রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০১:২৩ পূর্বাহ্ন

দেশে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা বেশি!

ভয়েস বাংলা রিপোর্ট / ৩৯ বার
আপডেট : শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নারী ও পুরুষের হার প্রায় সমান বা কাছাকাছি হলেও বাংলাদেশে চিত্রটা ভিন্ন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তির মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৬১ দশমিক ০৬ শতাংশ এবং নারী ৩৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নারী ও পুরুষ প্রায় সমান সমান, বা সামান্য কমবেশি হবে। সমাজ বাস্তবতার কারণে এই শ্রেণির নারীদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না। অনেক নারী নিজেকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় দিতে চান না। আবার অনেকে বলছেন, নারী-পুরুষের শতকরা হারে তফাতের আরও একটি বড় কারণ সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন বেশি পুরুষ।

জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগের সমাজসেবা কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মো. সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের চিত্র এবং আন্তর্জাতিক চিত্র অনুযায়ী নারী ও পুরুষের মধ্যে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তির হার প্রায় সমান, কিংবা সামান্য কমবেশি হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে যারা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তাদের শতকরা হারে পুরুষ বেশি। যা প্রকৃত চিত্র নয় বলে আমাদের মনে হয়েছে। সামাজিক নানা কারণে নারীরা নিজেদের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে চাননি। অনেক নারী বা তার পরিবারের লোকজন  বিষয়টি আড়াল করতে চাচ্ছেন। এখানে অসচেতনতাই প্রধান কারণ। সে জন্য আমরা সচেতনতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ জরিপ কর্মসূচির পরিচালক ফরিদ আহমেদ মোল্লা বলেন, ওইসব ব্যক্তির শনাক্তকরণ কর্মসূচি পরিচালনা করতে গিয়ে দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে বেশি পুরুষ দুর্ঘটনার শিকার হয়। ফলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি হিসাবে পুরুষের সংখ্যা বেশি হওয়া অন্যতম একটি কারণ। অসচেতনতাসহ অন্যান্য কারণ তো রয়েছেই। তবে সরকারের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের ভাতা দেওয়ার কারণে এখন অনেকেই আগ্রহ নিয়ে এই শ্রেণির ব্যক্তি হিসেবে হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন।

ঢাকা বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের সরবরাহ করা তথ্যে জানা গেছে— তীব্র, মাঝারি ও মৃদু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী—মোট বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে বিশ্বে পুরুষ  ৪৫ দশমিক ৯ শতাংশ এবং নারী ৩৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশে মোট বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তির মধ্যে পুরুষ ৬১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ এবং নারী ৩৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে শূন্য থেকে ১৪ বছরের মোট বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তির মধ্যে পুরুষ ২ দশমিক ৯ শতাংশ আর নারী ২ দশমিক ৮ শতাংশ। ১৫ থেকে ৫৯ বছরের মানুষের মধ্যে পুরুষ ১২ দশমিক ৩ শতাংশ আর নারী ১২ দশমিক ৬ শতাংশ। ৬০ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সী বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তির মধ্যে পুরুষ ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ আর নারী ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ।

আফ্রিকায় শূন্য থেকে ১৪ বছরের মোট বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তির মধ্যে পুরুষ ৬ দশমিক ৪ শতাংশ আর নারী ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। ১৫ থেকে ৫৯ বছরের মানুষের মধ্যে পুরুষ ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ আর নারী ২১ দশমিক ৬ শতাংশ। ৬০ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সী মোট বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তির  মধ্যে পুরুষ ৫২ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৫৪ দশমিক ৩ শতাংশ।

আমেরিকায় শূন্য থেকে ১৪ বছরের মোট বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তির মধ্যে পুরুষ ৪ দশমিক ৬ শতাংশ আর নারী ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। ১৫ থেকে ৫৯ বছরের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের মধ্যে পুরুষ ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ আর নারী ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ। ৬০ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সী মোট বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তির মধ্যে পুরুষ ৪৫ দশমিক ১ শতাংশ আর নারী ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শূন্য থেকে ১৪ বছরের মোট বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তির মধ্যে পুরুষ ৫ দশমিক ৩ শতাংশ আর নারী ৫ দশমিক ২ শতাংশ। ১৫ থেকে ৫৯ বছরের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের মধ্যে পুরুষ ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ আর নারী ১৮ শতাংশ। ৬০ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সী মোট বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের মধ্যে পুরুষ ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং নারী ৬০ দশমিক ১ শতাংশ। এছাড়া ইউরোপ, ভূমধ্য পূর্ব এলাকা, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার চিত্রেও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের  ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের অনুপাত প্রায় সমান অথবা সামান্য কমবেশি। অথচ বাংলাদেশে পুরুষ বেশি দেখা যাচ্ছে।

এসব চিত্রের বিপরীতে বাংলাদেশে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের  মধ্যে নারীর চেয়ে পুরুষ বেশি। অথচ অনেক দেশে নারীর চেয়ে পুরুষ কম। বাংলাদেশে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন ২৯ লাখ ৬৭ হাজার ৫৬৮ জন। এরমধ্যে নারী অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন ১১ লাখ ৫২ হাজার ৮১৬ জন। অপরদিকে পুরুষ অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন ১৮ লাখ ১১ হাজার ৭৭ জন। আর তৃতীয় লিঙ্গ অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭৭৫ জন। হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট প্রতিবন্ধীর মধ্যে পুরুষ ৬১ দশমিক ৬ শতাংশ এবং নারী ৩৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর