জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেছেন, আমি ঢাকায় ফিরে এসেছি। পার্টির সব এমপি ও প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং অন্যান্যদের সঙ্গে যেকোনো বিভ্রান্তি ও ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে বসব। রোববার রওশন এরশাদ দেশে ফিরে বিমানবন্দরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।

বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, আমি নিশ্চিত, ভুল বোঝাবুঝি দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে শিগগিরই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ফিরতে পারব, ইনশাআল্লাহ। এসব ভুল বোঝাবুঝির জন্য এবং পার্টিকে দুর্বল করতে কিছু ষড়যন্ত্র হতে পারে; যেমনটি আমরা ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০১৪ সালে দেখেছি।  ইনশাআল্লাহ, আমরা সেসব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করব এবং ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী জাতীয় পার্টি গড়ে তুলব।

রওশন এরশাদ বলেন, সুস্থতা ও স্বদেশে ফিরে আসার জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই। আলহামদুলিল্লাহ। আমি এখন ঠিক আছি। কিন্তু আমার পায়ে কিছু সমস্যা আছে, ফিজিওথেরাপি নিচ্ছি। আমার সুস্থতা কামনায় দোয়া করার জন্য পার্টির নেতাকর্মী এবং দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাই। ব্যাংককে আমার চিকিৎসার সময় সহযোগিতা এবং স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেন, আমি থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসকেও ধন্যবাদ জানাই হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সময় সহায়তা ও সহযোগিতার জন্য। আগেও বলেছি, আজও বলছি- আমি সবসময়ই জাতীয় পার্টির ঐক্য চাই। আপনারা সবাই জানেন, আমার স্বামী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যদের কত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। আমি দেখেছি, গত ৩২ বছরে জাতীয় পার্টি নেতাকর্মীরা কতটা কঠোর পরিশ্রম করেছেন। জাতীয় পার্টির জন্য যারা কষ্ট করেছেন, জেল খেটেছেন এবং জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, পার্টিকে বিভক্ত করার প্রশ্নই ওঠে না। আমি জাতীয় পার্টির সব সদস্যকে খোলা মনে আহ্বান জানিয়েছি, যারা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, জনাব নাজিউর রহমান মঞ্জু, কাজী জাফর আহমদের সঙ্গে চলে গেছেন এবং নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন, তাদের ফিরে আসার জন্য। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় পার্টির কঠিন ও প্রতিকূল সময়, যারা আমাদের সঙ্গে ছিলেন, তাদের অবশ্যই যথাযথ স্বীকৃতি দিতে হবে।

রওশন এরশাদ বলেন, বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন বজায় রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দুর্নীতি, অর্থনীতিতে অব্যবস্থাপনা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির মতো কিছু ত্রুটি রয়েছে। আমি নিশ্চিত যে, প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়ে অবগত আছেন।

বিরোধীদলীয় এই নেতা বলেন, বর্তমান ভূ-রাজনীতি বিশেষ করে ইউক্রেনের যুদ্ধ গুরুতর অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি করেছে। এর প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশেও। তাই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের সবাইকে আরও সতর্ক হওয়া উচিত এবং সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত। বিএনপির অধীনে জাতীয় পার্টি খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের নেতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং আমি ও আমার নাবালক সন্তানসহ দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী জেল খেটেছিলাম। তখন আমাদের জনসভাও করতে দেয়া হয়নি। ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে অনেক জনসভায় হামলা চালিয়ে কতশত নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই অন্ধকার দিনগুলো আমরা ভুলবো কি করে?

রওশন এরশাদ বলেন, আমরা তাদের শাসনামলে হাওয়া ভবনের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও অপতৎপরতা দেখেছি। জনগণ উন্নতি ও শান্তির জন্য পরিবর্তন চায়। জাতীয় পার্টিই দিতে পারে সেই শান্তি। অবশ্যই তা বিএনপি নয়। বিএনপির সঙ্গে জোটের প্রশ্নই আসে না।

দীর্ঘ পাঁচ মাস থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরলেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। রোববার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে রওশন এরশাদকে বহনকারী থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩২১ ফ্লাইটটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন কাজী মামুনুর রশীদ, এরশাদপুত্র রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ ও পুত্রবধূ মাহিমা সাদ। দলীয় নেতার দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে বিমানবন্দরে জাতীয় পার্টির পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী ভিড় জমান।