রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:০১ পূর্বাহ্ন

মিশরে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন শুরু

মো> আশরাফ আলী / ৪৭ বার
আপডেট : বুধবার, ৯ নভেম্বর, ২০২২

মিশরের শার্ম আল শেখ নগরীতে রোববার (৬ নভেম্বর) বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৭) শুরু হয়েছে। যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক অস্থিরতায় বিপর্যস্ত বিশ্বে ক্রমবর্ধমান ভয়াবহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশ এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছে। এএফপি

গত কয়েক মাসে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত আবহাওয়া বিপর্যয় বন্যা ও ভূমিধসে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। পাকিস্তান এবং নাইজেরিয়ায় ব্যাপক বন্যা, আফ্রিকা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে তীব্র খরা, ক্যারিবীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় এবং তিন মহাদেশ জুড়ে নজিরবিহীন তাপপ্রবাহ বিশ্বকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।

শারম আল শেখের লোহিত সাগর রিসোর্টে ১৩ দিনের এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, রিপোর্টের পর রিপোর্টে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি পরিষ্কার ও অন্ধকার চিত্র পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি বলেন, কপ-২৭ সম্মেলনে অবশ্যই এখন এই গুরুত্বপূর্ণ দশকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অনেক দ্রুত এবং সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের এই যুদ্ধে হয় আমরা জয়ী হবো, নয়তো আমরা হেরে যাবো।

আফ্রিকার বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান (এনজিও) ভাইটাল ল্যান্ডস্কেপের পরিচালক সুসান চম্বা বলেন, এ মহাদেশের সরকারগুলোর উচিত আফ্রিকায় সবুজ বিনিয়োগের জন্য কপ-২৭ আয়োজনকে কাজে লাগানো।

এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব রেডিংয়ের পরিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ের অধ্যাপক চুকউমেরেইজি ওকেরেকে বলেছেন, যেসব উন্নত দেশের দূষণের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, তাদের কাছ থেকে আফ্রিকার দেশগুলো এবার বড় পদক্ষেপ দাবি করতে পারে।

গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কম করলেও আফ্রিকা মহাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বিশ্বের অন্যতম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল। উগান্ডার জলবায়ু প্রচারকর্মী ভেনেসা নাকাতে বলেন, ঐতিহাসিকভাবে আফ্রিকা বৈশ্বিক নিঃসরণের ৪ শতাংশেরও কমের জন্য দায়ী। কিন্তু আফ্রিকা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবগুলোর সবচেয়ে ভয়াবহ শিকার।

কার্বন ব্রিফ নিউজ সার্ভিস নামের একটি প্রতিষ্ঠান গত সপ্তাহে দাবি করেছে, এ বছর চরম আবহাওয়াজনিত কারণে সৃষ্ট দুর্যোগে আফ্রিকায় চার হাজারের মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া এক কোটি ৯০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক আন্ত সরকার প্যানেল (আইপিসিসি) গত ফেব্রুয়ারিতে সতর্ক করে যে আফ্রিকার লাখ লাখ মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ভবিষ্যতে খরা, বাস্তুচ্যুতি ও নানা ধরনের রোগে ভোগার ঝুঁকিতে রয়েছে।

গত বছর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে ২৬তম কপ সম্মেলনে ধনী দেশগুলো আফ্রিকার দেশগুলোকে পরিবেশ অনুকূল জ্বালানি খাতের পথে যেতে নতুন কৌশলের কথা জানায়। এই কৌশলের আওতায় বিশ্বের অন্যতম বড় কার্বন নিঃসরণকারী, আফ্রিকার সবচেয়ে উন্নত দেশ দক্ষিণ আফ্রিকাকে কয়লানির্ভরতা ছাড়তে ঋণ ও অনুদান হিসেবে ৮৫০ কোটি ডলার দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়।

পর্যবেক্ষকরা আশা করছেন, কপ-২৬ সম্মেলনের অঙ্গীকার এবং প্যারিস চুক্তির আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে অর্থায়ন এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে এবার কাজ হবে। বিশ্বব্যাংক বলছে, কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জন করতে ২০৫০ সালের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার ৫০ হাজার কোটি ডলার প্রয়োজন।

কনফারেন্স অব দ্য পার্টিসের সংক্ষিপ্ত রূপ কপ। এটি বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত বিপর্যয় মোকাবিলায় জাতিসংঘের একটি উদ্যোগ। ১৯৯৫ সালে কপের প্রথম সম্মেলন হয়। ১৯৯৯ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিতে কপের জলবায়ু সম্মেলনে ‘জলবায়ু পরিবর্তন’ ইস্যুটি প্রথমবারের মতো সামনে আসে। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে কপ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। সবশেষ গত বছর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে কপের ২৬তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর