শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৯:৪১ অপরাহ্ন

ষড়যন্ত্রকারীরা প্রধানমন্ত্রীর ওপর তালেবানি কায়দায় হামলা চালাতে চেয়েছিল

রিপোর্টার / ১৭৮ বার
আপডেট : সোমবার, ৯ আগস্ট, ২০২১

২০০০ সালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ষড়যন্ত্রকারীরা তালেবানি কায়দায় হামলা চালাতে চেয়েছিল বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত রায়ে বলেছেন, ‘ষড়যন্ত্রকারী সব আসামি তালেবানি কায়দায় এ ধরনের ঘটনা সংঘটনের জন্য মুফতি হান্নানসহ অন্যান্য আসামিদের দায়িত্ব দিয়েছিল।’

সোমবার (৯ আগস্ট) বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের স্বাক্ষরের পর ৮৬ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। রায়টি বাংলা ভাষায় প্রকাশ করেন আদালত।

রায়ের পর্যবেক্ষণে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া বোমা দুটির বিষয়ে আদালত বলেছেন, উদ্ধারকৃত বোমা দু’টি এতই শক্তিশালী ছিল যে, এ দু’টির একটিও বিস্ফোরিত হলে এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধ এলাকা পর্যন্ত বিধ্বস্ত হয়ে যেত এবং সংশ্লিষ্ট এলাকাটি মানুষের মৃত্যুপুরিতে পরিণত হতো। শুধু তাই নয়, এ বোমা বিস্ফোরিত হলে ঘটনাস্থলসহ উক্ত এলাকায় ৯ ফুট ৫ ইঞ্চি মাটির গভীরে আঘাত হানতো এবং মাটি হতে উক্ত ধ্বংসস্তূপ ৩৪ ফুট উপরের দিকে ধাবিত হতো।’

‘এরূপ ধ্বংসলীলা প্রায়ই আফগানিস্তানে সংঘটিত হয়ে থাকে। যেখানে গিয়ে মুফতি হান্নানসহ ষড়যন্ত্রকারীদের কেউ কেউ প্রশিক্ষণ নিয়েছিল এবং তালেবানদের পক্ষে যুদ্ধ করেছিল। সে জন্যই ষড়যন্ত্রকারী সব আসামি তালেবানি কায়দায় এ ধরনের ঘটনা সংঘটনের জন্য মুফতি হান্নানসহ অন্যান্য আসামিদের দায়িত্ব দিয়েছিল। উদ্ধারকৃত বোমা দু’টি পরীক্ষা করেছে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষজ্ঞ দক্ষ দল। এ দু’টি বোমার যেকোনও একটি বিস্ফোরিত হলে ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট এলাকায় স্থাপিত সরকারি- বেসরকারি বাসভবনসহ স্কুল-কলেজ ও বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ আগত জনসমাগমের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হতো, যা বিশেষজ্ঞ দলের রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে। এতে করে মহান স্বাধীনতার স্থপতি এবং বাংলাদেশের রূপকার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ যারা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোররাতে বিভীষিকাময় ঘটনার মধ্য দিয়ে শহীদ হওয়ার কারণে এ সার্বভৌম দেশটি যতটুকু পিছিয়ে গিয়েছিল ঠিক আবারও অনুরূপ একটি ঘটনার অবতারণা হতো। আদতে এ দেশটি দুর্ভাগা এ কারণে যে, জাতির পিতাকে সপরিবারে বিনা দোষে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছিল ঘাতকের দল। দুনিয়ার কোনও সভ্য দেশে এভাবে সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার ঘটনা বিরল। কাজেই এ মামলায় সংঘটিত ঘটনাকে কোনোভাবেই হালকা করে দেখার অবকাশ নেই’— বলা হয় পর্যবেক্ষণে।

হাইকোর্ট বলেন, ‘এখন প্রশ্ন হচ্ছে এ ধরনের ভয়াবহ কর্মকাণ্ড আসামিরা করতে চেয়েছিল কেন? সাক্ষীদের সাক্ষ্য এবং আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পূর্বে উল্লেখিত কতিপয় আসামি ঢাকাস্থ মোহাম্মদপুর এবং মুগদাপাড়া অফিসে মিটিং করেছিল। ওই মিটিংয়ে তারা মতামত প্রকাশ করে যে, “আওয়ামী লীগ সরকার ইসলাম বিদ্বেষী এবং ভারতের দালাল হিসেবে ইসলাম ধ্বংসের কাজে লিপ্ত।” সুতরাং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সরকারকে উৎখাত করতে হবে হত্যার মধ্য দিয়ে। কিন্তু কী ধরনের ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ তৎকালীন সরকার করেছিল বা ভারতের সঙ্গে কী ধরনের আঁতাত করেছিল, এরূপ কোনও বক্তব্য দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসামিরা উল্লেখ করেনি।’

‘আসামিদের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিগুলো গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, একটি অবাস্তব এবং ভ্রান্ত ধারণার ওপর ভিত্তি করে তাদের এ ধরনের মানসিকতা সৃষ্টি হয়েছিল। আবার দেখা যাচ্ছে, ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে কেউ কেউ আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে গিয়ে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনে যোগদান করে নানা ধরনের জঙ্গি কার্যকলাপের ট্রেনিং নিয়েছিল। এ ধরনের জঙ্গি তৎপরতার আড়ালে যাদের বিচরণ ছিল, তাদের সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাদের তদন্তের আরও গভীরে যাওয়া উচিত ছিল। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের এ মামলা তদন্তে আরও অধিকতর মনোযোগী হওয়ার দরকার ছিল। অবস্থা যা হোক না কেন, আসামিরা ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারনার মধ্য দিয়ে তৎকালীন সরকারকে দোষারোপ করেছিল। অথচ ইসলামের মূল্যবোধ এবং হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর আদর্শিক দিকগুলো এ দেশের মুসলিম বাঙালিদের মধ্যে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য এবং আগত বংশধরদের এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন ইসলামিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শুধু তাই নয় তিনি অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষের ধর্মের ব্যাপারেও খুবই সজাগ ছিলেন। সে অগ্রযাত্রা পরবর্তীকালে আরও জোরালোভাবে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে’—বলেন হাইকোর্ট।

পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘আসামিরা যাদের ইসলামবিরোধী বা বিদ্বেষী হিসেবে চিহ্নিত করতে চেয়েছিল তারা ইসলামকে সু-প্রতিষ্ঠিত করার কাজে লিপ্ত। ইসলামের মূল্যবোধ সম্পর্কে আসামিদের ভ্রান্ত ধারণা এবং তাদের এহেন কর্মে পুরো দেশ ও সমাজ অশান্তিতে বিরাজমান ছিল। ইসলাম ভালো কাজের প্রশংসা করার জন্য বার বার তাগিদ দিয়েছে। “দেশে মহিলা নেত্রী তা ইসলাম সম্মত নয়, তারা তা প্রতিহত করবে।” আসামিদের এ ধরনের ধ্যান-ধারণা এবং শক্তি প্রদর্শন ইসলাম কোনোভাবেই সমর্থন করে না। কারণ ইসলাম শান্তির ধর্ম।’

আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারী আসামিরা মূলত যাকে হত্যা করার জন্য এ ঘটনার অবতারণা করেছিল, তিনি তখন দেশের বৈধ সরকার প্রধান হিসেবে ক্ষমতায় ছিলেন। একটি বৈধ সরকার প্রধানকে তার সহযোগীদেরসহ হত্যার প্রচেষ্টা এবং তা বাস্তবায়ন করা কতখানি দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর তা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর এ দেশের নিরীহ স্বাধীনতাকামী জনগণ উপলব্ধি করেছিল। আসামিদের এ ধরনের ভ্রান্ত চিন্তা ও ধারণা, এ জাতির জন্য একটি কলঙ্কময় অধ্যায়। দেশের মানুষের কল্যাণের স্বার্থে জঙ্গিবাদ এবং জঙ্গি তৎপরতা চিরতরে এ দেশ থেকে বিলীন হওয়া প্রয়োজন।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর