শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৮:০৯ অপরাহ্ন

সেদিন যা বলেছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ১৯৯ বার
আপডেট : রবিবার, ১ মে, ২০২২

প্রায় আড়াই বছর পর গত মার্চে সিলেটে এসেছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এরপর আর নিজ জেলায় আসা হয়নি সাবেক এই অর্থমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের। শনিবার (৩০ এপ্রিল) রাতে তিনি শেষবারের মতো ও একেবারে নিজ জন্মস্থানে ফিরেছেন নিথর ও নিষ্প্রাণ দেহে।

গত ১৬ মার্চ তিনি সিলেট সিটি করপোরেশনের দেওয়া সংবর্ধনায় এসেছিলেন। সেখানে বলেছিলেন, ‘আমার জীবন নিয়ে আমি গর্বিত। অনেকে হয়তো একে আত্মগরিমা বলবেন। কিন্তু এটা অন্যায় নয়, বরং এর জন্য নিজেকে গড়ে তুলতে হয়……।’ সিলেটের ঐতিহ্যবাহী আলী আমজদের ঘড়ি ঘরের সামনে আবুল মাল আবদুল মুহিতকে দেওয়া সেই সংবর্ধনায় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেছিলেন, ‘নিজের জন্মস্থানে এমন একটি সম্মাননা গৌরবের। আমি একান্তভাবে সিলেটের মানুষ। প্রাপ্তির একটি নিয়ম আছে। সেটা মনের প্রয়োজন, আত্মার প্রয়োজন ও মাহাত্ম্যের প্রয়োজন। এই যে আমাকে সম্মান জানাচ্ছেন, আমি সেই মাহাত্ম্যের কাছে মাথানত করি। আমার ভুলত্রুটি সব মাফ করে দেবেন।’

ওই দিন রাত ৮টায় তিনি অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হলে সিলেট মহানগর পুলিশের বাদক দল তাকে অভ্যর্থনা জানায়। এরপর মঞ্চে মেয়র, কাউন্সিলরসহ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ‘গুণীশ্রেষ্ঠ সম্মাননা স্মারক’ হিসেবে শতবর্ষী আলী আমজদের ঘড়ির স্বর্ণখচিত রেপ্লিকা আনুষ্ঠানিকভাবে আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে হস্তান্তর করেন।

সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে আবুল মাল আবদুল মুহিত দীর্ঘ বক্তৃতা রাখেন। তার ৪০ মিনিটের বক্তৃতায় নানা স্মৃতিচারণ মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপভোগ করেন উপস্থিত জনতা। তিনি বলেছিলেন, আমরা ১৪ ভাই বোন। এর মধ্যে শিশুকালে একজন মারা যায়। আপনারা জানেন, আমি এই দেশের বৃদ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে একজন। এই বছরের জানুয়ারি মাসে বয়স ৮৮ বছর হয়েছে। আমাকে দীর্ঘ জীবন দান করায় মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই। এমন অনুষ্ঠানে কী বক্তব্য দেওয়া যায়? একটি হলো প্রস্তুতি নিয়ে বক্তব্য দেওয়া। আরেকটি হলো, উপস্থিত পরিস্থিতি বিবেচনায় বক্তব্য প্রদান করা। আমি দ্বিতীয় পদ্ধতিটি অনুসরণ করলাম। এতে অবশ্য বেশি স্মৃতিচারণ করতে হয়। আমি স্মৃতিচারণ করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবো।

শৈশবের স্মৃতিচারণায় গ্রামীণ জীবন থেকে শহর জীবনের নানা দিক তিনি তুলে ধরেন। আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ছোটবেলার আনন্দময়, স্বাধীনতার দিনগুলো খুবই উপভোগ্য ছিল। সেসব দিনের সুখকর স্মৃতির স্মরণে আজকে সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। সিলেটের পরিবেশেই আমার জন্ম। আমার বেড়ে ওঠা। আমি গর্ববোধ করি এখানে জন্মে। এখান থেকে অনেক জ্ঞানীগুণীর জন্ম হবে। আজকে সিলেট নগরে আমি একজন অতিথি। এটা একটা গর্বের বিষয়। নিজের জন্মস্থানে নিজে এমন একটি সম্মান পাওয়া গর্বের।

সিলেটকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থান উল্লেখ করে বলেছিলেন, জন্মভূমির প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি। সিলেটে ইসলাম ধর্মপ্রচার করতে হযরত শাহজালাল (রহ.) এখানে এসেছিলেন। বেশিরভাগ মানুষই তার মাধ্যমে ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেছে। ধর্ম পালন করেও আসছি। আমাদের এখানে অন্যান্য ধর্মের আনুষ্ঠানিকতাও সমানভাবে পালিত হয়। ধর্মীয় সম্প্রীতির ঐতিহ্য বহু পুরনো। ভারত পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ উপমহাদেশ। এ উপমহাদেশের মানুষের মধ্যে এখনও কমিউনাল ফিলিংস কাজ করে। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা একজন জ্ঞানীগুণী ব্যক্তির জীবনের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হওয়া উচিত।

শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান আবুল মাল আবদুল মুহিত। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। শনিবার রাত ১০টার দিকে তার লাশ সিলেটে নেওয়া হয়েছে। রবিবার জোহরের নামাজের পর মা-বাবার কবরের পাশে লাশ দাফন করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর