে অপূরণীয় ক্ষতি হলো, তা কখনো পূরণ হওয়ার নয়।’

এছাড়া আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপ্রতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ, প্রাবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, গৃহয়াণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরিফ আহমেদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ছানোয়ার হোসেন তালুকদার, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. আখতারুজ্জামান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মো. নূরুল হুদা, আইন ও শালিস কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ কামাল।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর