রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:৪৯ পূর্বাহ্ন

বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে দুই বোনের প্রতারণা

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৫৪ বার
আপডেট : বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২২

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে শিক্ষাবৃত্তি ও চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে শতাধিক নারীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গাজীপুরের কালীগঞ্জের খন্দকার সালমা শওমী (৩৫) ও শাহানাজ খন্দকার শাহীন (৪০) দুই বোনের নামে এ অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে যৌথ স্বাক্ষরে অভিযোগ করেছেন প্রতারণার শিকার নাজমিন আক্তারসহ শতাধিক ভুক্তভোগী নারী। মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসসাদিকজামান অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নাজমিন আক্তারসহ ভুক্তভোগীরা জানান, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর নামে প্রকল্প দেখিয়ে কালীগঞ্জ পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাজার এলাকার দেওয়ান মার্কেট ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অফিস খোলেন অভিযুক্ত দুই বোন। তারা শিক্ষাবৃত্তি ও চাকরি দেওয়াসহ বিভিন্ন সুবিধাদি দেওয়ার কথা বলে  স্থানীয় শত শত নারীর থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়া ওইসব প্রকল্পে স্থানীয় স্বনামধন্য নারীদের উপদেষ্টা ও সদস্য দেখিয়ে সাধারণ নারীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগী কালীগঞ্জ উপজেলার টিউরী গ্রামের নুসরাত ফারজানা লোপা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে হাসুমনির সম্প্রীতি প্রকল্পে শাহীন’স টিউটোরিয়াল নামের একটি প্রতিষ্ঠান করে প্রতারক চক্রের সদস্যরা। পরে আকর্ষণীয় বেতন ও সুযোগ সুবিধা দেখিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের ১০টি পদের বিপরীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। আকর্ষণীয় ওই ১০টি পদের চাকরিতে নিয়োগের কথা বলে স্থানীয় ৩১০ জন নারীর বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন তারা।

কালীগঞ্জ পৌরসভা এলাকার অপর ভুক্তভোগী দিলরুবা বলেন, শাহীন’স টিউটোরিয়ালে ২২ হাজার টাকা বেতন, এক হাজার টাকা হাজিরা বোনাস, রেশন ও তিন বছর পর পেনশন হিসেবে তিন লাখ ১৫ হাজার টাকা দেবে বলে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রথমে নিয়োগ দেয়। পরে প্রতিষ্ঠান সরকারি হয়ে যাবে বলে আরও ৩০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। দিতে না পারলে পরে দুই লাখ টাকা লাগবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগী নারী

ভুক্তভোগী নারীপানজোরা গ্রামের ভুক্তভোগী আতিকা বেগম বলেন, চাকরি দেওয়ার পর অভিযুক্ত দুই নারী আমাদেরকে বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেন। প্রতি সদস্যের প্রত্যেককে পাঁচটি করে কেন্দ্র তৈরি করে তাতে নতুন সদস্য সংগ্রহ করতে বলে। প্রতি সদস্য ফরম ও নিবন্ধনসহ প্রত্যেকের কাছ থেকে চারশ’ টাকা করে দাবি করা হয়।

উপজেলার বক্তারপুর এলাকার দিপালী রাণী দাস বলেন, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু থিম ও থিংক পার্ক নামের প্রকল্পে স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়। ওই দুই বোন প্রথমে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়ে বিশ্বাস অর্জন করা হয়। পরে সদস্য বৃদ্ধি করে প্রতারণার আশ্রয় নেয়।

উপজেলার মোক্তারপুর গ্রামের ভুক্তভোগী রিমা আক্তার বলেন, দুই বোনের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে আমি আজ সব হারিয়েছি। শিক্ষাবৃত্তি ও চাকরি দিবে বলে আমার মাধ্যমে নিজ এলাকার চার শতাধিক নারীকে তাদের সদস্য করেছি। প্রতিটি ফরম ১০০ টাকা নিলেও তা নিবন্ধন করতে নেওয়া হয়েছে আরও ৩০০ টাকা। এখন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমার করা সদস্যদের কোনও কিছুই দিতে পারছি না। স্বামীও ভুল বুঝে বাড়ি ছাড়া করেছে। বাবার বাড়িতে গেলে সেখানেও সদস্যরা ঝামেলা করছে। তাই স্বামীর বাড়ি ও বাপের বাড়ি কোনও বাড়িতেই এখন থাকতে পারছি না। আমি এখন বাড়ি ছাড়া।

বাহাদুরসাদী এলাকার সোনিয়া আক্তার বলেন, আমরা প্রতারণার শিকার হয়ে চাকরির জন্য দেয়া টাকা ও বেতন চাইতে গেলে উল্টো খন্দকার সালমা শওমীর স্বামী তিলক দেওয়ান আমাদের হুমকি দেন। আমাদের বিরুদ্ধে অশ্লীল কথা লিখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেন তিনি। এমনকি তাদের কাছে থাকা ছবি দিয়ে অশ্লীল ভিডিও তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দেন তিলক দেওয়ান। বিষয়টি নিয়ে কালীগঞ্জে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে পৌরসভার দেওয়ান মার্কেটে অভিযুক্তদের অফিস গত কয়েকদিন ধরে বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত খন্দকার সালমা শওমীর মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। এতে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।অপর অভিযুক্ত শাহানাজ খন্দকার শাহীন বলেন, ইউএনও আমাদের নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার কথা বলেছেন। বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনারা রিপোর্ট করলে ভালো হয় বলে তিনি লাইন কেটে দেন।

কালীগঞ্জ পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাদল হোসেন বলেন, ওই দুই বোনের প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী নারীরা আমার কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। পরে আমি তাদের লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানোর পরামর্শ দিয়েছি।

 কালীগঞ্জ মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জুয়েনা আহমেদ বলেন, আমার অজান্তেই তারা আমাকে তাদের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করে প্রচারণা চালিয়েছে। আমি তাদের সঙ্গে আছি জানিয়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। পরে ভুক্তভোগীরা বিষয়টি জানালে আমি স্থানীয় এমপি ও ইউএনওকে অবগত করেছি। তারা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসসাদিকজামান বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে ভুক্তভোগী নারী এবং অভিযুক্তদের নোটিশ করা হয়েছে। ঘটনা প্রমাণিত হলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও এমপি মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি ইউএনওকে বলে দিয়েছি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর