রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:০০ পূর্বাহ্ন

সীতাকুণ্ডে আগুন নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৪৭ বার
আপডেট : রবিবার, ৫ জুন, ২০২২

সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মালিকপক্ষ। একইসঙ্গে দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেক ব্যক্তির পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা।

রবিবার (৫ জুন) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন স্মার্ট গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী। এর আগে বিকালে ভিডিওবার্তায় স্মার্ট গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক শামসুল হায়দার সিদ্দিকী হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দেন। বিএম কনটেইনার ডিপো স্মার্ট গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান।

রবিবার সন্ধ্যায় শামসুল হায়দার সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় আমাদের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটিকে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করবো। এটা কি দুর্ঘটনা, নাকি প্রতিপক্ষ কোনও নাশকতা চালিয়েছে, সেটা তদন্ত করে দেখার জন্য সরকারের সব কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেক ব্যক্তির পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে, গুরুতর আহত বা অঙ্গহানির শিকার ব্যক্তিদের ছয় লাখ এবং কম আহতদের চার লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। নিহতদের মধ্যে কারও পরিবারে শিশু থাকলে সে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তাদের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ দেওয়া হবে।

ভিডিওবার্তায় শামসুল হায়দার বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যারা নিহত ও আহত হয়েছেন তাদের পরিবারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করবো আমরা। পাশাপাশি আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করবো। তিনি বলেন, ডিপোতে ভয়াবহ আগুন ও হতাহতদের জন্য আমরা গভীর দুঃখপ্রকাশ করছি। নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। সেইসঙ্গে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে যারা আহত হয়েছেন, আল্লাহর কাছে তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। আহত ও নিহতদের পরিবারের পাশে আছি আমরা।

শনিবার রাত ৯টার দিকে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি এলাকায় বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করার সময় রাসায়নিক থাকা একটি কনটেইনারে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। নিহতদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ৯ কর্মী রয়েছেন। এ ঘটনায় পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক নিউটন দাশ বলেন, ‌ফায়ার সার্ভিসের সব ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। এখনও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তবে তীব্রতা কিছুটা কমেছে।

কনটেইনার ডিপোর মালিক বললেন ‘আমার সব শেষ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন চার শতাধিক। দীর্ঘ ২০ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়েও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এ অবস্থায় অগ্নিকাণ্ডে হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএম কনটেইনার ডিপোর মালিকপক্ষ।

রবিবার বিকালে বিএম কনটেইনার ডিপোর পরিচালক মজিবুর রহমান বলেন, ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে আমার ক্ষতি হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। আমার সব শেষ। তবে আমি আহত ও নিহতদের পরিবারের পাশে আছি।

বিএম কনটেইনার ডিপোর পরিচালক মজিবুর রহমান

বিএম কনটেইনার ডিপো চট্টগ্রামভিত্তিক প্রতিষ্ঠান স্মার্ট গ্রুপের মালিকানাধীন। মজিবুর রহমান স্মার্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিএম কনটেইনার ডিপোর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি চট্টগ্রাম জেলা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এবং দৈনিক পূর্বদেশের সম্পাদক।

অবশ্য কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে রবিবার বিকাল পর্যন্ত ডিপোর মালিক বা কোনও কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যাননি। মালিকপক্ষের কেউ না থাকায় কনটেইনার ডিপোতে কী ধরনের কেমিক্যাল ছিল, তা জানতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

মজিবুর রহমান বলেন, কী কারণে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে কনটেইনার থেকেই আগুন ধরেছে বলে ধারণা করছি। নৈতিকতা ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে হতাহতদের পাশে থাকবো। আহতরা যাতে সর্বোচ্চ চিকিৎসা পায় সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার আমরা বহন করবো। দুর্ঘটনায় যারাই হতাহত হয়েছে তাদের সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। পাশাপাশি হতাহতদের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া হবে। প্রশাসন যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবে সেভাবে সহায়তা করা হবে।

‘ডিপোতে শতাধিক শ্রমিক ও কর্মকর্তা ছিলেন’ উল্লেখ করে মজিবুর রহমান বলেন, আমরা কোনও তথ্য গোপন করিনি। ডিপোতে শতাধিক শ্রমিক ও কর্মকর্তা ছিলেন। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছিল ডিপোতে। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড অতিরিক্ত হিটে আগুন ধরে বিস্ফোরিত হয়েছে। রাসায়নিক পদার্থ ও গার্মেন্টস পণ্য থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। এজন্য হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে। সেই সঙ্গে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।

তবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, আমরা ডিপোর মালিকপক্ষের লোকজনকে খুঁজছি। দুর্ঘটনার পর থেকে তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। তাদের খোঁজ পেলে জানা যেতো, কোন কনটেইনারে কী ধরনের দ্রব্য এবং কতটা কনটেইনার বিপজ্জনক। কারণ আগুনের সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। এতে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে।

এদিকে, অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি চার শতাধিক। তাদের মধ্যে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীও রয়েছেন। চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক নিউটন দাশ বলেন, ‌ফায়ার সার্ভিসের সব ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। এখনও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তবে তীব্রতা কিছুটা কমেছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর