রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৪:২৫ পূর্বাহ্ন

ঢাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণে নতুন উদ্যোগ

ভয়েস বাংলা প্রতিবেদক / ৮ বার
আপডেট : রবিবার, ৫ মে, ২০২৪

রাজধানীর যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতেও আশানুরুপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এই যানজট সৃষ্টি হয় মূলত ঢাকার তিনটি পয়েন্ট থেকে। যেগুলোকে যানজটের ‘হার্ট পয়েন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। যানজটপ্রবণ এলাকাগুলো হলো- গুলশান, তেজগাঁও ও রমনা ট্রাফিক বিভাগ।
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের বিশ্লেষণ বলছে, এই এলাকাগুলোতে যানজট হলে এর প্রভাব অন্য ট্রাফিক জোন পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। এই তিন এলাকার যানজট নিরসনে একজন করে বাড়তি অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে পদায়ন করা হয়েছে। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ বলছে, অতিরিক্ত কর্মকর্তা নিয়োগের ফলে এসব এলাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা আরো উন্নত হবে। এর সুফল রাজধানীর অন্য সব এলাকাতেও পাওয়া যাবে।
বর্তমানে ঢাকা শহরে যানজট নিরসনে ট্রাফিকের ৮টি বিভাগ রয়েছে। বিভাগগুলো হলো- রমনা, লালবাগ, মতিঝিল, ওয়ারী, উত্তরা, গুলশান, মিরপুর ও তেজগাঁও। এই আট বিভাগে একজন করে উপ-কমিশনার (ডিসি), একজন করে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ও তিনজন করে সহকারী কমিশনার (এসি) পদমর্যাদার কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। শুধুমাত্র ট্রাফিক রমনা বিভাগে চার সহকারী কমিশনার (এসি) দায়িত্ব পালন করছেন।
জানা গেছে, সম্প্রতি ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের বিশ্লেষণে ঢাকা শহরের যানজটের হার্ট পয়েন্ট হিসেবে গুলশান, তেজগাঁও ও রমনা বিভাগকে চিহ্নিত করা হয়। পরে এই তিন এলাকার যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে বিভাগ প্রতি একজন করে বাড়তি এডিসি পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে পদায়ন করা হয়। আগে যেখানে একজন করে এডিসি দায়িত্ব পালন করতেন। এই তিন বিভাগে থাকা দুইজন করে এডিসিকে নির্দিষ্ট এলাকা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।
এই তিন বিভাগের গুরুত্ব বেশি যে কারণে
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর সব এলাকার মধ্যে বেশি যানজট প্রবণ এলাকা গুলশান, তেজগাঁও ও রমনা এলাকা। এসব এলাকায় যানজট সৃষ্টি হলে রাজধানীর অন্যসব এলাকাতেও যানজট ছড়িয়ে পড়ে। ফলে একজন করে এডিসি থাকাকালীন এসব এলাকার যানজট ব্যবস্থাপনার তদারকি সঠিকভাবে হচ্ছিল না। এতে গুলশান, রমনা ও বনানী এলাকার ট্রাফিক ব্যবস্থার তদারকি দুর্বল হয়ে পড়েছিল। সেই অবস্থার উন্নতির জন্য এই তিন বিভাগে একজন করে বাড়তি এডিসি দেওয়া হয়েছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান বলেন, বিভিন্ন এলাকার গুরুত্ব বুঝে ট্রাফিকের তিনটি বিভাগকে একজন করে বাড়তি অতিরিক্ত উপ- কমিশনার (এডিসি) পদমর্যাদার কর্মকর্তা দেওয়া হয়েছে। এই তিন বিভাগে ট্রাফিক ব্যবস্থা সুশৃঙ্খল থাকলে, এর প্রভাব সারা ঢাকায় পড়বে। এতে ঢাকার অন্যান্য এলাকাতেও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ আনতে সহজ হবে। তিনি বলেন, এই তিন বিভাগে একজন করে অতিরিক্ত এডিসি দেওয়ার ফলে কি ধরনের আউটপুট আসে সেটা আমরা বিবেচনা করবো। ভালো আউটপুট এলে বাকি পাঁচটি বিভাগেও একজন করে অতিরিক্ত এডিসি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
যে কারণে গুরুত্ব গুলশানের
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ট্রাফিক গুলশান বিভাগে মোট জোন রয়েছে ৮টি। ৮টি জোন হলো গুলশান, মহাখালী, ক্যান্টনমেন্ট, বনানী, বাড্ডা, ভাটারা, বসুন্ধরা ও খিলক্ষেত। এই আট এলাকার কোনো এলাকায় যানজট সৃষ্টি হলে তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। এছাড়া মহাখালীতে রয়েছে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল। এই বাস টার্মিনালের কারণে মহাখালীসহ আশপাশের এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। মহাখালীতে সৃষ্ট যানজট একদিকে দিয়ে যেমন উত্তরা পর্যন্ত পৌঁছায়, অন্যদিকে সাতরাস্তা হয়ে পল্টন পর্যন্ত পৌঁছায়। এছাড়া মহাখালীর যানজট জাহাঙ্গীর গেইট হয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত পৌঁছায়। আর বাড্ডা কিংবা প্রগতি সরণি যানজট সৃষ্টি হলে তা রামপুরা হয়ে পৌঁছে যায় শান্তিনগর পর্যন্ত।
আরো জানা গেছে, গুলশান বিভাগের অধীনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশন ও দূতাবাস অবস্থিত। ফলে এসব এলাকায় দীর্ঘক্ষণ যানজট থাকলে বিদেশিদের সামনে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। এসব বিষয় বিবেচনা করে গুলশান বিভাগকে ঢাকার যানজটের হার্ট পয়েন্ট হিসেবে বিবেচনা করে বাড়তি একজন এডিসি দেওয়া হয়েছে।
ডিএমপির ট্রাফিকের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আব্দুল মোমেন বলেন, গত ২৩ এপ্রিল নতুন একজন এডিসিকে গুলশান ট্রাফিক বিভাগে দেওয়া হয়েছে। এরপর গুলশান বিভাগের ট্রাফিক ব্যবস্থাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। গুলশান উত্তরে একজন এডিসি দায়িত্ব পালন করবেন আর গুলশান দক্ষিণে আরেকজন এডিসি দায়িত্ব পালন করবেন। নতুন সিনিয়র অফিসার দেওয়ার ফলে বিভাগে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার মনিটরিং আরো বৃদ্ধি পাবে। যানজট নিয়ন্ত্রণে আনতে মনিটরিং আরো বৃদ্ধি পাবে।
নানা কারণে রমনা ও তেজগাঁও’র আলাদা গুরুত্ব
ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার মধ্যে বেশি ভিআইপি মুভমেন্ট রমনা ও তেজগাঁও বিভাগে। এসব এলাকায় অনেক সময় দীর্ঘক্ষণ যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যানবাহন এই দুই বিভাগ দিয়ে বেশি চলাচল করে। এতে অনেক সময় এসব এলাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে বাড়তি লোকবলের প্রয়োজন হয়। সেই বাড়তি লোকবলের চাহিদা মেটাতে এই দুই এলাকায় একজন করে বাড়তি এডিসিকে পদায়ন করা হয়েছে।
ডিএমপির ট্রাফিকের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) জয়নুল আবেদীন বলেন, বাড়তি একজন এডিসি পাওয়ার পর একজনকে দেওয়া হয়েছে নিউমার্কেট ও ধানমন্ডি জোনে, আরকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শাহবাগ ও রমনা জোনের দায়িত্ব। নতুন একজন করে এডিসি দেওয়ার ফলে অবশ্যই ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নতি হবে এবং রাস্তায় তদারকি বাড়বে। একজন এডিসির পক্ষে এক সময়ে ৪টি জোনের ট্রাফিক ব্যবস্থার তদারকি করাটা কঠিন। এখন দুজন এডিসি হওয়ায় দুটি জোনের জন্য একজন এডিসি। এতে তদারকি বাড়বে এবং ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতি হবে। এছাড়া ট্রাফিক রমনা বিভাগে প্রায় নিয়মিত ভিআইপি মুভমেন্ট থাকে, ফলে আরো একজন সিনিয়র অফিসার আসায় ট্রাফিক মনিটরিং বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া রাস্তার ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ, মামলাসহ সব বিষয়ে পর্যবেক্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
জানা যায়, তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগকে তেজগাঁও ও মোহাম্মদপুরে ভাগ করা হয়েছে দুই ভাগে। তেজগাঁওয়ের দায়িত্বে যেই এডিসি রয়েছেন তিনি তেজগাঁও, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও হাতিরঝিল জোনের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে পালন করবেন। অন্যদিকে মোহাম্মদপুরের দায়িত্বে যে এডিসি রয়েছেন তিনি শেরেবাংলানগর, মোহাম্মদপুর ও আদাবর জোনের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে পালন করবেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর