রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১২:১৬ পূর্বাহ্ন

ঢাকা ওয়াসার এমডি ১৩ বছরে কত বেতন নিয়েছেন, জানতে চায় হাই কোর্ট

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ১০৩ বার
আপডেট : বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০২২

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান গত ১৩ বছর ধরে বেতন-ভাতা বাবদ কত টাকা নিয়েছেন, সেই হিসাব দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। সেই সাথে তাকসিম এ খানকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তাকে অপসারণে বিবাদীদের ‘নিষ্ক্রীয়তা’ কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডকে এই হিসাব দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক রিট আবেদনের শুনানিতে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেয়। আদালতে ক্যাবের রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।

যতদিন পর্যন্ত তাকে অপসারণ করা না হবে, ততদিন ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী তার বেতন নির্ধারণে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। স্থানীয় সরকার সচিব, ঢাকা ওয়াসা ও ওয়াসা বোর্ড এবং তাকসিম এ খানকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

জ্যোতির্ময় বড়ুয়া পরে সাংবাদিকদের বলেন, গত ১৩ বছর ওয়াসা বোর্ড বিভিন্ন রেজুলেশনের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা পরিচালককে কী বেতন-ভাতা এবং টিএ-ডিএসহ অন্যান্য যেসব সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব আগামী ৬০ দিনের মধ্যে হাই কোর্টে বিভাগে দাখিলের জন্য আবেদন করেছিলাম, আদালত অনুমোদন করেছেন।

রিটে বলা হয়, ২০০৯ সালের অক্টোবরে তাকসিম এ খান ওয়াসার এমডি হিসেবে ৩ বছরের জন্য চুক্তিতে নিয়োগ পান। তখন তার মোট বেতন ছিল মাসে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এর মধ্যে মূল বেতন ছিল ৬০ হাজার টাকা। এছাড়া বাড়ি ভাড়া হিসেবে ২০ হাজার টাকা, ৪ হাজার টাকা মেডিকেল ও বিনোদন ভাতা এবং ২২ হাজার টাকা বিশেষ ভাতা পেতেন তিনি। এছাড়া তার উৎসব ভাতা ছিল ১০ হাজার টাকা। তার সঙ্গে চুক্তিতে বলা ছিল, বেতনের ওপর প্রযোজ্য আয়কর তাকসিম এ খানকেই দিতে হবে।

এরপর ২০১০ সালে ওয়াসার এমডির বেতন ২ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ২০১৬ সালের ২৪ জানুয়ারি ওয়াসা বোর্ডের ২৩১তম সভায় এমডির বেতন নির্ধারণ করা হয় সাড়ে ৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ, এক লাফে এমডির বেতন বাড়ে আড়াই লাখ টাকা, যা কার্যকর হয় ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে।

পরে ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের ২৭২তম সভায় এমডির পারিশ্রমিকসহ সুযোগ-সুবিধা, বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সম্মানী পুনর্নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি করা হয়। সেই কমিটি দুই দফায় বৈঠক করে এমডির বেতন-ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব করে। গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের ২৭৬তম সভায় কমিটির প্রস্তাবের ভিত্তিতে এমডির বেতন-ভাতা নির্ধারণ করা হয় ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে তার মূল বেতন ২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা, বাড়িভাড়া ৩৫ হাজার, চিকিৎসা ও আপ্যায়ন ভাতা ৩৫ হাজার ৭৫০ টাকা, বিশেষ ভাতা ১ লাখ ৮০ হাজার ৬৬ টাকা এবং বাংলা নববর্ষ ভাতা ৪ হাজার ৭৬৭ টাকা। তার উৎসব ভাতা ঠিক হয় ৪৭ হাজার ৬৬৭ টাকা।

এ খবর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হলে বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বাতিল করতে গত ২০ মার্চ বিবাদীদের উকিল নোটিস দেয় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। নোটিসের জবাব না পাওয়ায় গত ৩১ জুলাই হাই কোর্টে রিট করা হয়।

ক্যাবের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, তার ব্যর্থতা সত্বেও, ঢাকা শহরের ওয়াসার কোনো রকমের উন্নয়ন করতে না পারার পরও ২০০৯ সালের পর থেকে একাধিকবার তাকে এমডি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাকে রিমুভ করার ক্ষেত্রে বোর্ডের যে নিস্ক্রীয়তা, সেটি চ্যালেঞ্জ করেছি। ১৩ বছর ধরে তাকসিম এ খানকে ‘বর্ধিত হারে’ বেতন দেওয়া হয়েছে এবং সেটি ‘আইনবিরুদ্ধ’ দাবি করে এই আইনজীবী বলেন, ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল এবং ২০১৬ সালের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সার্কুলারে বলা হয়েছে- চুক্তিভিত্তিক কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হলেও জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন-ভাতা নির্ধারণ করা হবে। এখানে দেখা গেছে, বোর্ড নিজস্ব রেজুলেশন নিয়েছে। পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন-১৯৯৬ সালের ২৮(৪) উপ-ধারা অনুযায়ী এমডির বেতন ও অন্যান্য ভাতা নির্ধারণ করার এখতিয়ার বোর্ডের আছে। কিন্তু সেটি কত হবে, কীভাবে হবে, তার কোনো গাইডলাইন বা বিধিমালা নেই। সেই ক্ষেত্রে সরকারের ২০১৬ সালের সার্কুলার এবং জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী তার বেতন-ভাতা নির্ধারণ হওয়ার কথা।

ওয়াসা বোর্ডের সবশেষ সিদ্ধান্তে এমডির ছয় লাখ ২৫ হাজার টাকা বেতন-ভাতার মধ্যে মূল বেতন দুই লাখ ৮৬ হাজার টাকা দেখানোর বিষয়টি তুলে ধরে জ্যোতির্ময় বলেন, অথচ ২০১৫ সালের জাতীয় স্কেলে প্রথম গ্রেডের চাকরির সর্বোচ্চ বেসিক বেতন ৭৮ হাজার টাকা।

ওয়াসা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হওয়ায় সেখানে কোনো বেসরকারি কোম্পানি বা ব্যাংকের মত বেতন নির্ধারণ করার সুযোগ সেই মন্তব্য করে এ আইনজীবী বলেন, এখানে কোনো কোম্পানির মত করে, অন্যান্য ব্যাংকের মত বিবেচনা করে বেতন নির্ধারণ করার কোনো আইনগত এখতিয়ার বোর্ডের ছিল না।

জ্যোতির্ময় বলেন, দেশের রাষ্ট্রপতির মূল বেতন যেখানে দেড় লাখ টাকা, সেখানে সংবিধিবদ্ধ সংস্থা ঢাকা ওয়াসার এমডির মূল বেতন প্রায় তিন লাখ টাকা। আদালতে উদাহরণ হিসেবে আমরা এটা বলেছি যে এটা আসলে অস্বাভাবিক এবং অবমাননাকর। এ রকম হওয়া উচিত না, চলতে দেওয়া উচিত না। যেহেতু একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, সেটাকে ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান ধরে নিয়ে যেভাবে লুণ্ঠন প্রক্রিয়া চালু রাখা হয়েছে, এটিই আমরা আদালতে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর