বাসন্তীর ঘটনার পুনরাবৃত্তির ষড়যন্ত্র হয়েছে: তথ্যমন্ত্রী
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বাসন্তীর ঘটনার পুনরাবৃত্তির ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে মন্তব্য করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ বলেছেন, আইনের নিজস্ব গতিতেই মামলা চলবে। বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনে বঙ্গবন্ধু’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা দিবসে মিথ্যা রিপোর্ট দিয়ে প্রথম আলো রাষ্ট্রের ভিত্তিমূলে আঘাত করেছে। শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে একাধিক ব্যক্তির করা মামলা নিজ গতিতে চলবে। এসময় স্বাধীনতা দিবসে স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করা সাংবাদিকতার নীতিবিরোধী বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে গ্রেফতারের বিষয়টি আগে জানালে ভালো হতো। তাকে যখন গ্রেফতার করা হয়, তার আগে মামলা হয়েছে, মামলা হওয়ার পরেই তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোর্টে নেওয়া হয়েছে। বাসা থেকে তুলে নেওয়ার ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় পর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গ্রেফতার দেখানোর বিষয়ে তথ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে একমত। গ্রেফতার করার পর তাকে যে গ্রেফতার করা হয়েছে—এ কথাটি বললে ভালো হতো।
প্রথম আলোর সাংবাদিককে গ্রেফতার করার ঘটনায় বিএনপির প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে বাসন্তীর গায়ে কাপড় না দিয়ে জাল পরিয়ে ছবি তুলে সেটি প্রকাশ করা হয়েছে। তখন জালের দাম কিন্তু কাপড়ের দামের চেয়ে বেশি। এখনো একটা জালের দাম কাপড়ের দামের চেয়ে বেশি, একটা শাড়ির দামের চেয়ে জালের দাম এখনো বেশি। তখনও বেশি ছিল। ইচ্ছাকৃতভাবে বাসন্তীর গায়ে জাল পরিয়ে ছবি তুলে সেটি প্রকাশ করা হয়েছিল, তখন এটি সংবাদ হয়েছে। তো ২৬ মার্চের ঘটনা বাসন্তীকে জাল পরানোর মতোই। তিনি বলেন, অনেকে বলছে বাসন্তীকে জাল পরিয়ে সংবাদ প্রকাশ করার মতোই একই ধরনের ঘটনা ২৬ মার্চে যেটি প্রথম আলোর অনলাইন কিংবা ফেসবুক পেজে যেটি প্রকাশ পেয়েছে, অনেকেই বলছে। আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি। এই ঘটনাকে বাসন্তীকে জাল পরিয়ে সংবাদ পরিবেশনের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। এটি রাষ্ট্র, সমাজ, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। এই যে, এই ধরনের সংবাদ পরিবেশন সর্বমহলের মতে সেটি তো একটি অপরাধ এবং ডিজিটাল অপরাধ।
হাছান মাহমুদ বলেন, অপরাধ আর সাংবাদিকতা এক জিনিস নয়। কোনো সাংবাদিক যদি অপরাধ করে তার কী শাস্তি হবে না? কেউ যদি অপসংবাদিকতা করে স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করে এবং একটি ছেলের হাতে দশ টাকা ধরিয়ে দিয়ে চাইল্ড এক্সপ্লয়টেশন হয়েছে এখানে। ক্লিয়ারলি দেয়ার ইজ চাইল্ড এক্সপ্লয়টেশন, যদি এমন ঘটনা ঘটানো হয়, সেটার কি বিচার হবে না? আমরা কেউ কি বিচারের ঊর্ধ্বে, আইনের ঊর্ধ্বে? বাংলাদেশে মত প্রকাশের যে স্বাধীনতা, সেটি অনেক উন্নয়নশীল দেশে নাই বলেও দাবি করেন।
ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে করা এক প্রশ্নের উত্তরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের আইন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ করেছে। ইউএসএতে সাইবার ল’ অ্যান্ড পানিশমেন্ট ইন ইউএসএ। ইউএসএতে এর শাস্তি ২০ বছর এবং ডিজিটাল অপরাধের কারণে যদি কারোর মৃত্যু হয়, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আমাদের দেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট অত টাফ না। ইউএসএর ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট টাফার দেন আওয়ার ল’। তিনি বলেন, গার্ডিয়ানের জানুয়ারি মাসের প্রতিবেদন, এভরিডে নাইন পার্সেন্ট ইজ অ্যারেস্টেড ইন ইউকে বিকজ অফ দ্য ডিজিটাল অফেন্স। ডিজিটাল অফেন্সের কারণে পার ডে অন ইন অ্যাভারেজ নাইন পার্সেন্ট ইজ অ্যারেস্টেড। আমাদের দেশে হচ্ছে? হচ্ছে না। কারণ এই আইন সব মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য।
এসব ঘটনার বিষয় ব্যবস্থা নিতে তো প্রেস কাউন্সিল আছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, অনলাইন ভার্সন প্রেস কাউন্সিলের অধীনে আসেনি। প্রেস কাউন্সিলের তিরস্কার করা ছাড়া আর কোনো ক্ষমতা নেই। তাকে যখন গ্রেফতার করা হয়, তার আগেই কিন্তু মামলা হয়েছে। মামলা হওয়ার পরেই তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোর্টেও নেওয়া হয়েছে। এখন প্রথম আলো কোর্টে সেই ব্যাখ্যা দেবে। কোর্ট সেটা বিচার করবে।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, অনলাইন ভার্শন প্রেস কাউন্সিলের অধীনে আসেনি। অনলাইন নিউজ মিডিয়া ইজ নট আন্ডার দ্য জুরিসডিকশন অব প্রেস কাউন্সিল, অর ফেসবুক পেজ অফ এনি নিউজ পেপার ইজ নট আন্ডার দ্য জুরিসডিকশন অব প্রেস কাউন্সিল এবং প্রেস কাউন্সিলের তিরস্কার করা ছাড়া আর কোনো ক্ষমতা নেই।
আরেক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ২৬ তারিখ অনলাইনে যে সংবাদটি পরিবেশন করা হয়েছে, এটি অবশ্যই রাষ্ট্রের মূল ভিত্তিমূলে আঘাত হানা হয়েছে। স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করা হয়েছে। স্বাধীনতা দিবসের দিন জাতীয় স্মৃতিসৌধে, জাতীয় স্মৃতিসৌধ আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক, সেখানে একটা ছেলেকে ১০ টাকা দিয়ে ফুসলিয়ে তাকে দিয়ে কথা বলানোর চেষ্টা করা হয়েছে, সে যেটি বলেনি, সেটি প্রচার করা হয়েছে, এটি ঠিক হয়নি বলেই তো তারা সরিয়ে নিয়েছে। এখানে অবশ্যই রাষ্ট্রের মূল ভিত্তিমূলে আঘাত হানা হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, তুলে নেওয়া এবং গ্রেফতার হওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। কাউকে অপরাধবিহীনভাবে কেউ যদি নিয়ে যায় সেটা তুলে নেওয়া। আর কারো অপরাধ হয়েছে, মামলা হয়েছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে কাউকে যদি নিয়ে যায় সেটা হচ্ছে গ্রেফতার করা। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি যদি কাউকে আঘাত করে আহত করি এবং এরপরে সরি বলি তাহলে কি আমার অপরাধ ঢেকে যায়?
ভুল হতে পারে না? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন পাল্টা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ভুল। রাষ্ট্রের মূল ভিত্তিমূলে আঘাত হানা সেটি কি ভুল? ভুল যদি হয়ে থাকে তারা সেটা আদালতে ব্যাখ্যা দেবে। কিন্তু যে সংবাদটি পরিবেশন করা হয়েছে, সেটি এখনো ফেসবুকে আছে। এখনো তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আছে। এটা সরে গেলেও তো সরে যায় না, যে কোনো জিনিস। নাসিরনগরের ঘটনা সেটা সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল কিছুক্ষণ পরে। কিন্তু এরপর তো দেশে দাঙ্গা হয়েছে। কুমিল্লার ঘটনা সেটাও কিছুক্ষণ পর সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এরপরেও দেশে হাঙ্গামা হয়েছে। অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। সুতরাং এটা আদালতে তারা ব্যাখ্যা দেবে।