মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৩:০৮ অপরাহ্ন

সিলেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড, বন্যা পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কা

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ১৭৪ বার
আপডেট : শনিবার, ১৮ জুন, ২০২২

সীমান্তঘেঁষা ভারতের দুই রাজ্য আসাম ও মেঘালয়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হওয়ায় ভয়ংকর বন্যা দেখা দিয়েছে। সেই পানি বাংলাদেশে আসার পাশাপাশি সিলেটে ভারী বৃষ্টির রেকর্ড হওয়ায় আশপাশের ১০ জেলায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। আগামী দুই-তিন দিনে এই পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

আসাম ও মেঘালয়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে গত কয়েকদিনে। আগামী ২-৩ দিনও একই অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে ভারতের আবহাওয়া অফিস। ফলে ওই দুই রাজ্যে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, যা আরও কয়েকদিন অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে, শনিবার (১৮ জুন) সিলেটে ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৩ দিনে অঞ্চলটিতে বৃষ্টি কিছুটা কমার সম্ভাবনা থাকলেও তাতে বন্যা পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হবে না বলে জানিয়েছে ঢাকার আবহাওয়া অধিদফতর। আসাম-মেঘালয়ের বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যার পানির কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

শনিবার (১৮ জুন) আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানান, সিলেট অঞ্চলে শুক্রবার (১৭ জুন) সন্ধ্যা থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটি ওই অঞ্চলের আবহাওয়ার ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ২০০০ সালের ১২ জুন রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয় সিলেটে, ৩৬২ মিলিমিটার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে ১৯৫৮ সালের ১৯ জুন, ৩৩৬ মিলিমিটার। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আগামী ২-৩ দিন অর্থাৎ ২১ জুন পর্যন্ত বৃষ্টিপাত কিছুটা কমার সম্ভাবনা থাকলেও তা উল্লেখযোগ্য নয়। তারপর বৃষ্টি কমার সম্ভাবনা রয়েছে। একই ধরনের তথ্য জানিয়েছে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের আবহাওয়া অফিসও। তারা বলেছে, সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হচ্ছে কয়েকদিন ধরে, যা অব্যাহত থাকবে। ফলে ২১ জুন পর্যন্ত বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে।

নদী ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে— সিলেটের সুরমা নদীতে ইতিহাসে সর্বোচ্চ পানি প্রবাহিত হচ্ছে এখন। এর পেছনে মূল কারণ হলো- ভারতের মেঘালয় ও আসামের পানির ঢল বাংলাদেশে আসা এবং সিলেটে কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ। ভারী বৃষ্টিপাত না থামলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বিষয়টি মাথায় নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ভারী বৃষ্টি না হলেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে আগামী ৬-৭ দিন সময় লেগে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেখানকার মানুষকে অন্তত আরও ৭-১০ দিন আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে হতে পারে।

এদিকে, শনিবার (১৮ জুন) সন্ধ্যায় সচিবালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান জানিয়েছেন, ১২২ বছরের ইতিহাসে সিলেট ও সুনামগঞ্জে এমন ভয়াবহ বন্যা আর হয়নি। এই দুই জেলাসহ দেশের ১০ জেলার ৬৪ উপজেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে। উদ্ধার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনী কার্যক্রম চালাবে।

অন্যদিকে, শুক্রবার (১৭ জুন) দেশের তিনটি নদীর ৫ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও শনিবার (১৮ জুন) ১১ নদীর ১৭ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার উপরে উঠেছে। ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে জানানো হয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে।

দেশের সকল প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে জানিয়ে আবহাওয়া সংস্থাগুলোর গাণিতিক মডেলভিত্তিক পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি স্থানে মাঝারি থেকে ভারী, কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। ফলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, সুরমা, কুশিয়ারা, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারসহ সকল প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর