রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:১০ পূর্বাহ্ন

যাত্রী সংকটে কম ভাড়া নিচ্ছেন লঞ্চ মালিকরা

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৪৩ বার
আপডেট : শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০২২

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বরিশাল-ঢাকা নৌপথে চলাচলকারী লঞ্চ ভাড়া ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে সমন্বয় করা হয়েছিল। তবে পদ্মা সেতুর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে যাত্রী টানতে গিয়ে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির নেতারা। একইসঙ্গে আগে গন্তব্যে পৌঁছাতে প্রতিযোগিতার অবসান হয়েছে। এখন থেকে ঘাট দিয়ে যার পেছনে যে লঞ্চ ছাড়বে সে লঞ্চ তার পেছন পেছন চালিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে লঞ্চ মালিক সমিতি।

মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সরকারি-বেসরকারি লঞ্চ ভাড়া ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে সমন্বয় করা হয়েছিল। নতুন ভাড়া অনুযায়ী, প্রথম ১০০ কিলোমিটারের জন্য প্রতি কিলোমিটারে জনপ্রতি ভাড়া বেড়েছে ৭০ পয়সা এবং পরবর্তী দূরত্বের জন্য প্রতি কিলোমিটারে ৬০ পয়সা। একইসঙ্গে নৌযানে সর্বনিম্ন ভাড়া ৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের টিএ শাখা।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বরিশাল-ঢাকা নৌপথে লঞ্চের ডেকের ভাড়া ৪৫৭, সিঙ্গেল কেবিন এক হাজার ৮২৮, ডাবল কেবিন তিন হাজার ৬৫৬ এবং ভিআইপি কেবিন ছয় থেকে সাত হাজার টাকার মধ্যে নির্ধারণ করা হয়। তবে লঞ্চ মালিক সমিতি একজোট হয়ে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়ায় যাত্রী টানছে। যাত্রী সংকটে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালিক সমিতি। বর্তমানে ডেকের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৪০০, সিঙ্গেল কেবিন এক হাজার ২০০, ডাবল কেবিন দুই হাজার ২০০ এবং ভিআইপি কেবিন চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। পাশাপাশি যাত্রীসেবা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন লঞ্চ মালিকরা।

lunch

এখন থেকে ঘাট দিয়ে যার পেছনে যে লঞ্চ ছাড়বে সে লঞ্চ তার পেছন পেছন চালিয়ে গন্তব্যে যাবে

বরিশাল-ঢাকা নৌপথে চলাচলকারী কীর্তনখোলা লঞ্চের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌস। একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির পরিচালক। লঞ্চ ভাড়া কম নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‌‘নতুনের প্রতি মানুষের আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি থাকে। বিশেষ করে পদ্মা সেতুর প্রতি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। এ কারণে সড়কপথে মানুষের যাতায়াত বেড়েছে। তার প্রভাব পড়েছে লঞ্চে। কমেছে যাত্রী। তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’র মতো অবস্থা হয়েছে আমাদের। তারপরও সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে লঞ্চে যাত্রী টানার চেষ্টা করছি আমরা। এজন্য সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কমে যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিটি লঞ্চ কম ভাড়া নেবে। এতে যাত্রী বাড়বে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, বরিশাল-ঢাকা নৌপথে চলাচলকারী লঞ্চগুলো পাঁচ তারকা হোটেলের মতো। এখানে একটি পরিবার এক জায়গায় বসে-ঘুমিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারে। এজন্য নৌপথ যাত্রীদের পছন্দের। আমার বিশ্বাস, পদ্মা সেতু দেখা হয়ে গেলে যাত্রীরা আবারও বিলাসবহুল লঞ্চগুলো দিয়ে যাতায়াত করবেন।

মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌস বলেন, নৌপথে দুর্ঘটনা ঘটে না বললেই চলে। তারপরও দুর্ঘটনারোধে আগে লঞ্চগুলোর মধ্যে যে প্রতিযোগিতা হতো, তা এখন থেকে বন্ধ করা হয়েছে। আমরা মালিক সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ঘাট থেকে যার পরে যে লঞ্চ ছাড়বে সেই লঞ্চ তার পেছনে পেছনে যাবে। কোনও ধরনের প্রতিযোগিতা করা যাবে না। এতে দুর্ঘটনা ঘটবে না।

সুন্দরবন নেভিগেশনের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু। একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি। তিনি বলেন, তিন কারণে যাত্রীরা লঞ্চে যাতায়াত করবে। কারণগুলো হলো যাতায়াত আরামদায়ক, সাশ্রয় এবং নিরাপদ। এখন কিন্তু আমরা সরকার নির্ধারিত ভাড়া নিচ্ছি না। শুধুমাত্র আগের চেয়ে ডেকের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তাও সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৫৭ টাকা কম নিচ্ছি আমরা। এমনকি সিঙ্গেল, ডাবল, সোফা এবং ভিআইপি কেবিনের ভাড়া আগেরটাই নিচ্ছি।

রিন্টু বলেন, মানুষকে সেবা দিতেই আমরা এ ব্যবসায় যুক্ত হয়েছি। ব্যবসার চেয়ে সেবার দিকটায় আমরা গুরুত্ব দিই। পদ্মা সেতু হওয়ায় এখন প্রতিযোগিতা বেড়েছে। যাত্রী কমেছে। প্রতিযোগিতার ফলটা ভোগ করছেন যাত্রীরা।

lanch2

লঞ্চ মালিক সমিতি একজোট হয়ে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়ায় যাত্রী টানছে

ঈদ কিংবা বিশেষ দিনে যাত্রীদের জিম্মি করে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ বিষয়ে রিন্টু বলেন, যাত্রীদের জিম্মি করা হয় না। এমন অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিই। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার বেশি কোনও লঞ্চ মালিক নেন না। এখন কম নিলেও ঈদ ও বিশেষ দিনে সরকার নির্ধারিত ভাড়া নেওয়া হয়। ওই সময় নির্ধারিত ভাড়া নেওয়ার কারণ হলো ঢাকা থেকে যাত্রী আনতে বরিশাল ঘাট থেকে যাত্রী ছাড়াই লঞ্চগুলোকে ছাড়তে হয়। এজন্য খরচ বেড়ে যায়। সমন্বয় করতেই ওই সময় সরকার নির্ধারিত ভাড়া নেওয়া হয়। তখন যাত্রীরা মনে করেন ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে। আসলে ভাড়া বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই।

সুন্দরবন লঞ্চের ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, ডেক ছাড়া কোনও ভাড়া বাড়েনি। আগের ভাড়ায় যাত্রী টানছি আমরা। শুধুমাত্র ডেকে আগে ৩০০ টাকা নেওয়া হতো। এখন ৪০০ টাকা নেওয়া হয়। সুরভী-৭ লঞ্চের ডেকের যাত্রী বানারীপাড়া উপজেলার বাসিন্দা তাজেম আলী বলেন, আগে ৩০০ টাকা ডেকের ভাড়া দিতাম। বুধবার ৪০০ টাকা দিয়েছি।

মানামী লঞ্চের ম্যানেজার রিপন হোসেন বলেন, ‘আমাদের লঞ্চে যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া হয়। এজন্য কেবিন বয় থেকে শুরু করে সব স্টাফকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের ভোটের মাধ্যমে ভালো সেবা দেওয়া কেবিন বয়কে পুরস্কৃত করা হয়। পদ্মা সেতুর চালুর পর সেবার মান আরও বেড়েছে। বিশেষ করে ডেকের যাত্রীদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হয়। অসুস্থ যাত্রীদের হুইল চেয়ারে উঠানো থেকে শুরু করে লঞ্চে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। বিনোদনের জন্য টিভি, মায়েদের জন্য ফিডিং কক্ষ, নামাজের স্থান এবং ঘণ্টায় ঘণ্টায় ওয়াশরুম পরিষ্কার করা হয়। এমনকি যাত্রীদের সঙ্গে স্টাফদের ব্যবহারের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কেবিন যাত্রীদের জন্য ফ্রি চা ও কফির ব্যবস্থা রয়েছে আমাদের লঞ্চে।’

সুন্দরবন-১১ লঞ্চের যাত্রী আলী নেওয়াজ বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় লঞ্চের কেবিনের ভাড়া দ্বিগুণ হওয়ার কথা শুনেছি। কিন্তু বুধবার ডাবল কেবিনের টিকিট কিনেছি দুই হাজার ২০০ টাকায়। আগেও একই ভাড়ায় ঢাকা থেকে বরিশালে এসেছি। তবে লঞ্চ ছাড়ার আগ মুহূর্তে দেড় হাজার টাকাতেও কেবিন পাওয়া যায়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর