শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১১:১৮ অপরাহ্ন

ভারত সফর থেকে একেবারে শূন্য হাতে ফিরিনি: প্রধানমন্ত্রী

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৪৭ বার
আপডেট : বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে নির্মিত ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ ছবিটির ট্রেলার নিয়ে সমালোচনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ফরিদ হোসেন। ছবিটি কবে নাগাদ মুক্তি পেতে পারে প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন ছবিটির এডিটিং চলছে। ট্রেলার দেখার পর অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। একটা বিষয় আপনাদের বলতে পারি, ট্রেলার যদি গ্রহণযোগ্য না হতো, তাহলে ফ্রান্সের কান উৎসব ছবিটি কখনো গ্রহণ করত না। কাজেই এর গুণগত মান নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলতে পারে। কিন্তু বিবেচনা করতে হবে, কান উৎসব যেনতেন কিছু গ্রহণ করে না। মানহীন কিছু দেখাতে দেয় না।

ছবিতে অভিনয় করা শিল্পীদের প্রশংসা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমি যেটা বুঝি, আসলে ৭ মার্চে এভাবে জাতির পিতাকে দেখার পর সেটাকে অভিনয় করে দেখালে এটা মেনে নিতে অনেকের একটু কষ্ট হয়। এটাই সমস্যা। সিনেমা যখন হবে, এখানে কাউকে না কাউকে অভিনয় করতেই হবে। আমি তো মনে করি, যেটুকু করেছে, চমৎকার করেছে। ছবির ট্রেলার কান উৎসবে যাওয়ার আগে যেটুকু দেখেছি, ভালো লেগেছে। যেখানে যেখানে সংশোধনের দরকার, তা বলেছি। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, কান উৎসবে ছবিটি যদি প্রেজেন্টেবল না হতো, তারা এটা দেখাত?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের মনের ভেতরে যিনি (বঙ্গবন্ধু) আছেন, তাঁকে তো ফিরিয়ে আনতে পারব না। এটা যখন সিনেমা, এটাকে সিনেমা হিসেবেই দেখতে হবে। যিনি অভিনয় করেছেন, তাঁকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। সেই চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলা কঠিন কাজ। আর সেটা যদি বঙ্গবন্ধুর চরিত্র হয়, সেটা তো আরও কঠিন। আমি বলব, এখানে যারা অভিনয় করেছে, অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে। অনেক অভিনেতাও তা পারে না।’ ছবিটির এখন এডিটিং চলছে। একটা ভালো সময় দেখে মুক্তি দেওয়া হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে নির্মিত এই বায়োপিকের পরিচালক শ্যাম বেনেগাল।

জোটের প্রশ্নে আওয়ামী লীগের দরজা খোলা

প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে ভোট করার ইঙ্গিত দেন। পাশাপাশি জয়ের প্রয়োজনে দলীয় নমিনেশনে ক্ষেত্রমতো প্রার্থী পরিবর্তনের কথাও জানান। সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে জোট-ভোটের বিষয়টি সময় এলে বলা যাবে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা ১৪ দল করেছি। জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করেছি। জাতীয় পার্টি আলাদাভাবে নির্বাচন করেছে। তবে তাদের সঙ্গে আমাদের একটি সমঝোতা ছিল। ভবিষ্যৎ নির্বাচনে কে কোথায় থাকবে তা সময় বলে দেবে। নির্বাচনে যারা সবসময় আমাদের সঙ্গে ছিল তারা আমাদের সঙ্গে থাকবে। এতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। আর আমাদের সঙ্গে কে থাকবে না থাকবে, বা নতুন জোট হবে বা কী হবে, হোক। অসুবিধা নেই তো। জোট ও ভোটের প্রশ্নে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ উদারভাবে কাজ করে। আওয়ামী লীগের দরজা খোলা।

