শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১০:৩৫ অপরাহ্ন

সাগরিকাকে নিয়ে কৌতূহলী ভোটাররা, জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী

ভয়েস বাংলা প্রতিবেদক / ১৪ বার
আপডেট : সোমবার, ১৯ জুন, ২০২৩

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী তৃতীয় লিঙ্গের সুলতানা আহমেদ ওরফে সাগরিকাকে নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই ভোটারদের। ভোটের মাঠে নতুন হয়েও যেন সবার চেনা এই প্রার্থী। ভোট চাইতে গিয়ে নিজের পরিচয় দেওয়ার আগেই ভোটাররা বলছেন, ‘তোমাকে চিনি, পাশে আছি, চিন্তা করো না।’ ভোটারদের এমন অবাক করা মন্তব্য পাওয়া গেছে সাগরিকার নির্বাচনি প্রচারণায়।
জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সাগরিকার উঠে আসার গল্পটা সহজ ছিল না। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এখানে আসতে হয়েছে। কারণ সচরাচর চলার পথে তৃতীয় লিঙ্গের কাউকে দেখলে অনেকে ভয়ে আঁতকে ওঠেন। কেউ স্বাভাবিকভাবে নেন। আবার কেউ বিরক্ত হন। মাঝেমধ্যে খারাপ আচারণের শিকার হন। প্রতিনিয়ত এসবের সম্মুখীন হওয়া মানুষগুলো সমাজের মূলস্রোতে যুক্ত হওয়ার সংগ্রাম মোটেও সহজ নয়। সেই কঠিন বাস্তবতার মধ্যে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে সংরক্ষিত ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাগরিকা।
সাগরিকার বাড়ি নগরীর শাহমখদুম থানার শিল্পীপাড়ায়। থাকেন শিরোইল কলোনিতে। মা-বাবার চার সন্তানের একজন তিনি। বাবা নেই। বর্তমানে মা-বোন একসঙ্গে থাকেন। মাঝেমধ্যে বাড়িতে যান। তবে মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব সাগরিকার কাঁধে।
নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে অষ্টম শ্রেণি পাসের পর থেমে যায় পড়াশোনা। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হওয়ায় থেমে যাওয়া পড়াশোনা আর চালানো সম্ভব হয়নি। উল্টো বাড়ি ছাড়তে হয়েছে। অলিগলিতে কেটেছে মাসের পর মাস। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এখন জনগণের সেবক হতে চান।
২০০০ সালে সাগরিকার উদ্যোগে ‘দিনের আলো হিজড়া সংঘ’ সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। ২০০৫ সালে মহিলা অধিদফতর ও ২০০৭ সালে সমাজসেবা অধিদফতর থেকে নিবন্ধন পায় সংগঠনটি। হিজড়াদের ভোটাধিকার, বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশীদারিত্ব নিয়ে কাজ করছেন। ২০২২ সাল থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় হন।
শনিবার (১৭ জুন) নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়েছেন সাগরিকা। এদিন বিকালে ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচার মিছিলে অংশ নেন। প্রচারণার সময় ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বৃদ্ধা সালেহা বেগম ঘর থেকে পানি এনে সাগরিকা ও তার প্রচারণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের পান করান।
সালেহা বেগম বলেন, ‘অনেকে বলছেন সাগরিকা পাস করলে হিজড়াদের অত্যাচার বেড়ে যাবে। তবে আমার মনে হচ্ছে বাড়বে না, বরং কমবে। কারণ সাগরিকা কখনও চাইবে না, তার ওয়ার্ডে খারাপ কর্মকাণ্ড চলুক। সেইসঙ্গে সাগরিকার সম্মান রক্ষায় হিজড়ারা তখন কিন্তু উল্টাপাল্টা কিছুই করবে না। আমি মনেপ্রাণে চাই, সাগরিকা জনপ্রতিনিধি হোক। জনপ্রতিনিধি হলে এলাকার অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়াবে সে।’
সাগরিকা তার কর্মীদের নিয়ে ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দিপা প্রজ্ঞার বাড়ির দিকে যাওয়ার পথে এই ভোটার বলতে থাকেন, ‘আসতে হবে না। তোমাকে চিনি, পাশে আছি, চিন্তা করো না।
কীভাবে সাগরিকাকে চেনেন জানতে চাইলে দিপা প্রজ্ঞা বলেন, ‘ভোট চাইতে আসার আগে থেকেই তার কথা লোকমুখে শুনেছি বহুবার। সবার মুখে মুখে তার নাম। সে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মানুষ। কাজেই পিছয়ে পড়া মানুষের কষ্টগুলো তার চেয়ে কেউ ভালো অনুভব করতে পারবে না। এ কারণে এবার সাগরিকাকেই ভোট দেবো আমরা।
একই কথা বললেন নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুজন ইসলাম। তিনি বলেন, ‘জীবনে অনেক প্রার্থীকে ভোট দিয়েছি। ভোটের পর তাদের দেখা পাওয়া যায় না। এবার তৃতীয় লিঙ্গের সাগরিকাকে আনারস প্রতীকে ভোট দেবো। দেখি কী হয়।’
২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পলি সাহা বলেন, ‘এবার নতুন মুখ। এখন তো প্রার্থীরা ভোটারদের বাড়ি আসে না বললেই চলে। অথচ কয়েকবার এসেছে সাগরিকা। তাকেই ভোট দেবো।
ভোটের মাঠে কেমন সাড়া পাচ্ছেন ভোটারদের জানতে চাইলে সাগরিকা বলেন, ‘আমার নির্বাচনি এলাকা ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড। জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। মানুষ পরিবর্তন চাচ্ছেন। আমি ছাড়াও পাঁচ প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে আমার জনপ্রিয়তা বেশি। সবাই আমাকে চাচ্ছেন। প্রতিটি ঘরে আমার ভোটার আছে। আমার প্রতীক আনারস।’
আমার কোনও পিছুটান নেই, চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই উল্লেখ করে সাগরিকা বলেন, ‘বিপুল ভোটে আমাকে জয়যুক্ত করবে তিন ওয়ার্ডবাসী। কারণ ভোটাররা জানে, আমি অবহেলিত মানুষের জন্য কাজ করবো।
নির্বাচনি ওয়ার্ডগুলোর মানুষের সঙ্গে অনেক আগে থেকে পরিচিত জানিয়ে এই প্রার্থী আরও বলেন, ‘ভোটের মাঠ নিজের করে নিতে পেরেছি। ভোটাররা আমাকে সহজভাবে গ্রহণ করছেন। নির্বাচনি ইশতেহারে বলেছি, তিনটি ওয়ার্ডে আলাদা কার্যালয় থাকবে আমার। তিন ওয়ার্ডের রোগীদের জন্য অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করবো। প্রতিটি ওয়ার্ডের মানুষের উন্নয়নে কাজ করবো।’
দিনের আলো হিজড়া সংঘের সভাপতি মোহনা বলেন, ‘সাগরিকা তিনটি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের পছন্দের প্রার্থী। তাই অনেক ভোটার তার জন্য কাজ করছেন। তবে কেউ কেউ অপপ্রচার চালাচ্ছেন, সাগরিকা পাস করলে হিজড়াদের অত্যাচার বেড়ে যাবে। বাস্তবে এমন কিছুই হবে না। এবার সাগরিকা জয়ী হবে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর