রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৩:২৯ পূর্বাহ্ন

পায়রা বন্দর থেকে ২০২২ সালে সরকারের আয় ৩৯০ কোটি টাকা

ভয়েস বাংলা রিপোর্ট / ৩৩ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারী, ২০২৩

দেশের তৃতীয় পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ২০২২ সালে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ৩৯০ কোটি টাকা। গত এক বছরে বন্দরে দেশি-বিদেশি লাইটার জাহাজ ও বাল্কহেড নিয়ে ৯৪৬টি জাহাজ পণ্য খালাস করেছে। এর মধ্যে দেশি ৮২৫টি ও বিদেশি ১২১টি।

অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু থেকে এ পর্যন্ত পায়রা বন্দর থেকে সরকারের মোট আয় হয়েছে ৭৬৪ কোটি টাকা। আর দেশি-বিদেশি এক হাজার দুই শ’ ৯১টি জাহাজ পণ্য খালাস করেছে। এ তথ্য বন্দর সূত্রের। এখন শুধু এগিয়ে চলার বাংলাদেশ; এমন টার্গেট নিয়ে দেশের অর্থনীতিতে যোগান দিয়ে যাচ্ছে পায়রা সমুদ্র বন্দর। খুলে গেছে তৃতীয় করিডোর।

এগিয়ে চলার বাংলাদেশ, এই স্লোগান নিয়ে পায়রা বন্দর এখন দৃশ্যমানভাবে পাকাপোক্ত হয়ে দেশের অর্থনীতির যোগান দিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক এ যাত্রা শুরু হয়েছে ২০১৬ সালের পহেলা আগস্ট। ওই দিন থেকে ফরচুন বার্ড নামের মাদার ভেসেল নাম লিখেছে প্রথম পণ্যবাহী জাহাজ হিসেবে এই বন্দরের ইতিহাসে। আর এই শুভক্ষণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর তখন থেকে অর্থনীতির তৃতীয় করিডোর পায়রার দ্বার উম্মোচিত হয়। শুরু হয় পন্য আমদানি এবং খালাশের কার্যক্রম।

এখন রাবনাবাদ চ্যানেলে প্রতিদিন লাইটার জাহাজে পন্য আনা-নেয়ার কাজ চলছে। রয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য। ইতিমধ্যে পায়রা বন্দর প্রকল্প এলাকায় প্রশাসনিক ভবন, সার্ভিস জেটি, পন্টুন, সিকিউরিটি ভবন, ওয়্যার হাউস, পানি শোধনাগার চালু হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীর আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।

পায়রার রাবনাবাদ চ্যানেলের চারিপাড়ায় নির্মাণ কাজ চলছে প্রথম টার্মিনাল এবং কন্টেইনার ইয়ার্ড। সবকিছু ঠিক থাকলে নতুন বছরের মার্চ মাসে এ টার্মিনালের উদ্বোধন কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এর উদ্বোধন করবেন। প্রথম টার্মিনাল এবং কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণের জন্য পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং চীনের সিএসআইসি ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের মধ্যে ২০২০ সালের ৩০ জুন চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়। ৬৫০ মিটার দীর্ঘ প্রথম টার্মিনাল নির্মিত হলে সরাসরি পণ্যবাহী মাদার ভ্যাসেল ভিড়তে পারবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৩৪ কোটি ৪০ লাখ ৮১ হাজার ২০৩ কোটি টাকা। কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মিত হলে বছরে প্রায় আট লাখ ৫০ হাজার টিইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা যাবে।

এছাড়া চ্যানেলের দীর্ঘ ৭৫ কিলোমিটার এলাকার খনন কাজ শেষ হলে দেশের সবচেয়ে বেশি গভীরতম চ্যানেল হবে রাবনাবাদ চ্যানেল। যথসময় শেষ করতে ক্যাপিট্যাল ড্রেজিংএর কাজ চলছে দ্রততার সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী ২৭ অক্টোবর এসব কাজের ভিত্তি প্রস্তর এবং উদ্বোধন করেছেন। কন্টেইনার ইয়ার্ডের কাজের আওতায় তিন লাখ ২৫ হাজার বর্গমিটার ব্যাকআপ ইয়ার্ড, প্রশাসনিক ভবন, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, ওয়ার্কশপ, ফায়ার স্টেশন, কন্টেইনার ফ্রেইড স্টেশন, গেট হাউস, ফুয়েল স্টেশন, ভূ-গর্ভস্থ পানির আধার, পাম্প হাউস নির্মিত হবে। এ টার্মিনাল নির্মাণ পরিকল্পনা, নকশা, প্রাক্কলন এবং প্রকল্প চলাকালীন কাজ দেখাশোনার জন্য কোরিয়ান পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কুনহুয়া ডাইয়ং হেরিমকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ২০২০ সালের ১৮ জুন কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণের কাজটি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটি (সিসিজিপি) অনুমোদন দিয়েছে।

পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) আজিজুর রহমান জানান, আনুষঙ্গিক সকল সুবিধাসহ পায়রা বন্দরকে পুরোপুরি চালু করা গেলে দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীরা পায়রা বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠবে। এর ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যেমন উন্নতি হবে, তেমনি দেশও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে। আগামীতে পায়রা বন্দর পরিপূর্ণ সক্ষমতার সঙ্গে যাত্রা শুরু করবে এবং বৈদেশিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে। পায়রাকে ঘিরে দেশের অর্থনীতিতে নতুন করিডোর হওয়ায় সম্ভাবনার দূয়ার খুলে গেল।

২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার রামনাবাদ মোহনায় আন্ধার মানিক নদীর তীরে টিয়াখালীতে ১৬ একর জমির ওপর দেশের তৃতীয় ‘পায়রা সমুদ্র বন্দর’ প্রকল্প কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর আর থামেনি উন্নয়নের অগ্রযাত্রা। বর্তমানের রাবনাবাদ পাড়ের চারিপাড়া পয়েন্টে দিনরাত চলছে প্রথম টার্মিনাল নির্মান কাজ। আর চ্যানেলে চলছে খননের কাজ। এখন দেশের তথা বিশ্বের মানুষের দৃষ্টি এখন পায়রা বন্দরের দিকে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর