বিশ্ব সম্প্রদায়ের ব্যাপক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সফলতা না আসায় হতাশা ব্যক্ত করে সম্মিলিতভাবে রোহিঙ্গা রেজুলেশন বাস্তবায়নের আহবান জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা পুনরুল্লেখ করে বলেছেন, বাংলাদেশের মত ছোট আয়তনের দেশে বিশাল জনসংখ্যাসহ অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তার ওপর মিয়ানমার থেকে আগত ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদান করা কোনভাবেই সম্ভব নয়।

বৃহষ্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে আয়োজিত রোহিঙ্গা বিষয়ক একটি উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা সভায় তিনি এই আহবান জানান। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত। সভায় কানাডা, সিঙ্গাপুর, মিশর, গাম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সেনেগাল, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, ব্রুনেই দারুসসালাম, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জিবুতি,  যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি এবং অন্যান্য পর্যায়ের কূটনৈতিক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। জাতিসংঘে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ওআইসির স্থায়ী পর্যবেক্ষণ মিশনের রাষ্ট্রদূত পর্যায়ের প্রতিনিধিরাও সভায় অংশগ্রহণ করেন।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের পরিস্থিতি বিষয়ক একটি রেজুল্যুশন গৃহীত হয়। এতে মিয়ানমারের বিদ্যমান রাজনৈতিক সমস্যাসহ রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের বিষয়টিও বিশেষভাবে প্রাধান্য পায়।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিগত বছরগুলোতে নিয়মিতভাবে রোহিঙ্গা বিষয়ক রেজুলেশন পাস হয়। নিরাপত্তা পরিষদ এবং সাধারণ পরিষদের রোহিঙ্গা বিষয়ক এই রেজুলেশনগুলোকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জোরালো আহ্বান জানানোই ছিল এই সভার মূল উদ্দেশ্য।

নিরাপত্তা পরিষদে সম্প্রতি গৃহীত রেজুলেশনের প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্র মন্ত্রী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই ও স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য তিনি উপস্থিত সকলের প্রতি আহ্বান জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি আঞ্চলিক সংস্থা আসিয়ান -এর নেতৃত্বের ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেন।

সভায় অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিরা মিয়ানমার থেকে আগত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় এবং সকল ধরণের মানবিক সহযোগিতা প্রদান করার জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রী নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের পররাষ্ট্র বিষয়ক সাব-কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য গ্রেগরি মিক্‌স এর সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করেন। এই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যেকার দ্বি-পাক্ষিক বিষয়াবলী নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়। বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান উপস্থিত ছিলেন।