আগামী নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগে ভোট দেবে

আগামী নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে দলটির সভাপতি বলেন, সরকারে আসার পর আমরা যে উন্নয়ন করতে পেরেছি, নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, গৃহহীনদের ঘর তৈরি করে দেওয়া, দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা, এভাবে সার্বিক দিক থেকে আমরা উন্নয়ন করেছি। তৃণমূল পর্যায়ে থেকে আমরা উন্নয়ন করে যাচ্ছি। এত কাজ করার পরে অবশ্যই জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে এটা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। তারা যদি এই চলমান উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখতে চান, আর না চাইলে তো কিছু করার নেই। সেটা জনগণের ইচ্ছা।

প্রার্থী পরিবর্তন

জেলা পরিষদে বেশ কিছু প্রার্থী পরিবর্তন হয়েছে, জাতীয় নির্বাচনে এমনটি হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনে নমিনেশনে পরিবর্তন খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। ক্ষেত্রমতো আমরা অবশ্যই যাচাই করে দেখবো কার জেতার সম্ভাবনা আছে, কার নেই। কে ভোট পাবে না পাবে। আর ভোট পেলে সে জিতবে কিনা সবকিছু বিবেচনা করে নির্বাচনে নমিনেশন দেওয়া হয়। নির্বাচনের এখনও এক বছরের বেশি সময় বাকি আছে। সময় যত যাবে ততই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: ফোকাস বাংলা)

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: ফোকাস বাংলা)

জেলা পরিষদে নমিনেশন প্রশ্নে তিনি বলেন, হয়তো বেশি দিন বাঁচবেন না। বয়োবৃদ্ধ হয়ে গেছেন। তাদের আর কষ্ট দিতে চাইনি। যাদের নমিনেশন দিয়েছি সেখানে পরিবর্তন আনিনি। এ প্রসঙ্গ তিনি বলেন, দীর্ঘদিন একটানা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে তো, গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত আছে। আপনারা কিন্তু ভুলে গেছেন, ‘৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যার পর বারবার ক্যু হচ্ছিল। একটা মিলিটারি ডিকটেটরের পর আরেকটা মিলিটারি ডিকটেটর। অথবা মিলিটারি ডিকটেটরের স্ত্রী ক্ষমতা নিয়ে গেলো ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে। জনগণের কী ছিল তখন? জনগণের আদৌ কোনও অধিকার ছিল? সারা রাত কারফিউ, কথা বলার অধিকার নেই। কে কখন গায়েব হয়ে যাচ্ছেন তার ঠিক নেই। এই তো ছিল বাংলাদেশের অবস্থাটা। আপনারা এখন টকশো করেন, যে যার মতো কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার আগে কে এত কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন বলেন তো? কেউ পেয়েছে কখনও সুযোগ? পাইনি। একটি টেলিভিশন। একটি রেডিও। কোথায় টকশো আর কোথায় মিষ্টি কথা। সেই তেঁতুলের টকই হোক আর রসগোল্লার মিষ্টি হোক, কোনটাই কেউ তো পাইনি। কথা বলার তো অধিকার ছিল না। হ্যাঁ, এখন শুনি সব কথা বলার পরে বলেন কথা বলার অধিকার নেই। এটাও শুনতে হয়।

যে অন্যায় করবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

বিএনপির আন্দোলনের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আজ রাস্তার আন্দোলন। জনগণ সাড়া না দিলে তো সেটা আমার দায়িত্ব নয়। আওয়ামী লীগ যে বিএনপির হাতে নির্যাতিত সেটা কী ভুলে গেছেন। সবাই তো আওয়ামী লীগের ওপর চড়াও হয়েছে। লাশ টানতে টানতে আর আহতদের চিকিৎসা করাতে আমাদের নাভিশ্বাস উঠেছিল। আজ কি সেই পরিবেশ আছে? তা তো নেই। আমাদের পার্টির কেউ যদি কোনও অন্যায় করে আমরা ছেড়ে দেই না। আমার দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে এজন্য কিছু বলবো না? তা নয়। যে অন্যায় করবে তার বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নেবো এবং নিচ্ছি।

মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি

বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, যারা তত্ত্বাবধায়ক বা ইত্যাদি বলে চিৎকার করছে তারা ওয়ান ইলেভেনের কথা ভুলে গেছেন? ২০০৭-এর কথা ভুলে গেছেন? কী অবস্থাটি সৃষ্টি হয়েছিল। সেখান থেকে তো অন্তত সবাই মুক্তি পেয়েছেন। ২০০৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার। চলাফেলার অধিকার, সমালোচনার অধিকার। প্রশংসা করার অধিকার সবই তো পাচ্ছেন। কেউ তো কারও মুখ বন্ধ করে রাখছে না। কাউকে তো আমরা বাধা দিচ্ছি না। মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা আমি দিয়েছি। এটা তো স্বীকার করতে হবে। বিরোধী দলের সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, আমি দেশের জন্য কাজ করি। দেশের মানুষের জন্য কাজ করি। আমার স্বার্থ এ দেশের মানুষ ভালো থাকুক। সমালোচনা যারা করবে করুক না। করা তো ভালো। যত পারে কথা বলুক। ভালো কিছু এলে আমরা গ্রহণ করবো। মন্দ কিছু থাকলে পরিহার করবো।

সরকারের উন্নয়নের নানা ফিরিস্তি তুলে ধরে গণমাধ্যমকে তা প্রকাশ উদারতা দেখানোর অনুরোধ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেশি কিপটামি না করে সেগুলো একটু বলেন না ভালো করে। যে কাজটুকু করেছি। আমার বেলায় এত কৃপণতা কেন আপনাদের। টকশোতে টক টক কথা বলেন। টকের সঙ্গে একটু মিষ্টি না হলে আবার টেস্ট হয় না। এটাও মনে রাখবেন। তবে এতে আমার কিছু আসে যায় না। আমি দেশের জন্য কাজ করছি। দেশের মানুষের জন্য কাজ করছি। দেশের মানুষ ভালো আছে কিনা সেই হিসাবটা আমি নিই।

এর আগে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি কোভিড মহামারীর প্রেক্ষিতে দীর্ঘ তিন বছর বিরতির পর আমার এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। সফরের পুরো সময় জুড়ে আমরা ভারতের আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ ও সৎ প্রতিবেশী হিসেবে সমতা এবং শ্রদ্ধার ভিত্তিতে দুদেশের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার লক্ষ্য করেছি। ভারতীয় নেতৃত্বের শীর্ষ পর্যায়ে, সংবাদ মাধ্যমে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আমি বাংলাদেশের জন্য যে প্রীতি ও সৌহার্দ্য লক্ষ্য করেছি তা সত্যিই অসাধারণ। এই প্রীতির সম্পর্ককে সুসংহত করে আমরা আরও এগিয়ে যেতে চাই।

ভারত সফর থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তির বিষয়গুলোও প্রধানমন্ত্রী তার লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরেন।

  • কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, যার মাধ্যমে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
  • সীমান্তে প্রাণহানির সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে কাজ করতে দুই দেশ সম্মত হয়েছে।
  • ভুটানের সঙ্গে রেল যোগাযোগ ও অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত রেল সংযোগে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হবে।
  • চিনি, পেঁয়াজ, আদা, রসুনের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য রপ্তানি বন্ধের আগে বাংলাদেশকে আগাম বার্তা দিতে ভারত সরকার পদক্ষেপ নেবে।
  • বাংলাদেশের মুজিবনগর থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত ঐতিহাসিক ‘স্বাধীনতা সড়ক’ চালু করা হবে।
  • নদী দূষণ এবং অভিন্ন নদ-নদীর ক্ষেত্রে নদীর পরিবেশ এবং নদীর নাব্যতা উন্নয়নের লক্ষ্যে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
  • রেলওয়ে সেবার মান বাড়াতে আইটি সল্যুশন বিনিময় করা হবে।
  • ২০২২ সালের মধ্যে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি নিয়ে দুদেশের বাণিজ্য কর্মকর্তাদের কাজ শুরু করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর