রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:০০ পূর্বাহ্ন

শাপলা চত্বরে তাণ্ডবের স্মৃতি ভুলতে চায় হেফাজত

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৬৮ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৫ মে, ২০২২

হেফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকায় মতিঝিলের শাপলা চত্বরে বিতর্কিত ১৩ দফা দাবিতে অবরোধ কর্মসূচি পালনের নামে দিনব্যাপী তাণ্ডব চালায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, সেদিন রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের ২২ কর্মীসহ ৩৯ জন নিহত হয়েছিল। অবশ্য এদিন ‘শতশত হেফাজত কর্মী নিহত হয়েছে’ দাবি করলেও এর স্বপক্ষে কোনও তথ্য প্রমাণ আজ পর্যন্ত উপস্থাপন করতে পারেনি সংগঠনটি।

সেই দিনটি স্মরণে ২০১৩ সালের পর কয়েক বছর ‘স্মরণ সভা’, ‘দোয়া মাহফিল’সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে এই সংগঠন। তবে বর্তমানে হেফাজতের চেষ্টা ৫ মে শাপলা চত্বরে তাণ্ডবের সেই স্মৃতি ভুলে যেতে। এই দিনটি স্মরণে কোনও কর্মসূচিও রাখে না তারা।

৯ বছর আগে রুদ্ধদ্বার এক বৈঠকের লিখিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিল হেফাজতে ইসলাম। ২০১৩ সালেন ৪ মে লালবাগ জামিয়া কোরয়ানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় সংগঠনের শীর্ষ নেতারা ওই রূদ্ধদ্বার বৈঠকটি করেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, যে কোনও মূল্যে ঢাকা ঘেরাও করা হবে এবং অবরোধ পরবর্তী সমাবেশ শেষে অবস্থান কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। সংগঠনটি যদিও সেদিন দোয়া মাহফিল করতে শাপলা চত্বরে আসার কথা বলেছিল। হেফাজতের প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীর নির্দেশে শাপলা চত্বরেই অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অবস্থানের ঘোষণা দেন হেফাজতের প্রয়াত মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী।

শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশ ছবি: সংগৃহীত২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশ। ছবি: সংগৃহীত

অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাই হেফাজতের নেতৃত্বে। এ সংগঠনের প্রয়াত আমির মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে সামনে রেখে এই আন্দোলন শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে তা রাজনৈতিক আন্দোলনের রূপ নেয়। ৫ মে রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতা ও নাশকতা হয়েছিল। সেদিন মতিঝিল এলাকায় প্রায় ৮ ঘণ্টা তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাতে বিজিবি, ব়্যাব ও পুলিশের যৌথ বাহিনী মতিঝিলকে ঘিরে অভিযান চালালে পিছু হটে তারা। ৮৩ মামলায় ৩ হাজার ৪১৬ জনের নাম উল্লেখসহ ৮৪ হাজার ৯৭৬ জনকে আসামি করা হয় বলে পুলিশ সদর দফতর।

২০১৩ সালের পর কয়েক বছর ৫ মে দোয়া মাহফিল করেছিল হেফাজত। ধীরে ধীরে এই দিবস স্মরণ ও ৫ মে নিয়ে আলোচনা থেকে সরে আসেন হেফাজত নেতারা। যদিও পরবর্তী সময়ে কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি, সাধারণ পাঠ্যসূচি, সুপ্রিমকোর্টের সামনের ভাস্কর্য সরানোর দাবিতে সরব হয় হেফাজত।

হেফাজত-৫-মে-২০১৩-ছবি-নাসিরুল-ইসলাম২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের সমাবেশে তাণ্ডব। ছবি: নাসিরুল ইসলাম

কওমি মাদ্রাসা সনদের স্বীকৃতি আদায়সহ নানা কারণে হেফাজতের সঙ্গে সরকারের সখ্যতা হয়। তবে সর্বশেষ ২০২১ সালে ২৭ ও ২৮ মার্চ দু’দিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমন বিরোধিতা করে বিক্ষোভ ও হরতালে সহিংস হয়ে ওঠে হেফাজত। বিভিন্ন কর্মসূচিতে ১৭ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়। এরপর হেফাজতের পুরাতন কমিটি বাতিল করা হয়। যদিও সারা দেশব্যাপী জেলা, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে হেফাজতে ইসলামের কমিটি গঠন করার কথা বললেও কোন অগ্রগতি নেই।

২০১৩ সালের হেফাজতের  সহিংসতার পুড়ে যাওয়া বই২০১৩ সালের হেফাজতের সহিংসতার পুড়ে যাওয়া বই

হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী বলেন, হেফাজত ৫ মে ভুলে যায়নি। তবে এবার রোজা, ঈদ সব মিলিয়ে কর্মসূচির পালনের পরিস্থিতি নেই। এছাড়া মহাসচিব ওমরা পালনে সৌদি আরবে আছেন, অনেক নেতা জেলে আছেন, জেলা পর্যায়ে কমিটি নেই। মহাসচিব দেশে ফেরার পর আলাপ আলোচনা সামনের দিনের কর্মকাণ্ড ঠিক হবে। তবে তৃণমুলের অনেক নেতাকর্মী ৫ মে স্মরণে কোনও কর্মসূচি না থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হেফাজতের এক নেতা বলেন, যে কর্মীদের রক্তের বিনিময়ে হেফাজতের আন্দোলন, তাদের রক্তের সাথে বেইমানি করার ফল ভালো হবে না। যারা ক্ষমতার কাছাকাছি যেতে চায়, তারাই হেফাজতকে ব্যবহার করেছেন, তারাই এখন ৫ মে’র স্মৃতি মুছে ফেলতে চায়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর