রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৮:৩৭ পূর্বাহ্ন

দীর্ঘ আড়াই বছর পর ডিসি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ২৩৬ বার
আপডেট : বুধবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২২

করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ আড়াই বছর পর জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সম্মেলন আগামী ১১, ১২ ও ১৩ জানুয়ারির পরিবর্তে  ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি (মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বড় অনুষ্ঠান থাকার কারণে তা পেছানো হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ১৮ জানুয়ারি সকাল ১০টায় ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। এবারের সম্মেলনে দেশের ৬৪ জেলার ডিসি ও ৮ বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারসহ অন্য কর্মকর্তারা এবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নয়, রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন থেকে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি  বাসভবন গণভবন থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।

নতুন তারিখ নির্ধারণ সংক্রান্ত নথিসহ ডিসি সম্মেলনের যাবতীয় নথিপত্র ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে। এবারের ডিসি সম্মেলনে জেলা প্রশাসকদের প্রতি সর্বত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কঠোর মনোভাব প্রদর্শনের নির্দেশনাও থাকছে। একই সঙ্গে চলমান চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলার সক্ষমতা অর্জনে ডিসিদের প্রতি দিক নির্দেশনা থাকবে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলায় কোনও বিকল্প নেই বলেও মনে করেন সরকার সশ্লিষ্টরা।

বিভিন্ন কারণে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকারের শীর্ষ মহল। ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে এ অবস্থা চরম আকার ধারণ করেছে। দলীয় কোন্দলে সৃষ্ট অরাজকতা নিয়ে সরকারের শীর্ষ মহল খুবই বিব্রত। একই সঙ্গে এলাকার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন, বিশেষ করে টেন্ডার পাওয়া না পাওয়াকে কেন্দ্র করে দলীয় কোন্দল সরকারের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি রাস্তাঘাট, কালভার্ট বা সেতু নির্মাণসহ সরকারের সব ধরনের উন্নয়নমূলক কাজের মান নিয়েও নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিষয়গুলো সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছে। এখনই অনিয়ম না থামালে আগামী নির্বাচনে এসব উন্নয়ন বুমেরাং হতে পারে বলে ধারণা করছেন কেউ কেউ। এখন থেকেই এ বিষয়টি কঠোর হাতে দমন করতে হবে। কেননা, ইতোমধ্যেই কিছু ঘটনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এসব কারণেই ডিসিদেরকে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ, মাঠ পর্যায়ে ডিসিরাই হলেন সরকারের প্রতিনিধি।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১৪ থেকে ১৮ জুলাই জেলা প্রশাসক সম্মেলন হয়েছে। এরপর করোনা ভাইরাস  মহামারির কারণে গত দুই বছর (২০২০ ও ২০২১) জেলা প্রশাসক সম্মেলন হয়নি। সরকারের নীতিনির্ধারক ও জেলা প্রশাসকদের মাঝে সামনা-সামনি মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়ার জন্য সাধারণত প্রতিবছর জুলাই মাসে ডিসি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

এবারের ডিসি সম্মেলন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব ছাইফুল ইসলাম, রেজাউল ইসলাম ও শাফায়াত মাহবুব চৌধুরী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা শিকদার নসরত আলী, কম্পিউটার অপারেটর মাজহারুল ইসলাম ও সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর আসিফুল ইসলামকে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কয়েকজন জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, বর্তমানে অনেক বিষয় রয়েছে, যে বিষয়গুলো মাঠ পর্যায়ে আমাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বিব্রত করে। এগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের নীতিনির্ধারকদের জানানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে সরকারের কিছু পরিকল্পনা রয়েছে, যা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে ডিসিদের সহায়তা প্রয়োজন। আমাদের দিক থেকেও কিছু সুপারিশ রয়েছে। এগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। আমরা এসব আলোচ্য বিষয় প্রস্তুত করছি।

কেবিনেট ডিভিশন সূত্র জানিয়েছে, প্রচলিত রেওয়াজ অনুযায়ী, প্রতিবছর জুলাই মাসে মাঠ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের (বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক) এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু করোনার কারণে ২০২১ এবং ২০২০ সালের জুলাইয়ে এ সম্মেলন হয়নি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সম্মেলন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়েও তা স্থগিত করা হয়। তবে গত সেপ্টেম্বরে করোনা সংক্রমণের হার কমে যাওয়ায় গত নভেম্বরের দিকে ডিসি সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কিন্তু নভেম্বরের প্রথম দিকে তিন জেলার ডিসি করোনায় আক্রান্ত হলে সম্মেলন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এ ছাড়া নভেম্বর-ডিসেম্বরজুড়ে এসএসসি-এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা, একইসঙ্গে দেশব্যাপী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন জেলা প্রশাসকরা।

ইউনিয়ন পরিষদের চলমান নির্বাচনের পঞ্চম ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ৫ জানুয়ারি। আর ষষ্ঠ ধাপ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩১ জানুয়ারি। এই ফাঁকে ডিসি সম্মেলন করার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সম্মতি চাইলে  তিন দিনের জন্য এই সম্মেলন করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়া যায়।

সর্বশেষ গত ২০১৯ সালে ডিসি সম্মেলন হয়। সেবার সম্মেলন হয়েছিল পাঁচ দিন। সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশন হয়। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনা, রাষ্ট্রপতি, স্পিকার ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও একটি সমাপনী অনুষ্ঠান থাকে। কিন্তু এবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সম্মেলন হচ্ছে না,  এবার হবে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিসিদের দিক নির্দেশনা দেবেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর