রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৪:১৮ পূর্বাহ্ন

উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় প্রধানমন্ত্রীর

ভয়েস বাংলা রিপোর্ট / ৩৭ বার
আপডেট : শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২২

উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নারী জাগরণের মধ্যেই আমাদের সকলের সম্মিলিত অংশগ্রহণে বাংলাদেশকে একটি উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। নারী জাগরণের মধ্য দিয়েই ১৯৪১ সাল নাগাদ সেই বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এ জন্য ডেল্টা প্ল্যান ও করে দিলাম যাকে ভিত্তি করে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারে।

আজ সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বেগম রোকেয়া দিবস-২০২২’ ও ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২২’ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য পাঁচ বিশিষ্ট নারীকে ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২২’ প্রদান করেন। পদক প্রাপ্তরা হলেন- রহিমা খাতুন, অধ্যাপক কামরুন নাহার বেগম, অ্যাডভোকেট ফরিদা ইয়াসমীন, ড. আফরোজা পারভিন এবং নাসিমা বেগম। পদক প্রাপ্তদের প্রত্যেককে একটি করে স্বর্ণ পদক, চার লাখ টাকার চেক ও সনদ পত্র প্রদান করা হয়। পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে ড. আফরোজা পারভীন নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বেগম রোকেয়ার জীবন ও কর্মের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমাদের নারীদের শিক্ষা, নারীদের জাগরণ, নারীদের যতটুকু অর্জন এর পেছনে বেগম রোকেয়ার অবদান রয়েছে। ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়ার জন্মদিন। তিনি যদি সেই অচলায়তন ভেঙে নিজে শিক্ষা গ্রহণ করে মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা না করতেন, তাহলে আমরা আজকে যে যেখানে আছি, কেউ থাকতে পারতাম না। তিনি বলেন, বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন ছিল মেয়েরা জজ-ম্যাজিস্ট্রেট হবে। নারীরা সমস্ত দায়িত্ব নেবে। তিনি যে আকাঙ্খা করেছিলেন আমরা কিন্তু ধীরে ধীরে তা অর্জনের পথে।

নারী অগ্রযাত্রায় আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমান, নৌ, সেনাবাহিনী, আগে বর্ডার গার্ডে কোনো মেয়ে ছিল না। সব জায়গায় মেয়েদের সুযোগ করে দিয়েছি। জাতির পিতা পুলিশে কিছু মেয়ে নিয়োগ দিয়ে গিয়েছিলেন। আমি দেখলাম কোনো ডিসি, এসপি পদে মেয়েদের স্থান নেই। বলা হতো, মেয়েরা পারবে না। সচিব নেই। মেয়েদের স্থান অনেক নীচে। সিনিয়রিটির ক্ষেত্রে এক সঙ্গে তালিকা করা হতো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবাই যোগ্য (নারী/পুরুষ)। কাউকে আমি অযোগ্য বলছিনা। কিন্তু আমাদের এই সমাজকে তো উৎসাহিত করতে হবে। সেটাই আমার লক্ষ্য সেটিই আমরা করে যাচ্ছি। আমি বলেছি, মেয়েদের আলাদা লিস্ট চাই। সব জায়গায় ফাইট করে আনতে হয়েছে। তারপরও তারা সচিব পর্যায়ে উঠতে পারে না। প্রশাসনে একটি ব্যবস্থা আছে, রাষ্ট্রপতির কোটায় ১০ শতাংশ অফিসার নিয়োগ দেয়া যায়। আমি সেই কোটা ধরে প্রথম মেয়ে নিয়োগ দিলাম। আমার অফিসে সচিব হিসেবে প্রধানমন্ত্রী দপ্তরে প্রথম নিয়োগ দিলাম। এভাবে দরজা খুলে দিয়েছি। প্রথম এসপি যখন করতে গেছি, প্রচণ্ড বাধা। মেয়েরা এসপি হবে! আমি বলেছি, হ্যাঁ, মেয়েরাই এসপি হবে।

সরকার প্রধান বলেন, আমাদের নারীরা যারা বাইরে কাজ না করে শুধু সংসারে কাজ করে সেখানেও কিন্তু অনেক কাজ। এটাও তাদের কর্মক্ষেত্রে শ্রম হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। অনেকে গবেষণা করেন, মেয়েরা কোথায় কোথায় কাজ করছে, এই জায়গায় যেখানে দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়। সেই জায়গাকে কর্মক্ষেত্র হিসেবে গ্রহণ করা হয় না। আমার মনে হয়, এটা ঠিক নয়। তিনি বলেন, তার সরকার সারাদেশে ডিজিটাল সেন্টার ও ফ্রি ল্যান্সারদের স্বীকৃতি দিয়েছে এবং ‘লার্নিং এন্ড আর্নিং’ প্রজেক্টের মাধ্যমে নারীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। যেখানে উদ্যোক্তা একজন নারী এবং একজন পুরুষ। সেখানে সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে দেশের নারী সমাজ। আর এর মাধ্যমে স্বল্প শিক্ষিত একজন নারীও ঘরে বসে অর্থ উপার্জন করতে পারে।

সরকার প্রধান বলেন, কাজেই সারাদিন ঐ ফেসবুক আর এসব না দেখে তারা যদি এই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেয়, ফ্রি-লান্সিং করে তাহলে কিন্তু সেখানে বসে সে কিছু অর্থ উপার্জন করতে পারে। একটি প্রত্যন্ত ইউনিয়নে বসে কিছু শিক্ষা নিয়ে সে দেশে-বিদেশে অর্থ উপার্জনের সুযোগ পাচ্ছে। যেটা অনেক ছেলে-মেয়ে করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, তার সরকার কম্পিউটার প্রযুক্তি শিক্ষা একেবারে জেলা এবং উপজেলা ভিত্তিক করে দিয়েছে। গ্রামে গ্রামে সুবিধার জন্য ‘তথ্য এপিএ’ সার্ভিস চালু করেছে এবং এর মধ্যদিয়ে বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন পূরণ প্রায় হয়েছে। কারণ, দেশের সংসদে স্পিকার, সংসদ নেতা, বিরোধী দলীয় নেতা এবং সংসদ উপনেতা এই চারজনই মহিলা। দুর্ভাগ্যের বিষয় আপনারা জানেন আমাদের সংসদ উপনেতা বেগম সাজেদা চৌধুরী কিছুদিন আগে মৃত্যুবরণ করেছেন। তবে, এই শূন্যস্থান পূরণ আমরা একজন নারীকে দিয়েই করবো।

প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় লিঙ্গ প্রসঙ্গে বলেন, এরা তো কোনো অপরাধ করেনি! এরা তো বাবা-মায়েরই সন্তান। বাবা-মাকে ফেলে দিয়ে তাদের রাস্তায় চলে যেতে হবে কেন? তাদের কোনো জীবন-জীবিকার কিছু থাকবে না-এটাতো হতে পারে না। শুধু নারী অধিকার-নারী অধিকার বলে অনেকে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। কখনো এই শ্রেণির কথা কেউ চিন্তা করেন নি। আমরা সংবিধানে তাদের স্বীকৃতি দিয়েছি। তারা বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকবে, লেখাপড়া শিখবে, চাকরি পাবে, কাজ-প্রশিক্ষণ পাবে, একটা সুস্থ জীবন তারা পাবে। প্রতিটি ফরমে নারী-পুরুষের সঙ্গে থার্ড জেন্ডার আমরা লাগিয়ে দিয়েছি।

সরকার প্রধান বলেন, এই করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং নিষেধাঞ্জা প্রত্যেকটা মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। শুধু আমাদের দেশ নয়, উন্নত দেশগুলো আরো খারাপ অবস্থায় আছে। সে জন্য আমি সকলকে আহবান জানাচ্ছি, যার যেখানে যতটুকু জায়গা আছে সেখানে যে যা পারেন উৎপাদন করেন। বিদ্যুৎ,পানি, তেল ব্যবহারে সবাই সাশ্রয়ী হোন। সবাই সঞ্চয়ী হোন যেন এই আন্তর্জাতিক বিশে^ যে অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা এসেছে সেই ধাক্কা যেন আমাদের দেশে আসতে না পারে। আমাদের নিজেদেরকেই নিজেদের সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। যেটা আমরা ইতোমধ্যেই নিয়েছি। তিনি বলেন, মাঝে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে মানুষের কিছু কষ্ট হচ্ছে তবে, এটা আন্তর্জাতিক একটা অবস্থার কারণে কিন্তু আমরা যদি আমাদের উৎপাদন ঠিক রাখি, নিজেদেরটা নিজেরা করবো। কারো কাছে হাত পেতে চলবো না, ভিক্ষা করে চলবো না।

যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার সময় জাতির পিতা বলেছিলেন, তার ‘মাটি ও মানুষ’ আছে তা দিয়েই তিনি দেশকে গড়ে তুলবেন, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই চিন্তা থেকেও আমরা যদি প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করি, সবাই যদি একটু মিতব্যয়ী হই, সাশ্রয়ী হই, ইনশাল্লাহ মন্দা আমাদেরকে গ্রাস করতে পাবে না। আন্তর্জাতিকভাবে অনেক উন্নত দেশ এখন নিজেদেরকে অর্থনৈতিক মন্দার দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশ আল্লাহর রহমতে এখনো দেয়নি, দেয়া লাগবে না বলে আমি বিশ্বাস করি। কারণ, আমরা নিজেরাই নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে চলবো, এগিয়ে যাব। এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ, এগিয়ে যাবে নারী সমাজ। সূত্র: বাসস


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর