রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৪:১৮ পূর্বাহ্ন

পদ্মাপারের ছাত্রী ইউক্রেন থেকে ফিরলেন ভারতের ‘গঙ্গা অভিযানে

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৮০ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০২২

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে হাজার হাজার ভারতীয় ছাত্রছাত্রী ও নাগরিককে দেশে ফেরাতে ভারত যে ‘অপারেশন গঙ্গা’ নামের অভিযান শুরু করেছে, তাতে একজন বাংলাদেশি ছাত্রীকেও বিনা খরচে নিজের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাঙ্গেরি থেকে ওই তরুণীকে দিল্লিগামী বিমানে তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা নিয়েছিলেন ভারতের সিনিয়র কেবিনেট মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী।

যে কোনও কারণেই হোক, এই প্রত্যাবাসনের ঘটনাটি নিয়ে ভারত বা বাংলাদেশ – কোনও দেশের সরকারই বিশদে বা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। গত ৩ মার্চ রাতে হাঙ্গেরি থেকে ইন্ডিগো এয়ারলাইনের বিমানে ওই বাংলাদেশি ছাত্রী দিল্লিতে এসে নামেন, যদিও তার ভারতের ভিসা ছিল না। নানা জটিলতায় তাকে আরও দুই দিন দিল্লিতেই কাটাতে হয় – অবশেষে গত রবিবার (৬ মার্চ) একেবারে নীরবেই ওই তরুণী ঢাকায় নিজের পরিবারের কাছে ফিরে গেছেন। যেভাবে তিনি ‘অপারেশন গঙ্গা’র বিমানে জায়গা করে নিতে পেরেছিলেন, সেই কাহিনিও কম রোমাঞ্চকর নয়।

ওই বাংলাদেশি তরুণী আসলে ইউক্রেনের একটি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রথম কদিন তিনি নিজের হোস্টেলেই ছিলেন, কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করলে আরও একদল ভারতীয় বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মিলে তারা একটি বাসে করে ইউক্রেনের পশ্চিম সীমান্তের দিকে রওয়ানা হন। সীমান্তে অনেক ভোগান্তি ও দীর্ঘ অপেক্ষার পর তারা অবশেষে হাঙ্গেরিতে ঢুকতে সক্ষম হন।

ওই মেয়েটি কিন্তু ততক্ষণে তার বাংলাদেশি বন্ধুদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে পড়েছিলেন। হাঙ্গেরিতে একটি এনজিও ও ভারতীয় দূতাবাস ভারতের ছাত্রছাত্রীদের যে হোটেল-ক্যাম্পে রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন, তারও আশ্রয় জোটে সেখানেই। কিন্তু বিপত্তি বাধে যখন দলের বাকিরা ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে উদ্ধারকারী বিমানে চাপার তোড়জোড় করছেন – বাংলাদেশি মেয়েটি তখন কী করবেন, কোথায় যাবেন তা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। দূতাবাসের কর্মীরাও বুঝে উঠতে পারছিলেন না ওই তরুণীকে কীভাবে সাহায্য করা সম্ভব। তখনই উদ্ধারকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন ভারতের পেট্রোলিয়াম ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী – ইউক্রেন-ফেরত ভারতীয়দের উদ্ধার অভিযান তদারকি করতে প্রধানমন্ত্রী মোদি যাকে ‘বিশেষ দূত’ হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে হাঙ্গেরিতে পাঠিয়েছিলেন।23বুদাপেস্ট বিমানবন্দরে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে হরদীপ সিং পুরী

বুদাপেস্ট বিমানবন্দরে ওই ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, ‘ওই মেয়েটি তো বটেই, তার ভারতীয় বন্ধুরাও সবাই মিলে মন্ত্রীকে অনুরোধ জানান – দিল্লির বিমানে তারও একটা ফেরার ব্যবস্থা করে দিতে। হরদীপ সিং পুরী গোটা বিষয়টা শুনে আশ্বাস দেন, যদিও ওর ভারত সফরের জন্য সঠিক ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট বা ভিসা নেই, তারপরেও উনি নিজে দায়িত্ব নিয়ে ওই মেয়েটিকে বিমানে তুলে দেবেন।

ভারতের সাবেক সিনিয়র কূটনীতিবিদ ও বর্তমানে ক্যাবিনেট মন্ত্রী মি. পুরী পরে ঘনিষ্ঠ মহলেও জানিয়েছেন, সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব দিয়েই প্রধানমন্ত্রী আমাকে হাঙ্গেরি পাঠিয়েছিলেন, সমস্যা বাড়ানোর জন্য নয়। ঠিক সেই কারণেই আমি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ও নিয়মকে পাশ কাটিয়ে বন্ধুপ্রতিম দেশের মেয়েটিকেও দিল্লির বিমানে তুলে দিই।

সমস্যার অবশ্য এতেই শেষ হয়নি– দিল্লিতে বিমানটি নামার পর ভারতের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সকে বলে, উপযুক্ত ভিসা ও প্রয়োজনীয় কোভিড ভ্যাক্সিনেশন সার্টিফিকেট ছাড়াই একজন বিদেশি নাগরিককে তারা ভারতে নিয়ে এসেছে, তাই তাদের এক লাখ রুপি জরিমানা করা হবে। ভারতে ঢুকতে পারবেন না ওই তরুণীও।

হরদীপ সিং পুরী সঙ্গে সঙ্গে ফোন করেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় কুমার ভাল্লাকে, পুরো ঘটনা তাকে বুঝিয়ে বলেন। স্বরাষ্ট্র সচিব সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেন, তারপর সব সমস্যা মেটে। অপারেশন গঙ্গায় অংশ নেওয়া ইন্ডিগো এয়ারলাইনের একটি বিমান

ভিসা-ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট এবং কোভিড টেস্ট ও সার্টিফিকেশনের সব জটিলতা কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশের ওই হিন্দু তরুণী সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে নিজের পরিবারের কাছে ফিরে গেছেন। দিল্লিতে থাকাকালীন বাংলাদেশ দূতাবাসও তাকে সব রকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।

কেন এই প্রত্যাবাসন নিয়ে ভারত বিস্তারিত কিছু জানায়নি, এ প্রশ্নের জবাবে দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, এটা ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করার মতো কোনও ব্যাপার নয়। বিদেশ-বিভূঁইয়ে বিপদে পড়া পদ্মাপারের মেয়েকে আমরা গঙ্গা অভিযানের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি, সেটাই বড় ব্যাপার।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর