শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৮:০৯ অপরাহ্ন

বঙ্গবন্ধুর ১২২০ ম্যুরালের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে পুলিশ

ভয়েস বাংলা প্রতিবেদক / ৬ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৩

সারা দেশে বঙ্গবন্ধুর ১২২০টি ম্যুরালের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। ২০২১ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও ভাস্কর্য স্থাপন করা হয় এক হাজার ২০১টি, তখন নির্মাণাধীন ছিল আরও ১৯টি। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার নিজ নিজ উদ্যোগে এসব ম্যুরাল তৈরি করা হয়। বঙ্গবন্ধুর এসব ম্যুরাল-ভাস্কর্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক সশস্ত্র পুলিশ টহলের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে পুলিশের মহাপরিদর্শকের পক্ষে দাখিল করা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি একাত্তরের যে দিনটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, সেই ৭ মার্চকে ‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’ ঘোষণা করে এক মাসের মধ্যে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। একই সঙ্গে মুজিববর্ষের (২০২০ সাল) মধ্যে দেশের সব জেলা-উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু একই বছরের মার্চ থেকে শুরু হওয়া মহামারি করোনার প্রভাবে আদালতের সেই আদেশ শতভাগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ফলে মুজিববর্ষের (১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ৩১ মার্চ ২০২২ পর্যন্ত) মধ্যে দেশের সব জেলা ও উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। তবে কোভিডের সংক্রমণ কমার পরপরই বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়, যা এখনও চলমান রয়েছে।
আদালতে জমা দেওয়া পুলিশ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে বঙ্গবন্ধুর এক হাজার ২০১টি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়। আরও ১৯টি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য এখনও নির্মাণাধীন। সরকারের পক্ষ থেকে এই তথ্য বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়। সে সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার প্রতিবেদনটির বরাত দিয়ে জানান, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সারা দেশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও ম্যুরাল পাহারায় ২৪ ঘণ্টা মোতায়েন আছে।
জানা গেছে, ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের জেরে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। একই সঙ্গে রাজধানীর ধোলাইরপাড়ে জাতির পিতার ভাস্কর্য তৈরি নিয়ে ওই সময় একটি মহল বিরোধিতা করে। এমনকি দেশে ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে বক্তব্য-বিবৃতি দেন কয়েকটি ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দলের নেতা।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে মন্তব্যের জন্য রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী, খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মামুনুল হক এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করিমের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট মশিউর মালেক ঢাকার মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদারের আদালতে মামলাগুলো দায়ের করেন।
একই বছরের ৮ ডিসেম্বর বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিটের শুনানি নিয়ে জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাঙা ও অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে ভাস্কর্য, ম্যুরাল, প্রতিকৃতি ও স্ট্যাচুর পক্ষে সচেতনতা গড়তে ইসলামি ফাউন্ডেশনকে গণমাধ্যমে প্রচারণা চালাতে বলেন আদালত।
এর আগের দিন ৭ ডিসেম্বর ম্যুরাল ও ভাস্কর্যের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ অন্যান্য স্থানে নির্মাণাধীন ম্যুরালের নিরাপত্তায় পদক্ষেপ নিতেও নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এরপর ২০২১ সালের ১২ জানুয়ারি মঙ্গলবার নির্মিত ও নির্মাণাধীন সব ভাস্কর্য ও ম্যুরালের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে আদালতকে জানায় পুলিশ সদর দফতর। সরকারের পক্ষে পুলিশ সদর দফতরের দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়—বঙ্গবন্ধুর যত ম্যুরাল ও ভাস্কর্য আছে, তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ম্যুরাল ও ভাস্কর্য ঘিরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, গোয়েন্দা বাহিনী নিয়োগসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে আদালতের নির্দেশনার পরে সব ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিলে জারি করা এক আদেশে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সারা দেশে সব ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়া, ইউনিয়নের গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নামফলক ও বাংলাদেশের ইতিহাস সংবলিত বিলবোর্ড স্থাপনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অপরদিকে দেশের সব রেলস্টেশনে ও চট্টগ্রামের সিআরবির সামনে সাত রাস্তার মোড়ে জাতির পিতার ম্যুরাল স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। চলতি বছরের ৯ মে রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২৬তম বৈঠকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
একইসঙ্গে দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। ২০২২ সালের ২৪ মার্চ নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে সুয়াইর ইউনিয়নের আদর্শ নগর এলাকার শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ‘জাগ্রত মুজিব’ উদ্বোধনকালে এ ঘোষণা দেন তিনি।
এদিকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২০১২ সালে সরকারের সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে এক হাজার ৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালের জুন নাগাদ দেশের ৮টি বিভাগের ৬৩টি জেলার ৪৭০টি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণের লক্ষ্যে ‘উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ শীর্ষক’ একটি প্রকল্প গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এরইমধ্যে ৪২৯টি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ভাস্কর্য ও ম্যুরাল নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। ১৭টির কাজ চলমান রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, সারা দেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও ভাস্কর্যের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সার্বক্ষণিক কাজ করছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর