রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:৪৯ পূর্বাহ্ন

প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে কৈলাসে দেবী দুর্গা

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ১৪৭ বার
আপডেট : বুধবার, ৫ অক্টোবর, ২০২২

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলো। বুধবার (৫ অক্টোবর) প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে কৈলাসে ফিরে গেলেন দেবী দুর্গা।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মানুষের মনের আসুরিক প্রবৃত্তি কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেওয়াই মূলত বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য। এ প্রবৃত্তিগুলো বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই এই আয়োজনের উদ্দেশ্য।

চণ্ডীপাঠ, বোধন ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে ষষ্ঠী তিথিতে ‘আনন্দময়ীর’ আগমনে গত ১ অক্টোবর থেকে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের সূচনা হয়। পরবর্তী ৫ দিন রাজধানীসহ দেশব্যাপী পূজামণ্ডপে পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে ভক্তরা দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়।

এবার দেবী দুর্গা জগতের মঙ্গল কামনায় গজে (হাতি) চড়ে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসেন। এতে ঝড়, বৃষ্টি হবে এবং শস্য ও ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে স্বর্গে বিদায় নেন নৌকায় চড়ে। যার ফলে জগতের কল্যাণ সাধিত হবে।

বুধবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে দর্পণ-বিসর্জনের মাধ্যমে বিদায় জানানো হয় দেবী দুর্গাকে। পরে বিকাল ৪টা থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন।

সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী ফিরে গেলেন স্বর্গলোকের কৈলাসে স্বামীর ঘরে। পরের বছর শরতে আবার তিনি আসবেন এই ধরণীতে, যা তার বাবার গৃহ। প্রতিমা বিসর্জনের জন্য সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ঢাকের বাদ্য আর গান-বাজনা ছাড়া বিদায়ের করুণ ছায়ায় সারিবদ্ধভাবে একে একে বুড়িগঙ্গা নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয় প্রতিমা। একই সময়ে মিরপুরে তুরাগ নদীতে চলে বিসর্জন। রাজধানীর প্রায় অর্ধশত মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় ওয়াইজঘাটে। সড়কে পুলিশের ও নদীতে ছিল নৌ-পুলিশের টহল। ফায়ার সার্ভিস টিমও দায়িত্ব পালন করে।

এর আগে সকালে প্রতিমা বিসর্জনের উদ্দেশে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলা প্রাঙ্গণ থেকে কেন্দ্রীয় বিজয়া শোভাযাত্রা বের হয়। দুপুরে পূজা উদযাপন পরিষদ এবং মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির যৌথ উদ্যোগে বের হয় বর্ণাঢ্য এ বিজয়া শোভাযাত্রা। বিজয়া শোভাযাত্রা ও প্রতিমা বিসর্জনে অংশ নিতে দুপুর গড়াতেই ভক্তরা রাজধানীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপ থেকে ট্রাকে করে প্রতিমা নিয়ে সমবেত হতে শুরু করেন ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণে।

পরে শত শত ট্রাক প্রতিমা নিয়ে সদরঘাটে রওনা দেয়। ঢাকেশ্বরী থেকে শুরু করে প্রতিমা যাত্রাটি শহীদ মিনার, হাইকোর্ট, পুলিশ হেডকোয়ার্টার, গোলাপ শাহ মাজার, কোর্ট এলাকা হয়ে সদরঘাট পৌঁছে। এ সময় রাস্তায় ও বিভিন্ন ভবনে পুলিশ ছিল সতর্ক অবস্থায়। রাস্তার পাশে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

অধিকাংশ মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হলেও ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রতিমাটি রেখে দেওয়া হয়। কিন্তু পূজার কাজে ব্যবহৃত দেবীর ফুল, বেলপাতা ও ঘট বিসর্জন দেওয়া হয়।

প্রথা অনুযায়ী প্রতিমা বিসর্জনের পর সেখান থেকে জল এনে (শান্তিজল) মঙ্গলঘটে নিয়ে তা আবার হৃদয়ে ধারণ করা হয়। আগামী বছর আবার এই শান্তিজল হৃদয় থেকে ঘটে, ঘট থেকে প্রতিমায় রেখে পূজা করা হবে। রামকৃষ্ণ মিশনে সন্ধ্যা আরতির পর মিশনের পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। এরপর ভক্তরা শান্তিজল গ্রহণ ও মিষ্টিমুখ করেন।

সারা দেশে এ বছর ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা মহানগরে মণ্ডপের সংখ্যা ২৪১টি। এসব মণ্ডপে শারদীয় উৎসব নির্বিঘ্নে উদযাপনের জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি প্রতিটি পূজা উদযাপন কমিটিও নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রতিটি মণ্ডপে লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি করা হয়েছে মণ্ডপ পাহারার জন্য। খবর বাসস।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর