শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১১:১৮ অপরাহ্ন

বাজারে মৌসুমের প্রথম গুটি জাতের আম, কেজি ৬০ টাকা

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ১৬৩ বার
আপডেট : শুক্রবার, ১৩ মে, ২০২২

রাজশাহীর বাগান থেকে মোকামে পৌঁছেছে মৌসুমের প্রথম আম। প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী শুক্রবার (১৩ মে) বাগান থেকে চাষিরা আম নামানো শুরু করেন। প্রথম আম হিসেবে গুটি জাতের আম বাজারে আসা শুরু করেছে।

গুটি আমের মধ্যে মেহেরচড়া জাতের আম মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ৪০০ টাকা দরে। সে হিসাবে প্রতিকেজি আমের দাম পড়ছে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা। অন্যদিকে খুচরা বাজারে গুটি জাতের মেহেরচড়া আম ৬০ থেকে ৮০ টাকা এবং বৈশাখী ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।

রাজশাহীতে এবার ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমির বাগানে আম চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১১ দশমিক ৫৯ মেট্রিক টন ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। অর্থাৎ ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় দুই লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এছাড়া প্রতিকেজি আমের গড়মূল্য ৪০ থেকে ৪৫ টাকা ধরে প্রায় ৯০০ কোটির মতো আম বেচাকেনার প্রত্যাশা করছে রাজশাহী কৃষি বিভাগ।

সূত্র জানায়, রাজশাহী জেলার ৯টি উপজেলা ও মহানগরীর দুটি থানা এলাকায় কমবেশি আমের চাষ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় জেলার বাঘা উপজেলায়। চলতি মৌসুমে বাঘায় আট হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। একই উপজেলা থেকেই ৯৬ হাজার ৮৪১ মেট্রিক টন (হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১১.৩০ মেট্রিক টন) আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এছাড়া জেলার চারঘাটে তিন হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে ৪৪ হাজার ২৮৪ মেট্রিক টন (গড় ফলন ১১.৪০ মেট্রিক টন), পুঠিয়ায় এক হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে ১৮ হাজার ৫১৩ মেট্রিক টন (গড় ফলন ১২.১০ মেট্রিক টন), গোদাগাড়ীতে এক হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে ১৪ হাজার ৮২৩ মেট্রিক টন (গড় ফলন ১২.১৫ মেট্রিক টন), পবায় ৯২০ হেক্টর জমিতে ১১ হাজার ১৭৮ মেট্রিক টন (গড় ফলন ১২.১৫ মেট্রিক টন), দুর্গাপুরে ৮৫০ হেক্টর জমিতে ১০ হাজার ৩৭০ মেট্রিক টন (হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১২.২০ মেট্রিক টন), বাগমারায় ৫৬৫ হেক্টর জমিতে ছয় হাজার ৮৬৪.৭৫ মেট্রিক টন (গড় ফলন ১২.১৫ মেট্রিক টন), মোহনপুরে ৪০৭ হেক্টর জমিতে চার হাজার ৯৫৩.১৯ মেট্রিক টন (গড় ফলন ১২.১৭ মেট্রিক টন), তানোরে ৩৬০ হেক্টর জমিতে চার হাজার ৩২৬ মেট্রিক টন (গড় ফলন ১২.০২ মেট্রিক টন), মহানগরীর মতিহারে ১৩৫ হেক্টর জমিতে এক হাজার ৬৪১ মেট্রিক টন (গড় ফলন ১২.১৬ মেট্রিক টন) এবং বোয়ালিয়া থানা এলাকায় ৭৩ হেক্টর জমিতে ৮৮৩.৩০ মেট্রিক টন (গড় ফলন ১২.১০ মেট্রিক টন) আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

চাষিরা বলছেন, প্রশাসনের তরফে শুক্রবার বাগান থেকে আম নামানোর তারিখ ঘোষণা করা হয়। তবে রাজশাহীতে থেমে থেমে ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। ঝড় হলেই চাষিদের লোকসান গুনতে হবে। আর গুটি আমও পুষ্ট হয়ে গেছে। তাই গুটি জাতের আম গাছ থেকে নামাতে তাড়াহুড়ো চলছে। আর এখন আমের দাম ভালো। কিছু দিন পর দাম কমতে শুরু করবে। মোকামগুলোতে বেচাকেনা তেমন জমেনি। তবে ভালো দাম আর ঝড়-বৃষ্টির ক্ষতি এড়াতে গুটি আম গাছ থেকে নামাতে চাষিদের ব্যস্ততা দেখা গেছে।

নগরীর কাঁঠালবাড়িয়া এলাকার আম চাষি নাজমুল হাসান বলেন, এই মৌসুমে চারটি বাগান কিনেছি। যেখানে আমের টার্গেট ছিল ৮০ থেকে ৯০ মণ আম পাবো, কিন্তু এই টার্গেট পূরণ না হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে আমের দাম ভালো আছে, ক্ষতির শঙ্কাও করছি না। তবে বড় ঝড়-বৃষ্টি হলে লোকসান গুনতে হতে পারে।তিনি বলেন, কাঁঠালবাড়িয়ার বাগানের গুটি জাতের চারটি গাছ থেকে আম নামিয়েছি। আমের সাইজ ছোট-বড় মিশিয়ে বিক্রি করছি। দাম পেলাম মণে দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ৪০০ টাকা। এই আমটার নাম স্থানীয়ভাবে ‘মেহেরচড়া’।

 এদিকে, নগরীর খুচরা বাজারে বিভিন্ন নামের গুটি জাতের আম বিক্রি করতে দেখা গেছে। শুক্রবার বিকালে নগরীর কোর্টবাজার এলাকায় ফুটপাতে আমের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন আম ব্যবসায়ী মনসুর আলী। তিনি বলেন, বাজারে এখন পর্যন্ত দুটি গুটি জাতের আম এসেছে। ‘মেহেরচড়া’ ও ‘বৈশাখী’। দুটি আমই খেতে মিষ্টি। বিক্রিও ভালোই হচ্ছে। মেহেরচড়া আম প্রতিকেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা এবং বৈশাখী ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছিলেন এই ব্যবসায়ী।

রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের আড়ত বানেশ্বর বাজারের আম ব্যবসায়ী মাকসুদুল আলম বলেন, গত বছর করোনার কারণে ব্যবসায় খুব বেশি সফলতা পাইনি। কিছুটা লোকসানও হয়েছে। এবার হয়তো গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাগান মালিক আরেজ আলী বলেন, এবার ১০ বিঘা জমির আমবাগানের প্রায় দুই শতাধিক গাছে আম ধরেছে। গত বছর ফলন ভালো হলেও করোনা ও রোজার কারণে আমের দাম পাইনি। এবার ফলন কম হলেও আমের ভালো দাম পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।

 রাজশাহী নগরীর ফল ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, স্থানীয় গুটি জাতের আম নগরীর শালবাগান বাজারে দু-একটি দোকানে তোলা হয়েছে। আমি এখনও বাগান থেকে আম নিয়ে আসিনি। কারণ, যারা রাজশাহীর বাইরে থেকে আম কেনে, তারা ভালো জাতের আম কেনেন। তবে গুটি জাতের আম স্থানীয়রা বেশি কেনেন বলে জানান তিনি।

ক্রেতা মতিউর রহমান বলেন, আম কিনেছি। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খেয়ে বলতে পারবো কেমন স্বাদ। তবে আমের স্বাদ ভালো হবে মনে করছি। আরেক ক্রেতা বহরামপুর এলাকার সায়েম হোসেন বলেন, আম খেয়েছি। কিন্তু স্বাদ এখনও টক-মিষ্টি। আরও কয়েকদিন গেলে ভালো স্বাদ পাওয়া যাবে।

 এদিকে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর আম ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে আম নামানোর সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে অনুযায়ী শুক্রবার (১৩ মে) থেকে গুটি আম নামানো শুরু হয়েছে বলে জানান রাজশাহীর ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শরিফুল হক। এছাড়া ২০ মে থেকে গোপালভোগ, ২৫ মে থেকে লক্ষণভোগ বা লখনা ও রানিপছন্দ, ২৮ মে থেকে হিমসাগর বা ক্ষিরসাপাত, ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে আম্রপালি ও ফজলি, ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা ও বারি আম-৪, ১৫ জুলাই থেকে গৌরমতি এবং ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি আম নামানোর সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, ক্রেতাদের বিষমুক্ত ও নিরাপদ আম নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সেই তারিখ অনুযায়ী শুক্রবার (১৩ মে) থেকে বাগানিরা গুটি জাতের আম নামাতে শুরু করেছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর