রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৪:১৭ পূর্বাহ্ন

ভাষা শহীদ বরকত মুর্শিদাবাদের ছেলে, জানতেন না মমতা

ভয়েসবাংলা ডেস্ক / ৮৩ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শহীদ হওয়া আবুল বরকতের পৈতৃক ভিটা অধুনা পশ্চিমবঙ্গের যে গ্রামে– সেখানে একটি শহীদ স্তম্ভ ও মূর্তি স্থাপনের ঘোষণা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কিন্তু ঘটনা হলো, মুর্শিদাবাদের বাবলা গ্রামে বরকতের ওই ভিটেতে বহু বছর ধরেই একটি সংগ্রহশালা ও বরকতের আবক্ষ মূর্তি রয়েছে– মমতা সরকারের মন্ত্রী ও দলীয় নেতারা এই বছরেও সেখানে মালা দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর কথা থেকে মনে হয়েছে, তার এই বিষয়টি একেবারেই জানা ছিল না তার।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে সোমবার কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কে এক সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ভাষা শহীদ বরকতের পৈতৃক ভিটে যে মুর্শিদাবাদে, এই ব্যাপারটা আমাদের নলেজে আনার জন্য আবুল বাশার-দাকে ধন্যবাদ জানাই। সালার থানার বাবলা গ্রামে বরকতের পৈতৃক ভিটেটা ঠিক কোথায় সেটা আমরা খোঁজ নেবো… ইনফ্যাক্ট আমরা খোঁজ পেয়ে গেছি। আমি আমাদের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন ও সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বলবো, ওখানে যাতে ভাষা শহীদ বরকতের স্মরণে একটি স্তম্ভ তৈরি করা হয় ও তার মূর্তি বসানো হয়।

তবে কলকাতার সভামঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী যখন এ কথা বলছেন,  তার বেশ খানিকক্ষণ আগে সেদিন সকালেই বাবলা গ্রামে ‘শহীদ আবুল বরকত ভবনে’ তাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেছেন রাজ্য সরকারের প্রাণিসম্পদমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। স্থানীয় বিধায়ক হুমায়ুন কবীর ও তৃণমূলের স্থানীয় নেতারাও ভাষা দিবসের সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী-বিধায়কসহ উপস্থিত নেতারা আবুল বরকতের আবক্ষ মূর্তিতে মালাও পরিয়ে দেন।

সোমবার সকালেই ‘শহীদ আবুল বরকত ভবনে’ শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেছেন মমতার দলের নেতারাসোমবার সকালেই ‘শহীদ আবুল বরকত ভবনে’ শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেছেন মমতার দলের নেতারা

বস্তুত বাবলা গ্রামে বরকতের ভিটেতে একটি স্মারক সংগ্রহশালা (‘শহীদ আবুল বরকত কেন্দ্র’) স্থাপন করা হয়েছিল সেই ২০০৫-০৬ সালেই, যখন পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় ছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে সিপিএম সরকার।

ভাষা শহীদ বরকতের পৈতৃক ভিটেরই একটা অংশে আধুনিক ‘বরকত ভবন’ তখনই নির্মিত হয়েছিল– যেখানে গত সতেরো-আঠারো বছর ধরেই নিয়মিত ভাষা দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়ে আসছে। কিন্তু এখানে আবুল বরকতের স্মরণে একটি শহীদ বেদিও স্থাপন করা হোক–এমনটাই চেয়েছিলেন নামী কথাসাহিত্যিক ও মুর্শিদাবাদের ভূমিপুত্র আবুল বাশার।

কলকাতায় সোমবার ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে মুর্শিদাবাদে বরকতের জন্মস্থানের প্রসঙ্গটি তিনিই তোলেন। মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবুল বাশার বলেন, বরকতের জন্মস্থানে সরকারের তরফে কোনও শহীদ বেদি যদি তৈরি করে দেওয়া যায়, ভালো হয়। সেই কথা লুফে নিয়ে এরপরই মুখ্যমন্ত্রী জানান, মুর্শিদাবাদের সালারে বরকতের বাড়িটি সংস্কার করা হবে। সেখানে একটি স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হবে, বসানো হবে বরকতের মূর্তিও। এ বিষয়ে আলোকপাত করার জন্য আবুল বাশারকে ধন্যবাদও জানান মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু অনেক আগে থেকেই যে মুর্শিদাবাদ বরকতের স্মৃতিরক্ষার কাজ করে চলেছে, সে বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘুণাক্ষরেও জানা ছিল না–সেটাও তার কথা থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে।

বাবলা গ্রামে শহীদ আবুল বরকত কেন্দ্র ২০০৫-০৬ সালেই স্থাপন করা হয়েছিলবাবলা গ্রামে শহীদ আবুল বরকত কেন্দ্র ২০০৫-০৬ সালেই স্থাপন করা হয়েছিল

প্রসঙ্গত, সালার থানার বাবলা গ্রামের ছেলে আবুল বরকতের জন্ম ১৯২৭ সালের জুন মাসে। তার পিতার নাম ছিল শামসুদ্দিন ও মায়ের নাম হাসিনা বেগম। বাবলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনি তার শিক্ষাজীবন শুরু করেন। ১৯৪৫ সালে তালিবপুর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৪৭ সালে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। সাতচল্লিশে দেশভাগের পর তার পরিবার তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে পাড়ি দেয়, আর উচ্চশিক্ষার জন্য আবুল বরকত ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর