রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৪:১৮ পূর্বাহ্ন

‘সবাই এভাবে বরণ করবে স্বপ্নেও ভাবিনি’

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ১৪৮ বার
আপডেট : শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে শ্রেষ্ঠত্বের গৌরব অর্জনের জন্য আকবর আলী স্যারকে স্মরণ করলেন বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। তিনি বলেছেন, ‘একযুগ ধরে ফুটবলের পেছনে সময় দিয়েছেন আকবর স্যার। তার জন্যই আজ সাফল্য এসেছে। আকবর স্যারের জন্য আমি সাবিনা হতে পেরেছি। তিনি বেঁচে থাকলে আজ আমাদের বিজয়ে সবচেয়ে খুশি হতেন। আমার বাবাও বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন।’

শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) নিজ জেলা সাতক্ষীরায় সংবর্ধনা পেয়ে আবেগাপ্লুত নিজের শিকড়ের কথা স্মরণ করেন সাফজয়ী সাবিনা। এ সময় সাবিনা বলেন, নিজ জেলার মানুষ আমাকে এভাবে বরণ করে নেবে স্বপ্নেও ভাবিনি। জেলার মানুষ আমাকে যে অভিবাদন জানিয়েছেন, সম্মাননা ও ভালোবাসা দিয়েছেন তা কখনও ভুলবো না। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। মানুষের এই হাসিটা ধরে রাখার চেষ্টা করবো সবসময়। আগামীতে নিজের সেরাটা দিয়ে খেলবো। আমার ক্যারিয়ার এগিয়ে নিতে সবার দোয়া চাই।

সাফজয়ী সাবিনা বলেন, মাঠে নামার আগে দেশের মানুষ যেভাবে আমাদের সমর্থন দিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উৎসাহ দিয়েছেন তাতে আমরা দারুণ উজ্জীবিত হয়েছি। সেইসঙ্গে সর্বোচ্চ দিয়ে সবাই খেলেছি। এজন্য জয়টা আমাদেরই হয়েছে। এর আগে সাতক্ষীরা সার্কিট হাউসের সামনে থেকে সাবিনাকে নিয়ে শহরে শোভাযাত্রা বের করা হয়। এ সময় সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ তাকে হাত নেড়ে ও ফুল ছিটিয়ে অভিবাদন জানান। সাবিনাও সবাইকে হাত নেড়ে ও ফুল ছিটিয়ে অভিবাদনের জবাব দেন।

বেলা ১১টায় সাতক্ষীরা সার্কিট হাউস মোড়ে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ওরিয়ন স্পোর্টস একাডেমিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়। পরে সাতক্ষীরা ক্রীড়া সংস্থার একটি পিকআপে চড়ে গোল্ডেন বুট ও সেরা খেলোয়াড়ের ট্রফি উঁচিয়ে শহর ঘুরে বেড়ান। তখন হাত নেড়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান জেলাবাসী।

সাতক্ষীরা-৩

সাতক্ষীরা সার্কিট হাউস মোড়ে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়

শুক্রবার সকালে সাতক্ষীরায় পা রাখেন সাবিনা। সকালে শহরের সবুজবাগের বাড়িতে বসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সাবিনা বলেন, রক্ষণশীল সমাজে একজন মেয়েকে খেলোয়াড় জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য প্রচুর সংগ্রাম করতে হয়। আমাকেও করতে হয়েছে। মেয়েরা ফুটবল খেলবে, এমনটা নিজের পরিবারের কেউ মেনে নেন না। তবু অদম্য মনোবল ও স্থানীয় কোচ প্রয়াত আকবর আলী স্যারের উৎসাহে আজ এই পর্যায়ে এসেছি। বিজয়ী হয়ে নিজ জেলায় ফিরে খুবই ভালো লাগছে। জেলার মানুষ আমাকে সাদরে অভিবাদন জানিয়েছেন, এতে আমি অভিভূত। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা এবং পরিবার আমাকে খুবই সাপোর্ট করেছে। পরিবারে কখনও প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়নি। আমাদের জেলায় প্র্যাকটিসের জন্য পর্যাপ্ত মাঠ নেই। সেজন্য প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ভালো কোনও খেলোয়াড় উঠে আসতে পারছে না। জেলা স্টেডিয়ামেও সারা বছর বিভিন্ন খেলা থাকে। ফুটবল খেলাকে এখন মেয়েরা পেশা হিসেবে নিচ্ছে। মেয়ের এগিয়ে এলে ফুটবল খেলা আরও এগিয়ে যাবে।

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের নাসিমাবাদ গ্রামে ১৯৯৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন সাবিনা খাতুন। ২০০৭ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন ফুটবল খেলায় পা রাখেন। ২০০৯ সালে জাতীয় দলে সুযোগ পান। এরপর পেছনে তাকাতে হয়নি। খেলার শুরু থেকে অভিভাবক হয়ে পাশে থেকেছেন শহরের চালতেতলার কোচ আকবর আলী। চালতেতলা এলাকায় ২০০২ সালে জ্যোতি ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নামে একটি আবাসিক সংগঠন গড়েন আকবর। সেই প্রতিষ্ঠান থেকেই সাবিনার খেলার হাতেখড়ি।

জ্যোতি ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহ-সংগঠক প্রয়াত আকবর আলীর স্ত্রী রেহেনা আক্তার বলেন, আমার স্বামী বেঁচে থাকলে আজি কী যে খুশি হতেন। সাবিনা ও মাসুরা আমার স্বামীর মুখ উজ্জ্বল করেছে। এটি বড় প্রাপ্তি। তিনি বলেন, সাবিনা তখন নবারুন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতায় তার খেলা নজর কাড়ে আকবর আলীর। তিনি সাবিনাকে পিটিআই স্কুল মাঠে ফুটবল খেলায় প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য নিয়ে আসেন। এরপর শুরু হয় সংগ্রাম। সেই সংগ্রামের ফল আজকের সাবিনা।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি আশরাফুজ্জামান আশু বলেন, ফুটবলকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সাবিনাদের মতো খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাহলে জেলার ক্রীড়া আরও এগিয়ে যাবে।

সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি হুমায়ুন কবির বলেন, শনিবার দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাবিনা খাতুনকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। দলের ডিফেন্ডার মাসুরা পারভীন এখনও বাড়িতে আসেননি। তাদের দুজনকে একসঙ্গে জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে আগামীতে সময় করে একদিন সংবর্ধনা দেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর