রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:১০ পূর্বাহ্ন

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘুদের পুনর্বাসনে একগুচ্ছ পদক্ষেপ

রিপোর্টার / ৯৩ বার
আপডেট : শুক্রবার, ২২ অক্টোবর, ২০২১

হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সম্প্রতি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপত্তা, পুনর্বাসন ও সহিংসতাকারী দুর্বৃত্তদের বিচার নিশ্চিত করতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। গুজব রটনাকারী ও হামলাকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা, হিন্দু-মুসলিম ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মনোবল বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক ও মানবিক সহায়তা দিচ্ছে সরকার। দলীয়ভাবেও অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০ হাজার ৬১৯ জনকে অভিযুক্ত করে ১০২টি মামলা দায়ের হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫৮৩ জনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে।

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার ঘটনায় সিসি টিভি ফুটেজ ধরে ইকবাল হোসেন নামে একজনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে কক্সবাজার থেকে ইকবালকে আটক করা হয়।

সার্বক্ষণিকভাবে অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যমে গুজব রটনা ও সাম্প্রদায়িক উস্কানির জন্য ১০ মামলায় এখন পর্যন্ত দুই ডজনের বেশি দুর্বৃত্তকে আটক করা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, কুমিল্লার ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে পীরগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘটনা ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে ঘর করে দেব এবং ইতোমধ্যে সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নগদ অর্থ সহায়তা, খাদ্য-বস্ত্র, গৃহনির্মাণ সামগ্রীসহ বিভিন্ন সহায়তা দিচ্ছে সরকার ও আওয়ামী লীগ।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টে দায়ী দুর্বৃত্তদের  বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করছে সরকার। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মনোবল বাড়াতে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল বাড়ানো হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের সহায়তা করছেন।

পুলিশ-র‌্যাব ও সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের পাশাপাশি ৩৭ জেলা ও তিনটি মেট্রোপলিটন শহরে ১১৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক টহল দিচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতা, সংসদ সদস্য, সরকার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও পরিস্থিতি মনিটরিং করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। কাউকে এ সম্প্রীতি নষ্ট করতে দেওয়া হবে না। এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী কাজ করছেন।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জানান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে এলাকায় এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি শান্তি-সম্মেলন, শান্তি-মিছিল ও সভা করছে দলটির নেতাকর্মীরা। শান্তি, শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে দলের সব স্তরের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বিরোধী প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। এছাড়া আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নগদ অর্থ, খাদ্য-বস্ত্র দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় টিম দেশের বিভিন্ন এলাকা সফর করবে।

এদিকে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এবং জেলার জনপ্রতিনিধিদের সর্তক থাকার ও নিজ নিজ এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তি বজায় রাখতে যথাযথভাবে দায়িত্বপালনের নির্দেশ দিয়েছে। রোববার এ বিষয়ে একটি ভার্চ্যুয়াল সভা করবে মন্ত্রণালয়।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ইতোমধ্যে কুমিল্লায় যেখানে পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগ এসেছে সে এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং প্রতিটি পরিবারকে নগদ পাঁচ হাজার টাকা ও ২০ কেজি চাল সহায়তা দিয়েছেন।

গত কয়েকদিনে প্রধান প্রধান ধর্মের ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। শান্তি বজায় রাখতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুবাতাস ছড়িয়ে দিতে ধর্মীয় নেতা ও ইমাম নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মু. আ. আউয়াল হাওলাদার।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ ও হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে শিশু খাদ্য, গো-খাদ্যের পাশাপাশি নগদ ১০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা দিয়েছেন।

দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহসিন জানান, ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু পরিবারগুলোকে মানবিক সহায়তা হিসেবে ঘর নির্মাণে ১০০ বান্ডেল টিন, নগদ চার লাখ ৪৫ হাজার টাকা এবং এক হাজার ২০০ প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছে। রংপুর জেলা প্রশাসনও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নয় লাখ টাকার নগদ অর্থ ও ১০০ বান্ডেল টিন দিয়েছে। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি তাৎক্ষণিকভাবে গৃহহীনদের আশ্রয়ের জন্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তাবু স্থাপন করেছে।

এছাড়া জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা রংপুরের পীরগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

সম্প্রতি কুমিল্লায় কোরআন অবমাননার অভিযোগ আসার পর সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনা ঘটে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর