রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫:১৩ পূর্বাহ্ন

সংবিধানের মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয়গুলো বিলোপের দাবি: সংসদে ইনু

ভয়েস বাংলা রিপোর্ট / ১৪ বার
আপডেট : শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৩

সংবিধানের চার মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয়গুলো বিলোপ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জাতিগত বিভ্রান্তি দূরীকরণ এবং ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সংসদ সদস্যদের ক্ষমতায়নে সংবিধান পর্যালোচনায় সংসদীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান করে তিনি সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে এই সংবিধান পর্যালোচনা কমিটি গঠনের কথা বলেন।

শনিবার (৮ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সংসদে আনা সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ প্রস্তাব করেন। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার (৭ এপ্রির) ১৪৭ বিধির এই সাধারণ প্রস্তাবটি সংসদে তুলেছেন।

বিএনপি-জামাতের কঠোর সমালোচনা করে ইনু বলেন, ‘নষ্ট রাজনীতির ধারক-বাহক বিএনপি ও জামায়াত তথাকথিত ২৭ দফা ও ১০ দফা দিয়ে সংবিধান খোলনলচে বদলে দেওয়ার হুংকার ছেড়েছে। সংবিধানটাকেই বাতিল করার কথা বলছে।

তিনি বলে, ‘বিএনপি পঁচাত্তরের পর যেসব অপরাধ করেছে, এখনও তার পক্ষে সাফাই গাইছে। বিএনপি আসলে মুখে বাংলাদেশ অন্তরে পাকিস্তান বলে জপ করছে। বিএনপি আসলে বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে পাকিস্তানের বদলি খেলোয়ার, প্রক্সি প্লেয়ার। বিএনপি সংবিধান খেয়ে ফেলতে চায়। রাজাকারদের রাজনীতির মধ্যে আবার ফিরিয়ে আনতে চায়। তারা সাংবিধানিক ধারা বানচাল করতে চায়। অসাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কোনও মাঝামাঝি রাস্তা নয়; বিএনপিকে রুখেই দিতে হবে, রাজনীতির মাঠ থেকে বিতাড়িত করতে হবে।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে এসে স্বার্বভৌম সরকার গঠনে বেশি গুরুত্ব দেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তার পরের ইতিহাস শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ইতিহাস, শেখ হাসিনার সাফল্যের ইতিহাস। তিনি সংসদীয় পদ্ধতি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন।’

১৪ দলীয় জোটের শরিক জাসদ সভাপতি বলেন, ‘শেখ হাসিনা সকল সমালোচনার মুখে ঐক্যের ঝাণ্ডা হাতে নিয়ে ১৪ দল ও মহাজোট গঠন করে ২০০৮ সালে মাইনাস ২ তত্ত্ব বাতিল করে দিয়ে বিপুল ভোটে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে নিয়ে ক্ষমতায় এনে সংবিধান সংশোধনে হাত দেন। ১৫তম সংশোধনী তারই ফসল। আজকে যে সংসদ দেখছেন, সেই সংসদের কার্যক্রম চলছে বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতির ভিত্তিতেই। বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতির ফেরত যাত্রায় ১৯৮০ থেকে আজ অবধি শেখ হাসিনা আমাদের কাণ্ডারি। দেশের অর্থনীতি চমৎকারভাবে এগোচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামরিক ও সাম্প্রদায়িকতার জঞ্জাল পরিষ্কার করার কাজ করার পাশাপাশি যুদ্ধপরাধীদের বিচারের কাজ চলছে। জঙ্গি দমনের ওপর বুলডেজার চলছে।

প্রধানমন্ত্রী দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ করার পরিকল্পনায় এগিয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে হাসানুল হক ইনু বলেন, এর জন্য প্রয়োজন সম্পূরক আইন-কানুন, আধুনিক প্রশাসন এবং আরও অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক সংসদীয় ব্যবস্থা। প্রশাসনের ওপর আরও নজরদারির ব্যবস্থা। আরও অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে রাজনীতির মাঠে যে প্রস্তাবগুলো আলোচনায় আছে সেগুলো আমলে নিয়ে বিচেনায় নিয়ে সংবিধান সংশোধন করার একটি সংসদীয় কমিটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করা উচিত।

ইনু বলেন, যে আলোচনাগুলো মাঠে আছে প্রচলিত নির্বাচন পদ্ধতির পাশাপাশি দলভিত্তিক সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি, শ্রেণি-পেশার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও স্থানীয় সরকারদের নিয়ে একটি উচ্চকক্ষ গঠন করার এবং অনাস্থা বিল ও অর্থবিল ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা বিল বাদ দিয়ে ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে এমপিদের আইন তৈরি আরও ক্ষমতা প্রদান, সংসদের স্থায়ী কমিটিতে উন্মুক্ত করা ও সকল স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা এবং সংবিধান ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা। সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা ব্যবস্থা, খাদ্য ব্যবস্থা ও সামাজিক নিরপত্তা ব্যবস্থা এবং ইন্টারনেট সার্বজনীন ব্যবহার অধিকার সংবিধানের মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে স্বীকৃতি দিয়ে বাস্তবায়ন করতে রাষ্ট্রকে বাধ্য করা। বিচারপতিদের নিয়োগ ও অভিশংসনের বিষয়টি আবার পর্যালোচনা করা। রাষ্ট্রের কোনও লিঙ্গ, ধর্ম, জাত-পাত নেই। স্বয়ং মহানবী (সা.) মদিনা সনদে কোনও বিসমিল্লাহ ব্যবহার করেননি, উনি কোনোদিনই ধর্মকে ব্যবহার করেননি।

সংবিধান পর্যালোচনায় সংসদীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব করে হাসানুল হক ইনু বলেন, সংবিধানের চার নীতি পুনর্জীবনের পরে এই সংঘর্ষিক অবস্থা (বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম) আমাদের বিব্রত করছে। সংবিধানের এই সাংঘর্ষিক অবস্থা থেকে রেহাই দেওয়ার জন্য সংবিধানের মূল কাঠামোর সঙ্গে যা যা সাংঘর্ষিক তা বিলোপ সাধন করার বিবেচনা করা। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জাতিগোষ্ঠী সম্পর্কে বিভ্রান্তি দূর করা ও তাদের আত্মপরিচয় আরও স্পষ্ট করা। এসব আলোচনার বিষয়গুলো নিয়ে আমি সংবিধান পর্যালোচনার করার জন্য সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান করে সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল সকল রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে সংবিধান পর্যালোচনার জন্য বিশেষ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করছি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর