রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন

মুশফিক-লিটনেই স্বপ্নের দিন

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ১২৫ বার
আপডেট : শুক্রবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২১

বিশ্বকাপ ব্যর্থতার জেরে বিস্তর সমালোচনা চলে দু’জনকে ঘিরেই। কেউ কেউতো মুশফিক-লিটনকে কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে চলে না বলে ট্যাগও লাগিয়ে দিয়েছেন। সমর্থকদের চাওয়া অবশ্য পূরণ করেছিলেন নির্বাচকরা। পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাদ পড়েন দু’জনেই। লিটনকে জাতীয় লিগ খেলতে পাঠালেও মুশফিককে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। আর সেই ‘বাতিল’ দুই ক্রিকেটারের ব্যাটেই চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন স্বপ্নের মতো পার করেছে বাংলাদেশ।

অথচ শুরুটা যেমন ছিল, তাতে স্বপ্নটাকে মনে হতে থাকে দুঃস্বপ্ন! টস হেরে বোলিং করা পাকিস্তানের পেসাররা তাণ্ডব চালাতে থাকেন শুরুতে। তাতে বাংলাদেশের টপ অর্ডারই ভেঙে পড়ে। দিনের প্রথম ঘণ্টায় ৪৯ রানে চার উইকেট হারানো বাংলাদেশ তখন কত রানে অলআউট হয়, সেই হিসেব-নিকেশ করতে থাকে। কিন্তু দৃশ্যপট পাল্টে যেতে সময় লাগেনি। পাক্কা ৫ ঘণ্টার কিছু বেশি সময় ক্রিজে কাটিয়ে ২০৪ রান তুলে অবিচ্ছিন্ন থেকেছেন মুশফিক-লিটন। তাদের দারুণ এই ইনিংসেই বিপর্যয় কাটিয়ে রানের পাহাড় গড়ার পথটা পেয়ে যায় বাংলাদেশ।

লিটন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে ১১৩ রানে অপরাজিত থাকলেও মুশফিক আছেন ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরির অপেক্ষায়। ৮২ রানে অপরাজিত আছেন অভিজ্ঞ ব্যাটার; আর ১১ রান করতে পারলে বাংলাদেশের হয়ে টেস্টের সবচেয়ে বেশি রানের মালিকও হয়ে যাবেন। সবমিলিয়ে মুশফিকের সামনে তাই নতুন কীর্তি গড়ার সুযোগ।

মুশফিকের কীর্তি গড়ার আগের দিন অবশ্য লিটন সব আলো নিজের করে নিয়েছেন। অফস্টাম্পের ওপর ফুললেন্থের বলটি মিডঅফে পুশ করে প্রান্ত বদলে ছোটেন লিটন। রান আউট থেকে বাঁচতে ঝাঁপও দিলেন। এমন ঝুঁকি নেওয়ার কারণ ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটা যে তখন ‘আসি আসি’ করছে। তাতে সফলও হয়েছেন। কোনও সমস্যা ছাড়া তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছে যান ডানাহাতি এই উইকেটকিপার ব্যাটার।

লিটন দাস।ব্যর্থতা ভুলে টেস্টের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন লিটন।ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি হওয়ায় গ্যালারিও তখন তাকে নিয়ে উন্মাদনায় মত্ত। কিন্তু লিটন যেন অতি উদযাপনে গেলেন না। উঠে দাঁড়িরে শুধু ড্রেসিংরুমের দিকে ব্যাট উঁচিয়ে সতীর্থদের অভিবাদনের জবাব দিয়েই শেষ করলেন তার দায়িত্ব। আড়ালে হয়তো এমন উদযাপনের কারণ থাকলেও থাকতে পারে!

গত কিছুদিন ধরে লিটনকে নিয়ে বিস্তর সমালোচনা ছিল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাজে পারফরম্যান্সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানারকম ট্রলের শিকার হচ্ছিলেন। বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজে লিটনের রান সংখ্যার ওপর পণ্যের দামে ডিসকাউন্ট ঘোষণা করতেও দেখা গেছে। এমন ট্রলে লিটনের স্ত্রী দেবশ্রী বিশ্বাস সঞ্চিতাও ক্ষেপে গিয়েছিলেন। সবকিছু মিলিয়ে ভীষণ হতাশ ছিলেন লিটনও। তাহলে কি ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিতে সমালোচকদের জবাবটা দিতে পেরেছেন লিটন?

অথচ টানা ব্যর্থতা আর সমালোচনার ছায়া একটুও পড়তে দেননি শুক্রবারের ইনিংসে। পাঁচমাস পর রঙিন পোশাক ছেড়ে সাদা পোশাক গায়ে দিয়েই পেয়ে গেছেন প্রথম সেঞ্চুরি। ৬৭ রানে একবার জীবন পেয়েছিলেন, কিন্তু পুরো সময়টাতেই পাকিস্তানি বোলারদের দাপটের সঙ্গে খেলেছেন।

শিষ্যর এমন ইনিংস দেখে ভীষণ খুশি পেস বোলিং কোচ অ্যাশলে প্রিন্সও, ‘বিশ্বকাপ নিয়ে কথা বলতে চাই না। টি-টোয়েন্টি আর টেস্টের ব্যাটিং অপ্রোচ সম্পূর্ণ আলাদা। এই ফরম্যাটে ভিন্ন মানসিকতা নিয়ে ব্যাটিং করতে হয়। লিটনের ব্যাটিং দেখলে যে কেউই বলতো লিটন কতটা ক্লাস ব্যাটার। আজকে সে নিজের সেরাটা দেখিয়েছে।’

লিটনের মতো মুশফিকের গল্পটাও প্রায় একই রকম। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বাংলাদেশের অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরে যাওয়া ম্যাচে সংবাদ সম্মেলনে এসেও বিতর্বিত মন্তব্য করেছিলেন। সেখানে সমর্থকদের আয়নায় নিজেদের মুখ দেখতে বলেছিলেন। এই নিয়ে খুব সমালোচনাও হয়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে মুশফিক বাদ পড়ে যান পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে। আর সেই মুশফিকই সাম্প্রতিক ব্যর্থতা ভুলিয়ে দিতে খেললেন ৮২ রানের দারুণ এক ইনিংস।

টেস্ট শুরুর আগেই বোঝা যাচ্ছিল, চট্টগ্রাম টেস্টের উইকেট ব্যাটিং বান্ধবই হবে। তবে এমন উইকেটে প্রথম ঘণ্টায় কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হয় ব্যাটারদের। যদিও টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের কেউই তাতে উত্তীর্ণ হতে পারেননি। শাহীন শাহ আফ্রিদির শর্ট বলে পরাস্ত হয়েছেন সাইফ। শর্ট লেগে দাঁড়িয়ে থাকা আবিদ আলীর সহজ ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে এই তরুণ করেছেন ১৪ রান। এরকিছুক্ষণ পর হাসান আলীর বলে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়েন সাদমান। রিভিউ নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সাদমান ১৪ রানে আউট হয়েছেন। এরপর ডানহাতি স্পিনার সাজিদ খানের বলে অধিনায়ক মুমিনুল তালুবন্দি হন রিজওয়ানের। পরের ওভারে ভালো খেলতে থাকা শান্তও ফাহিম আশরাফের শিকার হলে বিপদ বেড়ে যায় ভীষণ।

শেষ পর্যন্ত ধাক্কা সামলে উঠা সম্ভব হয় লিটন-মুশফিকের কল্যাণে। দু’জন মিলে পঞ্চম উইকেট জুটিতে তুলেছেন ২০৪ রান। দ্বিতীয় দিন তাদের ব্যাটই রানের পাহাড়ে চড়ার অপেক্ষাতে এখন বাংলাদেশ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর