শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১০:৪৮ অপরাহ্ন

প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় গোয়েন্দা নজরদারিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৫৩ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২২

নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৯ কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে রয়েছেন নিয়োগ পরীক্ষা কমিটির সদস্যদের অধীনস্থ কর্মীও। পলাতক আছেন অনেকে। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সহায়তা না পেলে নিম্নপদের কর্মীদের পক্ষে প্রশ্ন ফাঁস করা সম্ভব নয়। এ কারণে নিয়োগ কমিটির সদস্যরা গোয়েন্দাদের নজরে রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রশ্নফাঁসে নিয়োগ কমিটিসহ অন্য আর কারা জড়িত, সেই রহস্য উদ্ঘাটন করতে কাজ করছে গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ। ইতোমধ্যে সন্দেহভাজনদের নজরদারিতে আনা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা।

সূত্র জানায়, নিয়োগ পরীক্ষার জন্য একটি কমিটি গঠন করে বিমান। কমিটির প্রধান বিমানের পরিচালক প্রশাসন। এছাড়া কমিটিতে আছেন—  মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ, বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ট্রেনিং সেন্টারের (বিএটিসি) অধ্যক্ষ এবিএম নাজমুল হুদা, মহাব্যবস্থাপক (জিএসই) তাইজ ইবনে আনোয়ার, মহাব্যবস্থাপক আইটি (ভারপ্রাপ্ত) মো. আনোয়ারুল হক।

তাইজ ইবনে আনোয়ার মূলত উপ-মহাব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) হিসেবে বিমানে যোগ দিয়েছেন। তবে একইসঙ্গে মহাব্যবস্থাপক (জিএসই) হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। আর নিয়োগ পরীক্ষা হয় জিএসই-তে বিভিন্ন পদের।

সূত্র জানায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ইঙ্গিত পেয়ে জড়িতদের নজরদারিতে রাখে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)। অনুসন্ধানে বিভিন্ন পদমর্যাদার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (লালবাগ) এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার একাধিক টিম ২১ অক্টোবর ধারাবাহিক অভিযান চালায়। পরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৫ কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর আরও ৪ জনসহ মোট ৯ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে বিমানের অফিস সহায়ক আওলাদ হোসেন, জাহিদ ও  জাভেদ  এবং পরিচালক প্রশাসনের দফতরের অফিস সহায়ক সোবহান আছেন। গ্রেফতার এমটি অপারেটর মোহাম্মদ মাহফুজ আলম ভূঁইয়া বিমানের গাড়িচালক।

গ্রেফতারকৃত আরেক এমটি অপারেটর মো. জাহাঙ্গীর আলম একসময় উপ-মহাব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) তাইজ ইবনে আনোয়ারের গাড়ি চালাতেন। তাইজ ইবনে আনোয়ারের বর্তমান গাড়িচালক মাসুদও গ্রেফতার হয়েছেন। মাসুদ ছুটিতে থাকলে তাইজ ইবনে আনোয়ারের গাড়ি চালান জাহাঙ্গীর আলম। গ্রেফতার হারুনুর রশিদ অর্থ পরিদফতরে অফিস সহায়ক হিসেবে কাজ করেন। এমটি অপারেটর মো. এনামুল হক জিএসই বিভাগে কাজ করেন।

গোয়েন্দারা এখন খুঁজছেন বিমানের গাড়িচালক মাহবুব আলী ও জিএম অ্যাডমিনের গাড়িচালক আব্দুল মালেকসহ কয়েকজনকে। এরমধ্যে চালক মাহবুব আলী পলাতক আছেন। এছাড়াও সন্দেহভাজনদের নজরদারিতে রেখেছেন পুলিশ ও গোয়েন্দারা।

প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার বিমানের কর্মীরা

প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার বিমানের কর্মীরাঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় তদন্ত চলমান আছে। গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে সন্দেহভাজনরা নজরদারিতে আছেন। প্রয়োজনে বিমানের নিয়োগ পরীক্ষা কমিটির সদস্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ২১ অক্টোবর শুক্রবার বিকাল ৩টায় ১০টি পদে জনবল নিয়োগের জন্য পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করেছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। পদগুলো হচ্ছে—জুনিয়র অপারেটর জিএসই (ক্যাজুয়াল), জুনিয়র টেইলর কাম আপহোলস্টার, প্রি-প্রেস অ্যাসিস্ট্যান্ট, জুনিয়র এয়ারকন মেকানিক, জুনিয়র ওয়েল্ডার জিএসই, জুনিয়র পেইন্টার জিএসই, জুনিয়র মেকানিক (টায়ার) জিএসই, জুনিয়র এমটি মেকানিক, জুনিয়র মেকানিক জিএসই (ক্যাজুয়াল), জুনিয়র ইলেকট্রিশিয়ান জিএসই (ক্যাজুয়াল)। তবে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠায় একঘণ্টা আগে পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হয় বিমান কর্তৃপক্ষ। পরে পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উত্তরায় পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ করেছেন চাকরি প্রার্থীরা।

জানা গেছে, প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া ৯ জনের মধ্যে ৫ জনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বিমান। অপরদিকে গত রবিবার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিমান। কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর