রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:০০ পূর্বাহ্ন

মিয়ানমারের আপত্তি খারিজ, রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলা চলবে: আইসিজে

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৫১ বার
আপডেট : শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০২২

রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠুর দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে দায়ের করা গণহত্যা মামলায় মিয়ানমারের প্রাথমিক আপত্তি খারিজ করে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। শুক্রবার (২২ জুলাই) গণহত্যার মামলায় মিয়ানমারের আপত্তি প্রত্যাখ্যান করে দেন আদালত। এতে আপাতত বিচারকাজ চলতে আর বাধা থাকলো না। রায়ের ফলে মামলার পূর্ণ শুনানির পথ আরও প্রশস্ত হলো। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর গণহত্যার বিষয়টি বিশ্বদরবারে উন্মোচিত হবে। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের এই আদালতে মিয়ানমারের আপত্তির বিষয়ে যুক্তিতর্ক শুনানি হয়। পাল্টাপাল্টি যুক্তিতর্ক শোনেন আদালত। নেদারল্যান্ডসের স্থানীয় সময় বিকাল ৩টার দিকে আইসিজে সভাপতি বিচারক জোয়ান ই দোনোঘুই রায়টি সংক্ষিপ্তভাবে পড়ে শোনান।

মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা বন্ধের পাশাপাশি দোষীদের শাস্তি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় গাম্বিয়া ২০১৯ সালের নভেম্বর আইসিজেতে নেপিদোর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। আদালতের শুনানিতে মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করেন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী কো কো হ্ল্যাং।

আদালত রায়ে উল্লেখ করে, ২০২১ সালে মিয়ানমার চারটি প্রিলিমিনারি অবজেকশন দেয় এবং এর ফলে মূল মামলা স্থগিত হয়ে যায়। দুই পক্ষের শুনানির পর আদালত বলে, অবজেকশন ১, ৩ ও ৪ সর্বসম্মতিক্রমে খারিজ হয়েছে এবং অবজেকশন ২ ১৫-১ ভোটে খারিজ হয়েছে। প্রথম অবজেকশনে মিয়ানমার আপত্তি করেছিল, এই মামলা পরিচালনার অধিকার কোর্টের নেই। দ্বিতীয় অবজেকশন ছিল, এ ধরনের মামলা করার জন্য কোনও দেশের সর্বজনীন ক্ষমতাও নেই। তৃতীয় অবজেকশন হচ্ছে, রোম স্ট্যাটুটের আট নম্বর আর্টিকেল এখানে প্রযোজ্য নয় এবং চতুর্থ অবজেকশন হচ্ছে গাম্বিয়া ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কোনও বিরোধ ছিল না।

এদিকে জাতিসংঘের একটি পৃথক ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন উপসংহারে পৌঁছেছে, ২০১৭ সালে মিয়ানমারে সামরিক অভিযানের ফলে পালিয়ে নারী ও শিশুসহ ৭ লাখ ৩০  হাজারের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে বাধ্য হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় অনেকের বাড়িঘর। মারা যান অনেক রোহিঙ্গা। একে ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ আখ্যা দেয় জাতিসংঘ। মিয়ানমারের আপত্তি খারিজ হওয়ায় এখন মামলা শুনানির জন্য এগিয়ে যাবে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যাতে পারে।

এখন মিয়ানমার কিছুটা কোণঠাসা

এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘এই মামলা চলবে কি চলবে না, বা কোর্টের অধিকার আছে কি নেই, রায়ে সব পরিষ্কার হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, এই মামলা চালানো নিয়ে আর সমস্যা নেই। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘এখন মিয়ানমার কিছুটা কোণঠাসা। মামলায় লড়া ছাড়া তাদের উপায় নেই।

কোর্টে মিয়ানমারের মিলিটারি সরকারের অবস্থান কিছুটা দুর্বল হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে অং সান সুচি কোর্টে দাঁড়িয়ে মিয়ানমারকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তার দল কোর্টকে জানিয়েছে তারা রোহিঙ্গাদের সমর্থন করে। এতে মিয়ানমার সরকার দুর্বল হয়ে পড়বে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কী করণীয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মামলা নিয়ে আর দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই। ফলে এর সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমর্থন দরকার। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা পালন করতে হবে। ২০১৯ সালে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল গাম্বিয়া।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর