রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন

নাইজারে ক্যু: বাড়ছে রুশ সমর্থন ও ফরাসি বিরোধিতা

ভয়েস বাংলা প্রতিবেদক / ৯ বার
আপডেট : সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০২৩

নাইজারে অভ্যুত্থানের পর পশ্চিমাদের প্রতি ক্রমবর্ধমান শত্রুতাপূর্ণ মনোভাবের প্রদর্শন হিসেবে এক ব্যবসায়ী গর্বের সঙ্গে নিজের গায়ের পোশাক রাশিয়ার পতাকার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি করেছেন। এলাকাটি উৎখাত হওয়া প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমের ঘাঁটি বলে পরিচিত। অভ্যুত্থানের পর থেকে নাইজারের সেনাবাহিনী ও পশ্চিমাদের মধ্যে কথার লড়াই শুরু হয়েছে। ইসলামি জঙ্গিবাদবিরোধী লড়াইয়ে পশ্চিমাদের একজন ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন বাজুম। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন একজন শক্তিশালী অর্থনৈতিক অংশীদার।
নাইজারে ফ্রান্সের একটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে এবং দেশটি বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম ইউরেনিয়াম উৎপাদনকারী। এই জ্বালানি পারমাণবিক বিদ্যুতের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এসব ইউরেনিয়ামের এক-চতুর্থাংশ ইউরোপ যায়, বিশেষ করে সাবেক উপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্সে। জেনারেল আবদোরাহমানে চিয়ানি ২৬ জুলাই প্রেসিডেন্টকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাতের পর হঠাৎ করেই নাইজারের রাজপথে রাশিয়ার পতাকা হাজির হতে শুরু করেছে।
রবিবার রাজধানী নিয়ামেতে হাজারো মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। অনেকের সঙ্গে ছিল রাশিয়ার পতাকা, এমনকি ফরাসি দূতাবাসেও হামলা হয়। রাশিয়ার প্রতি সমর্থন নাইজারজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে।
মধ্যাঞ্চলীয় শহর জিন্দারে অবস্থানকারী ওই ব্যবসায়ী নিরাপত্তার কারণে নিজের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি। বিবিসিকে তিনি বলেন, আমি রাশিয়াপন্থি এবং ফ্রান্সকে পছন্দ করি না। ছোটবেলা থেকেই আমি ফ্রান্সের বিরোধিতা করে আসছি। ফরাসিরা ইউরেনিয়াম, পেট্রোল ও স্বর্ণের মতো মূল্যবান সব সম্পদ শোষণ করেছে। ফ্রান্সের কারণে নাইজারের দরিদ্ররা তিন বেলা খেতে পারছে না।
ওই ব্যবসায়ী বলেছেন, সোমবার সামরিক অভ্যুত্থানকারীদের সমর্থনে জিন্দারে হাজারো মানুষ অংশ নিয়েছে। তার দাবি, তিনি রাশিয়ার পতাকার রঙে একটি পোশাক তৈরি করিয়েছেন স্থানীয় দর্জিকে দিয়ে। রুশপন্থি গ্রুপের পক্ষ থেকে এই পোশাক সরবরাহের কথা অস্বীকার করেছেন তিনি।
নাইজারের মোট জনসংখ্যা ২৪.৪ মিলিয়ন। প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে দুজন চরম দরিদ্র। ২০২১ সালে ক্ষমতায় আসেন প্রেসিডেন্ট বাজুম। ১৯৬০ সালে স্বাধীনতার পর প্রথম গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর ছিল তা। কিন্তু তার সরকার ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও আল-কায়েদা গোষ্ঠীর অনুগত ইসলামি জঙ্গিবাদের নিশানায় পরিণত হয়। সাহারা মরুভূমি থেকে থেকে সাহেল অঞ্চলে এসব গোষ্ঠীগুলো সক্রিয়।
ইসলামপন্থিদের চাপের মুখে নাইজারের প্রতিবেশী মালি ও বুরকিনা ফাসোতে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে। দেশ দুটি ফ্রান্সের সাবেক উপনিবেশ ও ফরাসিদের উল্লেখযোগ্য স্বার্থ রয়েছে। সেনাবাহিনীর দাবি, তাদের ক্ষমতা দখল জিহাদিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোগিতা করবে।
নাইজারের মতো উভয় দেশেই অতীতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফরাসি সেনা ইসলামি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোগিতা করে আসছিল। কিন্তু জঙ্গি হামলা অব্যাহত থাকায় ফরাসিবিরোধী মনোভাব বাড়তে থাকে পুরো অঞ্চলে। তিনটি দেশের মানুষেরা অভিযোগ করতে শুরু করে, জঙ্গিবাদ দমনে পর্যাপ্ত ভূমিকা রাখছে না ফ্রান্স।ক্ষমতা গ্রহণের পর মালির সেনাবাহিনী রাশিয়ার ভাড়াটে গোষ্ঠী ওয়াগনার গ্রুপকে স্বাগত জানায়। এর আগে অবশ্য তারা ফরাসি সেনাদের দেশ থেকে বিদায় করে এবং হাজারো জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের প্রত্যাহারে চাপ দেয়। যদিও মালিতে জঙ্গি হামলা অব্যাহত রয়েছে। বুরকিনা ফাসোও রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ হয়েছে। কয়েক শ’ ফরাসি সেনাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
নাইজারে বাজুম প্রশাসন ফ্রান্সবিরোধী বিক্ষোভ নিয়মিত নিষিদ্ধ করে আসছিল। ২০২২ সালের মাঝামাঝিতে বেশ কয়েকটি সুশীল সমাজ গোষ্ঠী ফ্রান্সের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জোরদার করে। ওই সময় বাজুমের প্রশাসন ফরাসি সেনাদের নাইজারে পুনরায় মোতায়েনের অনুমোদন দেয়। মালি ছাড়ার নির্দেশের পর তাদের নাইজারে মোতায়েন করা হয়।
ফ্রান্সবিরোধী গোষ্ঠীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এম৬২। ২০২২ সালে অ্যাক্টিভিস্ট, সুশীল সমাজ ও ট্রেড ইউনিয়ন এই জোট গড়ে তুলে। তারা জীবনযাত্রার মূল্যবৃদ্ধি, দুর্বল শাসনব্যবস্থা ও ফরাসি সেনাদের অবস্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ডাক দেয়। এদের পরিকল্পিত বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে নাইজার কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। গোষ্ঠীটির নেতাকে ২০২৩ সালের এপ্রিলে ৯ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাজুম ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে এম৬২।
রাষ্ট্রীয় টিভিতে গোষ্ঠীটির সদস্যদের জান্তা সমর্থনে গণবিক্ষোভ আয়োজনের পক্ষে কথা বলতে দেখা গেছে। এমনকি অভ্যুত্থানের কারণে পশ্চিম আফ্রিকার নেতাদের নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতাও করেছে তারা। এই গোষ্ঠীটি জান্তা সংশ্লিষ্ট ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর সেফগার্ডিং দ্য হোমল্যান্ড বা রাশিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কি না তা স্পষ্ট নয়। কিন্তু রবিবার আয়োজিত বিক্ষোভের মূল সংগঠন ছিল তারাই। তাদের ডাকে ছোট ছোট সুশীল সমাজ গোষ্ঠী অংশগ্রহণ করে।
নাইজারকে রাশিয়া সহযোগিতা করতে পারে ইতিবাচক জিন্দারের ওই রুশপন্থি ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, আমি রাশিয়া আমাদের সহযোগিতা করুক নিরাপত্তা ও খাদ্যে। আমাদের কৃষির উন্নতির জন্য রাশিয়া প্রযুক্তি সরবরাহ করতে পারে। তবে জিন্দারে বসবাসকারী মৌতাকা নামের অপর এক ব্যক্তি এই যুক্তি প্রত্যাখ্যান করছেন। তিনি বলছেন, অভ্যুত্থান সবার জন্যই খারাপ। বলেন, আমি দেশে রাশিয়ার আগমন সমর্থন করি না। কারণ তারা সবাই ইউরোপীয়। কেউ আমাদের সহযোগিতা করবে না। আমি দেশকে ভালোবাসি এবং আশা করি আমরা শান্তিতে বসবাস করতে পারব। সূত্র: বিবিসি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর