রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:১১ পূর্বাহ্ন

সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে আগ্রহী সিইসি

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৪৮ বার
আপডেট : শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০২২

সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের প্রতি আগ্রহী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের। এ ব্যবস্থা চালু হলে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব অর্ধেক কমে যাবে বলে ধারণা তার। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোকে বিবেচনায় নেওয়ার পাশাপাশি সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবও আসে সিইসির পক্ষ থেকে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসির সঙ্গে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংলাপের আলোচনা পর্যালোচনা করে সিইসির এই ঝোঁকের বিষয়টি জানা গেছে।

১৭ জুলাই শুরু হওয়া সংলাপে ইসির নিবন্ধিত ৩৯ দলের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৬টি দল সংলাপে অংশ নিয়েছে। বিএনপিসহ ৯টি দল সংলাপে অংশ নেয়নি। ইসির সিডিউল অনুযায়ী রবিবার শেষ দিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপের কথা রয়েছে। আরও দুটি দলের জন্য সংলাপের সময়সূচি নির্ধারিত থাকলেও তারা আবেদন করে সময় পরিবর্তন করেছে। দল দুটির সংলাপ সেপ্টেম্বরে হতে পারে।

সংলাপ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে বাম ঘরানার চারটি রাজনৈতিক দল এলাকাভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের পরিবর্তে ভোটের আনুপাতির প্রতিনিধিত্বের সুপারিশ করেছে। দলগুলো হলো— বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ।

জানা গেছে, দলগুলোর আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের প্রস্তাবের বিষয়টি নিয়ে সিইসি বেশ আগ্রহ দেখিয়েছেন। এই প্রস্তাবের পেছনে দলগুলোর কারণও জানতে চেয়েছেন তিনি। প্রস্তাবের বিষয়ে নিজের মতও প্রকাশ করেছেন কাজী হাবিবুল আউয়াল।

সংলাপে সবার আগে জুলাই বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সংখ্যানুপাতিক ভোটের প্রস্তাব দেন। পরে সিইসিও বলেন বিষয়টি নিয়ে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে কয়েকজন কলাম লেখক ও আইনজ্ঞকে বিষয়টি নিয়ে লেখালেখিরও অনুরোধ করেছিলেন বলে সংলাপে উল্লেখ করেন। তবে, আইনজীবী শাহদীন মালিক ও কলামিস্ট ড. তোফায়েল ছাড়া কেউ তাতে সাড়া দেননি।

বিপ্লবী ওয়র্কার্স পার্টির সঙ্গে সংলাপে সিইসি জানান, তার মতে এই পদ্ধতিতে ক্ষতি নেই। সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব হলে সব দল তাদের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে দাঁড়াবে। এতে কোনও দল ৫০ শতাংশ ভোট পেলে তারা ৩০০টি আসনের ১৫০টি আসন পাবে। কোনও দল ২০ শতাংশ ভোট পেলে ৬০টি আসন নেবে। কেউ ৫ শতাংশ পেলে ১৫টি আসন পাবে। আমি এই সিস্টেমে কোনও ত্রুটি দেখি না। এটা হলে ইসির পরিশ্রম ৫০ শতাংশ কমে যেতো এবং পেশীশক্তির প্রভাবও কমতো।

সিইসি বলেন, রাজনৈতিক লেভেল থেকে এটা করতে হবে। আনুপাতিক ভোট কী সেটা ভোটারদেরও বোঝাতে হবে। এজন্য সাংবিধানিক সংস্কারের কথা চিন্তা করতে হবে। সংসদ গঠনের সংস্কারের বিষয় চিন্তা করতে হবে।

ইসির ১১ দিন ব্যাপী সংলাপের দশম দিনে (২৮ জুলাই) বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপের সঙ্গে সংলাপে সিইসি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। ওইদিন তিনি বলেন, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের প্রস্তাবটি সুন্দর একটি প্রস্তাব। প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আরও কথা বলা দরবার। রাজনীতিবিদরাও দেখবেন এটা দেশের জন্য উপযোগী কি না। মানুষের সেন্টিমেন্টের উপযোগী কী না? এটা আপনাদের (রাজনীতিবিদ) রাজনৈতিক দায়িত্ব। দায়িত্বটা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেবেন না। দেশে জাতীয় নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব না থাকলেও সংরক্ষিত মহিলা আসনে এ পদ্ধতিতে দলগুলো তাদের প্রতিনিধিত্ব পায়।

সংসদ নির্বাচনে কোনও দল যতগুলো আসন পায় তার আনুপাতিক হারে সংরক্ষিত ৫০টি আসনের মধ্যে তাদের অংশের প্রতিনিধিত্ব পায়। যেমন— চলতি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের পর আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে আওয়ামী লীগ ৪৩টি, জাতীয় পার্টি চারটি, বিএনপি, ওয়ার্কার্স পার্টি ও স্বতন্ত্র জোট একটি করে সংরক্ষিত আসন পেয়েছে।

এদিকে সংলাপে অংশ নিয়ে গণফোরাম, জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশ ও খেলাফত আন্দোলন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা বা নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি তুলেছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল ও তরিকত ফেডারেশনসহ অন্তত ১৩টি দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনের সময় স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মন্ত্রণালয় ইসির অধীনে ন্যস্ত করার প্রস্তাব করেছে। তিনটি দল সংবিধান অনুযায়ী বিদ্যমান সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছে। আর ৬টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের সময় সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। অন্তত আটটি রাজনৈতিক দল জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের বিরোধিতা করেছে। তারা ইসির নিজস্ব জনবল থেকেই রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের প্রস্তাব করেছে।

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে ১৩টি রাজনৈতিক দল। ৭টি দল অবশ্য ইভিএমের ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে। কেউ কেউ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ইভিএম চালু করতে বলেছেন। তবে ইভিএমের বিপক্ষে সরাসরি মত দিয়েছে বাংলাদেশ কংগ্রেস, ইসলামী ফ্রন্ট, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, খেলাফত মজলিস, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, খেলাফত আন্দোলন, মুসলিম লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম, জাকের পার্টি ও জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশ।

বিএনপি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) সংলাপে অংশ নেয়নি। এদিকে ক্ষমতাসীন জোটের শরিক জাতীয় পার্টি-জেপি ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ সংলাপের সময় পরিবর্তনে ইসির কাছে আবেদন করেছেন।

রবিবার ৩১ জুলাই ইসির সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংলাপ হবে। জাতীয় পার্টির সঙ্গে সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে ইসির সংলাপ। সংলাপে দলটির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি সংলাপে অংশ নেবেন। অন্যরা হলেন— জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, ফখরুল ইমাম, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূইয়া, লিয়াকত হোসেন খোকা, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন ভূইয়া, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু।

বিকাল ৩টায় দলের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ইসির সংলাপে অংশ নেবে আওয়ামী লীগ। অন্যরা হলেন— উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, কাজী জাফর উল্লাহ, ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপপু, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক বেগম শামসুন নাহার।

দলটির প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন— সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, কাজী জাফরুল্লাহ, আবদুর রাজ্জাক, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য শাহাবুদ্দিন চুপ্পু, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপা ও উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর