রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৩:০১ পূর্বাহ্ন

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে: ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তির আবেদন

মামুনুর রশীদ / ১৫৬ বার
আপডেট : সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০২২

চিন্তা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানুষের আদিম আকাঙ্ক্ষা। যদি কখনও কোনও শিল্প অবরুদ্ধ হয় তার কান্না হয়তো কেউ শুনতে পায় না। কিন্তু শিল্পী তখন নিজেকে নিজ বাসভূমে পরবাসী মনে করে।  সাড়ে তিন বছর আগে একটি ছবি নির্মিত হয়ে সেন্সর বোর্ডে জমা পড়েছিল। হলি আর্টিজানের নৃশংসতার নারকীয় কাণ্ড নাড়া দিয়েছিল সারা বিশ্বকে। তার গভীরতর মানবিক সংকট উপলব্ধি করে চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মাণ করেছিলেন এক বিষণ্ন শোকাহত বিকালের গল্প ‘শনিবার বিকেল’।

ছবিটিতে অভিনয় করতে গিয়ে আমরা এক শ্বাসরুদ্ধকর বিকালের অনুভব আবিষ্কার করেছিলাম আর বিপরীতে কিছু মানবিক গুণে অভিভূত হয়েছিলাম। ছবিটির অভিনেতা-অভিনেত্রী, বিদেশি চিত্রগ্রাহকসহ সবাই দীর্ঘদিন মহড়া করে একটি শুটিংয়ের বিশেষ অঞ্চল নির্মাণ করে ছবিটি নির্মিত হয়। ছবি নির্মাণও ছিল নিরীক্ষামূলক এবং অভিনব। সাধারণত চলচ্চিত্র  নির্মাণ হয় শত শত শটের সমন্বয়ে এবং সম্পাদনা দ্বারা তা চূড়ান্ত রূপ পায়। এই ছবিটি নির্মাণ হয়েছে একটি একটি শটের মাধ্যমে। পৃথিবীতে এ ধরনের ছবি সাধারণত হয়ই না। হয়তো চলচ্চিত্রের পুরো ইতিহাসে আট-দশটি  হয়ে থাকবে। আমার কাছে মনে হয়েছে, এ যেন বিশ্ববিবেকের চোখটা নিষ্পলক দৃষ্টিতে ঘটনাটিকে ঘুরে ঘুরে দেখছে। দীর্ঘ একঘণ্টা পঁয়ত্রিশ মিনিটের ছবিটি পরিচালকের নির্দেশে একজন সুদক্ষ চিত্রগ্রাহক ক্যামেরায় দৃশ্যগুলো বন্দি করেছেন। চলচ্চিত্রের নিয়ম অনুযায়ী সাধারণত কোথাও ‘কাট’ হয় আবার পুনরায় শুটিং হয়ে থাকে। এখানে অভিনয়ের সাবলীল গতি, আবেগ রক্ষা করে আনকাট এই দীর্ঘ সময় ধরে রাখা হয়েছে। শিল্পের প্রতি এই একাগ্রতা সত্যিই  দুর্লভ।

ছবিটির বিষয়বস্তু অত্যন্ত মানবিক। হলি আর্টিজান যদিও এ ছবির প্রেরণা কিন্তু পরিচালক এখানেই থেমে থাকেননি। বিশ্বমানবের সহানুভূতির হৃদয়টা জাগ্রত করার উদ্দেশ্যেই এই ছবিটি নির্মিত। কোথাও কোনও ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্য এখানে দৃশ্যমান নয়। বরং বাংলাদেশ যে এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে বিশ্ববিবেকের হৃদয় নিয়ে দেখতে পারে তা-ই দেখানোর চেষ্টা হয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি সচেতন মানুষ। শিল্প ও সাহিত্যের প্রতি আপনার প্রগাঢ় উপলব্ধি আছে, আপনি এও বিশ্বাস করেন- এ দেশের চলচ্চিত্র এবং নাট্যকর্মীরা দেশপ্রেমের ধারক এবং উজ্জীবক। গত ৫১ বছরের ইতিহাসে শিল্পীদের হাতে দেশপ্রেম কখনও লাঞ্ছিত হয়নি, যার স্বীকৃতিও আপনি দিয়েছেন। তাই আপনার কাছে আমাদের আবেদন, ছবিটিকে সেন্সরের কাছ থেকে অবমুক্ত করে জনগণের ওপরই বিচারের ভার অর্পণ করে শিল্পের চিরন্তন অবিনাশী প্রকাশের পথকে আশ্রয় দেবেন।

লেখক: নাট্যকার, অভিনেতা ও নাট্য পরিচালক


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর