রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০১:২৫ পূর্বাহ্ন

বঙ্গবন্ধুর তিন দাবি এখনও পূরণ করেনি পাকিস্তান

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৯০ বার
আপডেট : রবিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০২২

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৯ মাসের বেশি সময় পাকিস্তানে অন্তরীণ থাকার সময় বাংলাদেশের নিরীহ জনগণের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায় হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা। ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে এসে পাকিস্তানের কাছে প্রধান তিনটি দাবি করেন তিনি। প্রথমত ছিল, বাংলাদেশে ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার জন্য ‘ক্ষমা প্রার্থনা’, দ্বিতীয়ত ‘আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফেরত নিয়ে যাওয়া’ এবং তৃতীয়ত ‘সম্পদের ন্যায্য বণ্টন’।

গত ৫০ বছরে এ বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক হলেও এর একটিও মেনে নেওয়ার বিষয়ে চরম অনীহা প্রদর্শন করে পাকিস্তান। তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হয়নি। ঢাকা মনে করে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব ১৯৭১-এর ক্ষত উপশম করতে হবে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘২০১০ সালে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব মো. মিজারুল কায়েস তিনটি ইস্যু নিষ্পত্তির জন্য জোরালোভাবে প্রস্তাব করেন। ওই সময়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, দুই দেশের সন্তুষ্টির জন্য ইস্যুগুলো দ্রুত সমাধান করা দরকার, যাতে অতীতকে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায় বলে তিনি জানান।

ক্ষমা প্রার্থনা

১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়, যেখানে ১৩ নং ধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেটিকে পাকিস্তান সরকার নিন্দা জানায় এবং গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে। কিন্তু ১৯৭৪ সালে ঢাকা সফরের সময়ে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টো স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেন। সে সময় তিনি তার অবস্থান অনুযায়ী কোনও ক্ষমা প্রার্থনাও করেননি।

এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিন্তু পাকিস্তান সরকার এ বিষয়ে কোনও কথা রাখেনি। বাস্তবতা হচ্ছে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ক্ষমা প্রার্থনার বিরোধী। কারণ, এটি করা হলে ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। যেহেতু সামরিক বাহিনী পাকিস্তানের নীতিনির্ধারণীতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব রাখে, সে কারণে এটি নিয়ে তারা আলোচনা করতে চায় না।

সম্পদের বণ্টন

১৯৭০-এর ভয়াবহ সাইক্লোনের সময়ে তৎকালীন মূল্যে প্রায় ২০ কোটি ডলার ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছিল ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশিদের জন্য। এর একটি পয়সাও বাংলাদেশে প্রেরণ করেনি ওই সময়কার কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকার। এর পাশাপাশি ১৯৭১ সাল পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে তৎকালীন মূল্যে ৪৩২ কোটি ডলার সম্পদের বাটোয়ারার জন্য চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু অদ্যাবধি বাংলাদেশকে কোনও অর্থ প্রদান করা হয়নি।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তার ভাষ্য, ১৯৭০-এ ত্রাণ সহায়তা হিসেবে যে অর্থ এসেছিল সেটির ওপর বাংলাদেশের পুরো অধিকার আছে। ১৯৭১ সালে ঢাকার স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান শাখায় অর্থটি ছিল কিন্তু পরে এটিকে লাহোর শাখায় প্রেরণ করা হয়। ওই অর্থের ক্ষেত্রে কোনও বাটোয়ারা নেই। কিন্তু এখনও সেটি বাংলাদেশকে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, বাকি ৪৩২ কোটি ডলারের ক্ষেত্রে চারটি ফর্মুলার ভিত্তিতে অর্থ বাটোয়ারার প্রস্তাব করা হয়, কিন্তু সেটিতেও সাড়া দেয়নি পাকিস্তান।

প্রথম ফর্মুলা জনসংখ্যার অনুপাতে এবং সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ৫৬ শতাংশ পাওয়ার দাবিদার, দ্বিতীয়ত সমতার ভিত্তিতে অর্থাৎ সমান ভাগ মানে ৫০ শতাংশ। তৃতীয়ত ফর্মুলা ছিল কোন অঞ্চল বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অবদান রাখে এবং সেই হিসাবে বাংলাদেশ ৫৪ শতাংশ পাওয়ার হকদার এবং শেষ ফর্মুলাটি ছিল কোন কোন অঞ্চলে বেশি সম্পদ আছে এবং সে হিসাবে বাংলাদেশ ৪৪ শতাংশ পাওয়ার দাবিদার।

পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন

স্বাধীনতার পরে রেড ক্রসের এক জরিপে দেখা যায়, ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬৯ জন আটকে পড়া ব্যক্তি পাকিস্তানে ফেরত যেতে চায়। ওই সময়ে তাদের ১৩টি জেলায় ৭০টি ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল। ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালের দুটি চুক্তিতে প্রত্যাবাসনের কথা উল্লেখ ছিল। প্রাথমিকভাবে ওই ৫ লাখের মধ্যে পাকিস্তান ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬৩৭ জনকে চিহ্নিত করে। কিন্তু ফেরত নেয় ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৪১ জনকে। বাকি ২০ হাজার ৬৯৬ জনকে ফেরত নেওয়ার কোনও উদ্যোগ নেয়নি পাকিস্তান।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলছেন, বাকি চার লাখ পাকিস্তানি ফেরত পাঠানো অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে পড়ে যায়। ১৯৮২ সালে ৪ হাজার ৬০০ জনকে ফেরত নিলেও এরপরে আর কাউকে ফেরত নিতে উদ্যোগী হয়নি পাকিস্তান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর