শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১০:৩৫ অপরাহ্ন

প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন বংবং, ফিলিপাইনে মার্কোস পরিবার এত কুখ্যাত কেন?

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৭২ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০২২

বংবং ডাকনামে পরিচিত ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। প্রায় চার দশক আগে এক বিপ্লবে স্বৈরশাসক পিতা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আবারও দেশটির ক্ষমতায় ফিরতে যাচ্ছে পরিবারটি। প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়া এই বিজয়ে মার্কোস নামটি আবারও ক্ষমতা বলয়ে ফিরছে। কিন্তু এই নামটি দেশটিতে এত কুখ্যাত কেন?

ফিলিপাইনের সাবেক স্বৈরশাসক ফার্দিনান্দ মার্কোস সিনিয়রের একমাত্র ছেলে মার্কোস জুনিয়র। সিনিয়র মার্কোস ১৯৬৫ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। পরিবারটির উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন বোঝার জন্য তাদের আগের উত্থান ও পতন বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। আর তা ছিল হত্যা, বিক্ষোভ ও নির্বাসনের এক নাটকীয় এক গল্প।

১৯৬৫ সালে প্রথম প্রেসিডেন্ট হলেও মার্কোস সিনিয়র ফিলিপাইনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেন ১৯৭২ সালে। ওই বছর দ্বিতীয় মেয়াদের প্রেসিডেন্টের কার্যকাল শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তিনি ক্ষমতা ছাড়ার পরিবর্তে সামরিক শাসন জারি করেন। বাস্তবিকভাবে এর অর্থ ছিল পার্লামেন্টকে বাতিল, বিরোধী রাজনীতিবিদদের গ্রেফতার ও পূর্ণ বিধিনিষেধ আরোপ করা। এক সময়ের সফল আইনজীবী মার্কোস সিনিয়র আদালতের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেন। তার বিরোধীদের নির্যাতন ও হত্যা করে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। যা চলে তার প্রেসিডেন্টের পূর্ণ সময় জুড়ে।

ফিলিপাইনের ইতিহাসে ওই সময়কে সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন বলে মনে করা হয়। ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতির ঘটনাও ঘটে। লাখ লাখ মানুষ চরম দারিদ্রে পড়ে, বাড়তে থাকে ঋণের বোঝা। কিন্তু ১৯৮৩ সালের আগস্টের এক বিকেলে একটি হাই-প্রোফাইল হত্যাকাণ্ডে বদলে যায় পরিস্থিতি। ঘটনাপ্রবাহে পতন ঘটে মার্কোস সিনিয়রের।

মার্কোস শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসনে ছিলেন বিরোধী নেতা বেনিগনো অ্যাকুইনো। দেশে গণতন্ত্র ফেরানোর প্রতিশ্রুতি নিয়ে রাজধানী ম্যানিলায় ফেরেন তিনি। কিন্তু বিমান থেকে নামার পরই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

সরকার নিয়োজিত ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে ওই গুপ্তহত্যার ঘটনায় ফিলিপাইনের জনগণের মধ্যে শক্তি সঞ্চারিত করে। হাজার হাজার মানুষ শোক প্রকাশে যোগ দেয়। শিগগিরই তা গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। ক্ষোভ প্রশমনে ১৯৮৬ সালে আগাম নির্বাচনের ডাক দেন মার্কোস সিনিয়র। সেই নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন বেনিগনো অ্যাকুইনোর বিধবা স্ত্রী কোরি।

নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগের পরও জয়ের দাবি করেন মার্কোস সিনিয়র। আর এতেই দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। ‘জনশক্তি’ বিপ্লব নামে পরিচিতি পাওয়া এই বিক্ষোভের নামে পরের কয়েক দশক ধরেই পরিচিতি পায় ফিলিপাইন।

মূলত শান্তিপূর্ণ এই বিক্ষোভে সমর্থন দেয় ক্যাথোলিক চার্চ। পরে তা সিনিয়র সেনা সদস্যদের সমর্থন পায়। মার্কোস সিনিয়রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে সেনাবাহিনী জনতার ওপর গুলিবর্ষণে অস্বীকৃতি জানায়। চার দিনের ব্যাপক বিক্ষোভের পর মার্কোস পরিবার একটি মার্কিন হেলিকপ্টারে চড়ে হাওয়াই চলে যায়। ওই সময়ে মার্কোস জুনিয়রের বয়স ছিল ২৮ বছর। ওই সময় সদ্য রাজনীতিতে যোগ দেওয়া জুনিয়র মার্কোসও ওই হেলিকপ্টারে ছিলেন। মার্কিন শুল্ক রেকর্ড অনুযায়ী, পরিবারটি অলঙ্কার, দামী পোশাক এবং বিপুল নগদ অর্থ সঙ্গে নিয়ে যায়।

তিন বছর পর ১৯৮৯ সালে হাওয়াইতে নির্বাসনে থাকা অবস্থায় মারা যান মার্কোস সিনিয়র। মার্কোস সিনিয়র, তার স্ত্রী এবং তাদের বন্ধুরা প্রায় এক হাজার কোটি ডলার সরকারি অর্থ লুট করে। এর ফলে ফিলিপাইনের লাখ লাখ নাগরিক চরম দারিদ্রে পড়ে। এখন পর্যন্ত এসব অর্থের মাত্র চারশ’ কোটি ডলার উদ্ধার করা গেছে।

সাবেক বিউটি কুইন ইমালদা মার্কোস বিলাসবহুল পণ্য ব্যবহারের জন্য সুপরিচিত ছিলেন। নকশাদার জুতা কিনতে সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়াতেন তিনি। তার সংগ্রহে ছিল তিন হাজারের বেশি জোড়া জুতা। পরিবারটি পালিয়ে যাওয়ার পর এসব জুতা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে পাওয়া যায়।

১৯৯০ এর দশকে নির্বাসন থেকে ফিরে মার্কোস জুনিয়র পরিবারের সম্পদ এবং সংযোগ কাজে লাগিয়ে তাদের রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা পুনরুজ্জীবিত করতে থাকেন। পরে তিনি প্রাদেশিক গভর্নর, কংগ্রেস সদস্য এবং পরে সিনেটর হয়ে যান। বর্তমানে ৯২ বছর বয়সী তার মা ইমালদা মার্কোস এক সময় কংগ্রেস সদস্য ছিলেন। তার বোন ইমি একজন সিনেটর এবং সাবেক গভর্নর।

৬৪ বছরের মার্কোস জুনিয়র ফিলিপাইনের তরুণদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। পিতার শাসনামলকে বৈধতা দিতে তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়নের বয়ান দিয়েছেন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনকে খাটো করে দেখিয়েছেন। তিনি আরও যুক্তি দিয়েছেন যে, ওই সময়ের অপরাধের দায়ভার বহনের জন্য তিনি খুব কম বয়সী ছিলেন।

পিতা সামরিক শাসন জারির ৫০ বছর পর ঘোষিত হওয়া ফলাফলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হচ্ছেন মার্কোস জুনিয়র। এর ফলে হাওয়াই এর নির্বাসন থেকে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ফিরতে যাচ্ছে মার্কোস পরিবার। সূত্র: বিবিসি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর