রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৩:০১ পূর্বাহ্ন

সাত দলের নতুন জোট গণতন্ত্র মঞ্চের আত্মপ্রকাশ

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ১১৪ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০২২

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গণতন্ত্র মঞ্চ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক জোট আত্মপ্রকাশ করেছে। নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জেএসডি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদ নিয়ে এ জোট গঠন করা হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো এ জোটকে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে রাজপথে দেখা যাবে।

গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন এ জোটের ঘোষণা দেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব। তিনিই এ মঞ্চের প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া, সদস্য সচিব নুরুল হক নূর, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আকবর খান, জেএসডির সানোয়ার হোসেন তালুকদার, শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, রাষ্ট্রচিন্তা সংস্কারের আসিফ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার আদায়, অন্তত দুই বছরের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন এবং সংবিধান সংশোধন করে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা বাস্তবায়ন—এ তিন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। এ জোটের মাধ্যমে কার্যকরী জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা হবে জানিয়ে রব বলেন, আমাদের ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের সঙ্গে যারা জড়িত, জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে সংশ্লিষ্ট শ্রেণীর পেশা ও সংগঠনের ব্যক্তিকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা হবে। এটাই হবে কার্যকর জাতীয় ঐক্য। এ ঐক্য গণজাগরণ, গণবিস্ফোরণ, গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত করবে। জনগণকে আন্দোলনে শরিক হতে বলছি। রাস্তায় সবাইকে নামতে হবে। এ লড়াই গণতন্ত্রের লড়াই, এ লড়াই বাঁচা-মারার লড়াই, এ লড়াইয়ে জিততে হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে, যারা জনগণের ওপর অত্যাচার করেছে তাদের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাদের পালাতে দেয়া যাবে না, তারা যেন পালাতে না পারে। সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে জোটের প্রধান সমন্বয়ক বলেন, সব শ্রেণী-পেশার জনগণ এবং দেশবাসীকে আমি আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, পাড়া-মহল্লা, সব শিল্প- রখানা, সব সংগঠনে গণতন্ত্র মঞ্চের সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

এর আগে ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে প্রগতিশীল দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা গঠন করা হয়। পরে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোট গঠনের ঘোষণা আসে। ওই বছর জোটগতভাবেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় দলগুলো। কিন্তু নির্বাচন বা আন্দোলন কোনো দিকেই সাফল্য আসেনি। নতুন জোটের দুই দল নাগরিক ঐক্য ও জেএসডি গত নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ছিল। আর গণঅধিকার পরিষদের নেতা রেজা কিবরিয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরাম থেকেই নির্বাচন করেছিলেন। গণফোরামের ড. কামাল হোসেনকে সামনে রেখে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছিল সব মিলিয়ে সাতটি আসন। সেই ভরাডুবির পর ধীরে ধীরে ওই ফ্রন্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। রেজা কিবরিয়া সম্প্রতি ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সাবেক নেতা নুরুল হক নূরকে নিয়ে নতুন দল গড়েন। ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনও কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন আন্দোলনে গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে ছিল।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই গণতন্ত্র মঞ্চের রূপরেখা উপস্থাপন করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, দেশের মানুষ চায় এখন পরিবর্তনের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও দিশা নিয়ে রাজপথে জনগণের বৃহত্তর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। এ কারণে আমরা দেশের জনণের আকাঙ্ক্ষার পাশে দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক দল, শ্রেণী-পেশার সংগঠন ও সামাজিক শক্তিগুলোর বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলাকে আমরা জরুরি কর্তব্য হিসেবে বিবেচনা করি। আমরা মনে করি, বৃহত্তর ঐক্যের ভিত্তিতে গণআন্দোলন-গণসংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনকে বিদায় দিতে না পারলে মানুষের ভোটের অধিকার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনসহ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কিছুই অর্জন করা যাবে না।

গণতন্ত্র মঞ্চের লক্ষ্য তুলে ধরে মান্না বলেন, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করতে হবে এবং একটি রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করবে, প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক রদবদল করবে, একজন নাগরিকের নির্বাচিত করার ও নির্বাচিত হওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে দল নিবন্ধন আইন, নির্বাচন আইন ও বিধিমালার যথাযথ সংস্কার করবে এবং ইভিএম ব্যবস্থা বাতিল করে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো এবং প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক ও শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরিতে সহায়তা করবে, যাতে পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ এ গণতান্ত্রিক সংস্কার সম্পন্ন করতে পারে।

গণতন্ত্র মঞ্চের প্রথম কর্মসূচি আগামী বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় পালিত হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। পুলিশি অত্যাচার-নির্যাতন-হামলা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেলসহ সব জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি, সরকারের উদাসীনতার প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর