রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন

ব্রিটিশ আমলের দণ্ডবিধিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে ভারত

ভয়েস বাংলা প্রতিবেদক / ৯ বার
আপডেট : শুক্রবার, ১১ আগস্ট, ২০২৩

ব্রিটিশ আমলের দণ্ডবিধিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে ভারত। ১৮৬০ সালের দ্য ইন্ডিয়ান পেনাল কোডকে নতুন আইন ভারতীয় ন্যয় সংহিতা দ্বারা স্থলাভিষিক্ত করা হবে। এই লক্ষ্যে শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভায় তিনটি বিল উত্থাপন করেছেন। সংশোধিত আইনে গণপিটুনি ও অপ্রাপ্ত বয়স্ককে ধর্ষণের জন্য সর্বোচ্চ সাজা রাখা হয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্রদ্রোহের বদলের ঐক্য বিনষ্ট করা নামক নতুন অপরাধ যুক্ত করা হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে।
অমিত শাহ বলেছেন, আইপিসির স্থলাভিষিক্ত হবে ভারতীয় ন্যয় সংহিতা, ফৌজদারি কার্যবিধির স্থলাভিষিক্ত হবে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং ভারতীয় সাক্ষ্য আইনের স্থলাভিষিক্ত হবে ভারতীয় সাক্ষ্য। তিনটি বিল পর্যালোচনার জন্য স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে।
লোকসভায় অমিত শাহ বলেন, ১৮৬০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা ব্রিটিশদের তৈরি আইন অনুসারে কাজ করেছিল। তবে এই তিনটি আইনে বদল আনা হবে এবং দেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।
অমিত শাহ বলেছেন, এই তিন বিলের মাধ্যমে ৩১৩টি পরিবর্তন আনা হচ্ছে এবং দেশের আইন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। নারী ও শিশু সুরক্ষার বিষয়ে বেশি নজর দিয়ে এই সব পরিবর্তন করা হয়েছে। অপরাধীদের সাজা নিশ্চিত করার বিষয়টি দেখা হয়েছে। তিনি জানান, নতুন বিল কার্যকর হলে পুলিশ নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারবে না। নতুন বিধানে নাবালিকা ধর্ষণের দোষীদের মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনানো হবে। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ক্ষেত্রে কারাদণ্ড ২০ বছর থেকে আজীবন এবং গণপিটুনির ক্ষেত্রে ১০ বছরের কারাদণ্ড থেকে মৃত্যুদণ্ড থাকবে।
ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এই বিলের অধীনে আমাদের লক্ষ্য, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার অনুপাত ৯০ শতাংশের ওপরে নিয়ে যেতে হবে। সেজন্য, আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান নিয়ে এসেছি। যে ধারায় ৭ বছর বা তার বেশি কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে, সেই সব ক্ষেত্রে ফরেনসিক দলকে অপরাধস্থলে যেতেই হবে। এটি বাধ্যতামূলক করা হবে। আমরা নিশ্চিত করেছি যে ৯০ দিনের মধ্যেই যাতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। শুধু আদালত বললে তবেই চার্জশিট দাখিল করার জন্য আরও ৯০ দিন পাবেন তদন্তকারীরা। পুলিশকে এই নতুন আইনের অধীনে ১৮০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে। এমনকী বিচারকরাও তাদের শুনানি পিছিয়ে কোনও দোষীর আদেশ বিলম্বিত করতে পারবেন না। এখন ৩০ দিনের মধ্যেই সেই সংক্রান্ত আদেশ দিতে হবে এবং পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে তা অনলাইনে প্রকাশ করতে হবে।
সংশোধিত আইনে বিচ্ছিন্নতা, সশস্ত্র বিদ্রোহ, নাশকতামূলক কার্যকলাপ, বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ বা সার্বভৌমত্ব বা ভারতের ঐক্য ও অখণ্ডতাকে বিপন্ন করার জন্য একটি নতুন অপরাধ যুক্ত করা হয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহ আইন বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ভারতের সার্বভৌমত্ব, একতা এবং অখণ্ডতাকে বিপন্ন করার জন্য এটিকে ধারা ১৫০ দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে। এছাড়া অনুসন্ধান এবং চালান (প্রসিকিউশন) প্রক্রিয়াটি ভিডিওধারণ করতে হবে। প্রস্তাবিত আইনে নির্বাচনের সময় ভোটারদের ঘুষ দিলে এক বছরের কারাদণ্ডের কথাও বলা হয়েছে। অপরাধগুলোকে লিঙ্গ নিরপেক্ষ করা হয়েছে৷ সংগঠিত অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সমস্যাকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার জন্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নতুন অপরাধ এবং সংগঠিত অপরাধের জন্য প্রতিরোধমূলক শাস্তি যুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন অপরাধের জন্য জরিমানা ও শাস্তির পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে। নতুন বিলে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে।
অমিত শাহ বলেন, যে আইনগুলো বাতিল করা হবে… সেসব আইনের লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ প্রশাসনকে রক্ষা ও শক্তিশালী করা। শাস্তি দেয়া এবং বিচার না দেওয়ার ধারণা থেকে সেগুলো তৈরি করা হয়েছিল। এগুলোর বদলে নতুন তিনটি আইন ভারতীয় নাগরিকের অধিকার সুরক্ষার চেতনা নিয়ে আসবে। তিনি বলেন, শাস্তি দেওয়া এসব আইনের লক্ষ্য হবে না, লক্ষ্য হবে ন্যয়বিচার প্রদান করা। অপরাধ বন্ধের অনুভূতি তৈরি করতে শাস্তি দেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর