রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন

শপথ নিলেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৩৬২ বার
আপডেট : শুক্রবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১

দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। শুক্রবার বিকাল ৪টায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নতুন প্রধান বিচারপতিকে শপথবাক্য পাঠ করান। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের এই বিচারককে সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের স্থলাভিষিক্ত করে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বঙ্গভবনের দরবার হলে এই শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

শুক্রবার শপথ অনুষ্ঠান শুরুর কিছুক্ষণ আগে দরবার হলে প্রবেশ করেন নতুন প্রধান বিচারপতি। তার কিছুক্ষণ পর রাষ্ট্রপ্রধান আবদুল হামিদ ও সরকার প্রধান শেখ হাসিনা একসঙ্গে সেখানে প্রবেশ করেন। রাষ্ট্রপতি শপথ অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়ালে নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। শপথ পড়ার পর নিয়ম অনুযায়ী শপথনামায় সই করেন দেশের নতুন প্রধান বিচারপতি। শপথ শেষে রাষ্ট্রপতি শুভেচ্ছা জানান নতুন প্রধান বিচারপতিকে।

সাধারণত আইনাঙ্গনের সংশ্লিষ্টরা এবং সরকারের মন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত থাকেন। তবে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে প্রধান বিচারপতির শপথ অনুষ্ঠান সীমিত পরিসরে আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের ৬০ জনের জন্য আসন রাখা হয়েছিল। শপথ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া তিন বাহিনী প্রধান, অ্যাটর্নি জেনারেল, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, উচ্চ আদালতের দুই বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন।

হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর জন্ম ১৯৫৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। তিনি ১৯৮১ সালে ঢাকা জজ কোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে আইন পেশায় যোগ দেন। ১৯৮৩ সালে হাই কোর্ট বিভাগে এবং ১৯৯৯ সালে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন তিনি। ২০০৯ সালে হাই কোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। ২০১৩ সালে আপিল বিভাগের বিচারক হন।

প্রধানবিচারপতির-শপথপ্রধান বিচারপতির শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসহ অতিথিরা

সংবিধানের ৯৬ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা ৬৭ বছর পর্যন্ত পদে থাকতে পারেন। সেক্ষেত্রে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী দুই বছর প্রধান বিচারপতির আসনে অধিষ্ঠিত থাকছেন। তিনি ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

শপথে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হয়ে সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ (বা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা) করছি যে, আমি আইন অনুযায়ী ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে আমার পদের কর্তব্য পালন করবো; আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করবো; আমি বাংলাদেশের সংবিধান ও আইনের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করবো; এবং আমি ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হয়ে সবার প্রতি আইন-অনুযায়ী যথাবিহিত আচরণ করবো।

আপিল বিভাগে দুই ভাই

বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীবিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে এই প্রথম দুই ভাই বিচার অঙ্গনের সর্বোচ্চ পদে আসীন হলেন। এরমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে বিগত পাঁচ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এরপর ইতিহাস গড়লেন তারই আপন বড় ভাই বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী। তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) শপথ নিলেন। ফলে এখন থেকে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে দুই ভাই একসঙ্গে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বিষয়টিকে বিচার বিভাগের জন্য অনন্য নজির বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে সদ্য নিযুক্ত আপিল বিভাগের তিন বিচারপতিকে শপথবাক্য পাঠ করানো হয়। এ সময় আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের সব বিচারপতি উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে শপথবাক্য পাঠ শেষে নবনিযুক্ত বিচারপতিদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘আজকে বিচার বিভাগের জন্য স্মরণীয় দিন। সহোদর দুই ভাই বিচার অঙ্গনের সর্বোচ্চ আসনে আসীন হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে লালিত পরিবার থেকে দুই ভাই আপিল বিভাগের বিচারপতি হয়েছেন।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ‘এটা অবশ্যই গৌরবের যে এই প্রথম দুই ভাই একসঙ্গে আপিল বিভাগের বিচারপতি হয়েছেন। ইতিহাসে এটাই প্রথম।’
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী কুষ্টিয়ার সন্তান। তিনি জেলার খোকসা উপজেলার রমানাথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আব্দুল গফুর মোল্লা। তিনি ১৯৭২ সালে খোকসা জানিপুর পাইলট হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭৪ সালে সাতক্ষীরার সরকারি পিসি কলেজ থেকে আইএসসি, পরে একই কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। তিনি মাস্টার্স করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে। এলএলবি ধানমন্ডি ল কলেজ থেকে। ১৯৮১ সালে ঢাকা জজ কোর্টে আইন পেশায় যোগদান করেন। ১৯৮৩ সালে হাইকোর্ট বিভাগে এবং ১৯৯৮ সালে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন তিনি।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০০১ সালে হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি, ২০০৯ সালে হাইকোর্ট ডিভিশনে স্থায়ী বিচারপতি এবং ২০১৩ সালের ২৮ মার্চ আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
অন্যদিকে বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী ১৯৫৪ সালের ২৯ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ও এলএলবি পাস করে ১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়া বার অ্যাসোসিয়েশনে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৮০ সালে তিনি জুডিশিয়াল সার্ভিসে মুন্সেফ হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান। ২০০৯ সালে তিনি হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১১ সালে তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হন। এরপর মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) শপথের মাধ্যমে তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে আসীন হলেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর