রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৬:০২ পূর্বাহ্ন

ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌজন্য সাক্ষাৎ

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ২৬৪ বার
আপডেট : বুধবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও ৫০তম বিজয় দিবস উদযাপনে যোগ দিতে ঢাকায় আসা ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশকে ভারতের ‘উন্নয়ন অংশীদার’ বলে মন্তব্য করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ।

বুধবার বিকেলে ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এ সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া। ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ভারতের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার, রাজদীপ রায় এমপি, ভারতের রাষ্ট্রপতির সচিব কেডি ত্রিপাঠি, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী ভারতের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন।

সাক্ষাতকালে দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও দ্বিপাক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার, কানেকটিভিটি বৃদ্ধি, বিশেষ করে ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পর বন্ধ হওয়া রুটগুলো পুনরায় চালু, দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয় দুই নেতার মধ্যে।

পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেছেন, বাংলাদেশ হচ্ছে উন্নয়ন অংশীদার। আমাদের অংশীদারিত্ব ব্যাপক এবং গতিশীল। দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের কথা জানিয়ে প্রেস সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা ভারতকে মহান বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করি। সাক্ষাতকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও দুই দেশের মধ্যেকার সফর দুই দেশের মধ্যেকার উষ্ণ সম্পর্কের প্রমাণ।

প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতের জনগণ ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঐতিহাসিক তিনটি উৎসবে যোগ দিতে বাংলাদেশে এসে ভারতের রাষ্ট্রপতির সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে ইহসানুল করিম বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর পর এটিই ভারতের রাষ্ট্রপতির প্রথম বিদেশ সফর। তিনি (ভারতের রাষ্ট্রপতি) বাংলাদেশে এসে খুশি’। তিনি বলেন, তিনি (ভারতের রাষ্ট্রপতি) বলেছেন তিনি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের কুটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন একসঙ্গে তিনটি উৎসবে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে তিনি আনন্দিত। গুরুত্বপূর্ণ তিনটি উদযাপনে অংশ নিতে বাংলাদেশে আসায় ভারতের রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রেস সচিব বলেন, বাংলাদেশের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসবের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০২১ সাল বাংলাদেশের জন্য যুগান্তকারী বছর (ল্যান্ডমার্ক ইয়ার)। বাংলাদেশ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব উদযাপন করছে।গত মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঐতিহাসিক সফরের কথাও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের বহুপাক্ষিকতাবাদ ও গণতান্ত্রিক আর্দশ বিষয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের কথা তুলে ধরে প্রেস সচিব বলেন, ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেছেন বঙ্গবন্ধু ছিলেন ‘বহুপাক্ষিকতাবাদ এবং গণতন্ত্র’ আদর্শ। বাংলাদেশের এই নীতির প্রশংসা করেন রাম নাথ কোবিন্দ। বৈঠকে করোনা ভাইরাস নিয়ে আলোচনা হয় জানিয়ে ইহসানুল করিম বলেন, সাক্ষাতে কোভিড নিয়ে আলোচনা হয়। ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেন এটা এমনি একটি অদৃশ্য শক্তি, এসে একেবারে সব লণ্ডভণ্ড করে দিলো।

প্রেস সচিব বলেন, ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেছেন, বাংলাদেশ প্রথম ভারত থেকে টিকা গ্রহণ করে। করোনাকালীন সময়ে ভারতে ওষুধ পাঠানোর জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ দেন তিনি (রাম নাথ কোবিন্দ)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বাংলাদেশকে টিকাও চিকিৎসা সামগ্রী দেওয়ায় ভারতকে ধন্যবাদ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন সফররত ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ।

ইহসানুল করিম জানান, রাম নাথ কোবিন্দ আশা করে বলেন, আপনার (প্রধানমন্ত্রী) নেতৃত্বে বাংলাদেশ আরও সমৃদ্ধ হবে, আরও উন্নতি করবে’।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে ভারতকে বাংলাদেশের সমর্থন প্রসঙ্গে ভারতের রাষ্ট্রপতির বক্তব্য তুলে ধরে প্রেস সচিব বলেন, ‘তিনি (ভারতের রাষ্ট্রপতি) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে ভারতকে সমর্থন দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। গেল আমের মৌসুমে আম পাঠানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দেন ভারতের রাষ্ট্রপতি।দুই দেশের কানেকটিভি বাড়ানোর ওপর ভারতের রাষ্ট্রপতি গুরুত্বারোপ করেছেন বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বলেন, ‘ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেছেন আমরা কানেকটিভিটির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।

ইহসানুল করিম জানান, বাংলাদেশ-ভারত বন্ধ হয়ে যাওয়া রুটগুলো পুনরায় চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পরে অনেকগুলো কমিউনেকেশন ওরা বন্ধ করে দিয়েছিল ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট। সেগুলো পুনরায় চালুর ওপর গুরুত্বরোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বঙ্গবন্ধু-বাপুজী ডিজিটাল প্রদর্শনীর প্রশংসা করেন রাম নাথ কোবিন্দ। ভারতের রাষ্ট্রপতি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ প্রতিষ্ঠা করার কথা উল্লেখ করেন।

ইহসানুল করিম জানান, বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা নীতি সমুন্নত রাখার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখানে ধর্ম যার যার উৎসব সবার। এখানে সবাই স্বাধীনভাবে ধর্মীয় অধিকার ভোগ করে, ধর্মপালন করে। এখানে কোন বাধা নেই।

শেখ হাসিনার জন্য মিষ্টি, কেক ও বিস্কুট উপহার এনেছেন দেশটির রাষ্ট্রপতি

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে তৈরি করা মিষ্টি, কেক ও বিস্কুট উপহার এনেছেন দেশটির রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ। বুধবার সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে আম উপহার পাঠিয়েছিলেন, সেই আম মিষ্টি ও সুস্বাদু ছিল বলে বৈঠকে জানিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এক সময় ভারত আশ্র‍য় দিয়েছিল, সেজন্য ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বুধবার
ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ তিনদিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর