রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫:১৩ পূর্বাহ্ন

মেট্রোরেল চালানো স্বপ্নের মতো; মরিয়ম ও আসমা

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৪১ বার
আপডেট : সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও রুটে চালু হবে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও ধারণা করা যাচ্ছে, ১৬ ডিসেম্বর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে মেট্রোরেল। এমনও হতে পারে, উদ্বোধনের দিন ট্রেন চলছে এক নারীর হাত ধরে। কারণ, এই প্রকল্পে ট্রেন অপারেটর ও স্টেশন কন্ট্রোলার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন দুই নারী। তাদের দুজনকে উভয় কাজেই পারদর্শী করে তুলতে দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ। মেট্রোরেল চালানোকে একটি স্বপ্নের সঙ্গে তুলনা করেছেন এই দুই নারী। বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে তারা তাদের অনুভূতির কথা জানান।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ট্রেন অপারেটর পদে ২৫ জনের সঙ্গে নিয়োগ পেয়েছেন লক্ষ্মীপুরের মরিয়ম আফিজা। স্টেশন থেকে ট্রেন পরিচালনায় যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে সমন্বয় করবেন স্টেশন কন্ট্রোলার। এই পদে ৩৪ জনের সঙ্গে নিয়োগ পেয়েছেন আসমা আক্তার। ট্রেন অপারেটর প্রয়োজন হলে স্টেশন কন্ট্রোলারের দায়িত্ব পালন করবেন। আবার স্টেশন কন্ট্রোলার প্রয়োজন হলে ট্রেন চালাবেন।

মরিয়ম আফিজা ও আসমা আকতার নিয়োগপত্র পাওয়ার পর চট্টগ্রামে বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে দুই মাসের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। নিয়োগের আগে তাদের লিখিত, মৌখিক ও মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ঢাকায় ফিরে আরও চার মাস প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণের জন্য তাদের ভারতের দিল্লিতে যাওয়ারও কথা আছে।

মরিয়ম

প্রশিক্ষকদের সঙ্গে মরিয়ম আফিজা

মরিয়ম আফিজা লেখাপড়া করেছেন ঢাকার অদূরে টঙ্গীতে একটি স্কুল ও কলেজে। এরপর নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত রসায়ন ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখার পর আবেদন করেন আফিজা। তিনি জানান, পদ্মা সেতু ও বঙ্গবন্ধু টানেলের পর আরেকটি স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। মেট্রোরেলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া আমার কাছে স্বপ্ন পূরণের মতো। তিনি বলেন, রেলওয়ের দুই মাসের ট্রেনিংয়ের পর চার মাসের আরেকটি ট্রেনিং করছি। ট্রেনিং চলবে অক্টোবর পর্যন্ত। আমার এখানে কাজ করা নিয়ে কোনও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়নি। কারণ, আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব সবাই ভালো সাপোর্ট দিয়েছেন আমাকে। বরং এখানে কাজের পরিবেশ অনেক ভালো। মেয়েরা তো সব সেক্টরেই আছে। যুদ্ধবিমান থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক বিমান চালানো কিংবা সাধারণ ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রেও মেয়েদের অবদান আছে। সুতরাং মেট্রোরেল আলাদা করে কঠিন কিছু না।

আসমা

স্বপ্নের মেট্রোরেলের সামনে আসমা আক্তার

আসমা আকতার তিতুমীর কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক করেন। স্টেশন কন্ট্রোলার পদে নিয়োগ পেয়েছেন ২০১৯ সালের ২১ আগস্ট। তিনি বলেন, বর্তমান যুগে নারীরা অনেক এগিয়ে আছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী, সংসদের স্পিকার একজন নারী, পুলিশ সুপার, সচিব আছেন নারী। সুতরাং মেট্রোরেলে নারীর অবস্থান ব্যতিক্রম কিছু নয়। সেই জায়গায় আমি নিজেকে আনতে পেরে আনন্দিত। শুরু থেকেই আমার পরিবার আমাকে যথেষ্ট সাপোর্ট দিয়েছে। তিনি বলেন, মেট্রোরেল বাংলাদেশে নতুন একটি প্রযুক্তি। সাধারণ ট্রেন থেকে এটি ভিন্ন। কারণ, এটির ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে হয়। অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টার থেকে এটি পরিচালনা করা হয়। ড্রাইভিং ক্যাবে অপারেটর থাকবে। এই যোগাযোগমাধ্যমে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পেরে আমি আনন্দিত। আমরা অপেক্ষায় আছি কবে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো মেট্রোরেল চালুর মধ্য দিয়ে।

মেট্রোরেলমেট্রোরেল

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, এমআরটি লাইন-৬ বা বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেলে ঘণ্টায় ৬০ হাজার এবং দিনে ৫ লাখ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। ৬টি কোচ সংবলিত প্রতিটি একমুখী মেট্রোরেলে প্রতিবারে ৩৮ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬টি স্টেশনে থেমে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩০৮ জন যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। মেট্রোরেলে অল্প সময়ে অধিক সংখ্যায় যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হয়। এতে ছোট ছোট যানবাহনের ব্যবহার ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে। ঢাকা মহানগরীর যাতায়াত ব্যবস্থায় ভিন্নমাত্রা ও গতি যোগ হবে। মহানগরবাসীর কর্মঘণ্টা সাশ্রয় হবে, যানজট বহুলাংশে হ্রাস পাবে। যানজট এবং এর প্রভাবে যে ক্ষতি হচ্ছে তা সাশ্রয় হবে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এমআরটি লাইন-৬ চালু হওয়ার পর মেট্রোরেল পরিচালনাকালে দৈনিক ট্রাভেল টাইম কস্ট বাবদ প্রায় ৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা এবং ভেহিক্যাল অপারেশন কস্ট বাবদ প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা সাশ্রয় হবে।

মেট্রোরেল

মেট্রোরেল

মেট্রোরেল প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা। প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের আগস্টে। প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুসারে এমআরটি লাইন ৬-এর সার্বিক অগ্রগতি ৮১ দশমিক ৭০ শতাংশ। প্রথম পর্যায়ে নির্ধারিত উত্তরা থেকে আগারগাঁও রুটে কাজের অগ্রগতি ৯৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ। দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্ধারিত আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৮১ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৮৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ। বাংলা ট্রিবিউন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর